Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নিমেষে ভয়াল আগুন গিলে নিল সন্তান আর মাকে

আগুন টপকে এগোনোর তোড়জোড় করছিলেন দমকলকর্মী সবুজ খান। কিন্তু নিমেষে আগুন গ্রাস করে নিল মাকে। সন্তান কোলে নিয়ে ঢলে পড়লেন তবসসুম।

পুড়ে যাওয়া বহুতল থেকে বার করে কফিনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেহ। বৃহস্পতিবার ঢাকায়। ছবি: এপি

পুড়ে যাওয়া বহুতল থেকে বার করে কফিনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেহ। বৃহস্পতিবার ঢাকায়। ছবি: এপি

বাপি রায়চৌধুরী
ঢাকা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৭
Share: Save:

আগুন দেখে রাজমহল হোটেলের ওপর থেকে চার বছরের ছোট্ট ফতেমাকে বুকে জড়িয়ে হুটোপাটি করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসেছিলেন কিশোরী মা আনিকা তবসসুম। দুয়ার জুড়ে দাউদাউ আগুন। লকলকে সেই শিখা সিঁড়ি দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। তার মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রাণপণে চিৎকার করছেন মা— ‘বাঁচাও, বাঁচাও!’ আগুনের প্রাচীরের ও ধারে অনেক মানুষ। কিন্তু কেউই এগোতে পারছেন না। আগুন টপকে এগোনোর তোড়জোড় করছিলেন দমকলকর্মী সবুজ খান। কিন্তু নিমেষে আগুন গ্রাস করে নিল মাকে। সন্তান কোলে নিয়ে ঢলে পড়লেন তবসসুম।

বুক চাপড়ে কেঁদেই চলেছেন ওই দমকলকর্মী। কপালে হাত ঠুকে বলছেন, ‘‘আর একটু... আর একটু সময় পেলে কাছে পৌঁছে যেতে পারতাম। এ ভাবে চোখের সামনে জ্বলে মরতে হত না মা আর শিশুকে।’’

গলির পরে তস্য গলি। মোড়ের মাথায় শয়ে শয়ে লোকের ভিড় ঠেলে পৌঁছনো গেল ‘ওয়াহিদ ম্যানসন’-এর সামনে। দমকল বাহিনী তখনও ভেতরে আগুন নেভাচ্ছেন। রাস্তার ওপর পড়ে হাজার হাজার ছোট ছোট পারফিউমের সিলিন্ডার। সে সব মাড়িয়ে কিছু মেয়ে পুরুষ কান্নাকাটি করতে করতে খুঁজে চলেছেন প্রিয়জনেদের। অনেকের হাতে ছবি। দমকলকর্মী আর পুলিশের পায়ে ধরছেন। পুলিশ তাঁদের তুলে পরামর্শ দিচ্ছে, ‘‘হাসপাতালে যাও, সেখানে খুঁজে দ্যাখো!’’ কেউ শুনছেন, কেউ নয়। কেঁদেই বুক ভাসাচ্ছেন তাঁরা।

ভবনের নীচে একটি পোড়া রেস্তরাঁয় ঢুকে দেখা গেল, চেয়ার-টেবিল সব সাজানো। কিন্তু সমস্ত পুড়ে আংরা। এলপিজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দেওয়ালের পলেস্তারাও উঠে গিয়েছে। সেই পোড়া চেয়ারে শূন্য দৃষ্টিতে বসে প্রৌঢ় আব্দুস সালাম আজাদ। হাতে একটা ছবি। বললেন, রাত দশটাতেও ফোনে কথা হয়েছে ভাই বিলালের সঙ্গে। ভাই বলেন— কাজ প্রায় শেষ, এ বার বেরোবেন। এখানে একটা কারখানার কারিগর ছিলেন বিলাল। তার পরে টিভিতে আগুনের খবর দেখে আধ ঘণ্টা পরে ফের ফোন করেন। সেই ফোন আর বাজেনি। কারখানা থেকে যে ছ’টি দগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়েছে, তার কোনওটি দেখেই কাউকে চেনা য়ায়নি। আজাদ বলেন, ‘‘আল্লা ভরসা! হয়তো সে বেরোতে পেরেছে। তা হলে বাড়িতে যোগাযোগ করছে না কেন?’’

চুড়িহাট্টার মদিনা ডেকরেটর্সে সামিয়ানার কাপড় সেলাইয়ের কাজ করতেন ভাই দিলওয়ার। ছাই হয়ে যাওয়া সেই দোকানে ঢুকে সব হাতড়াচ্ছিলেন বছর ৪০-এর সায়রা বিবি। হঠাৎ চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন। ভাইয়ের সেলাই মেশিনটা খুঁজে পেয়েছেন, শুধু ভাই-ই নেই।

এর মধ্যেই হঠাৎ শোরগোল। কাঠের কফিনে বার করে আনা হচ্ছে কারও দেহ। অনেকে ছুটে যাচ্ছেন দেখতে। পুলিশকর্মীরা বোঝাচ্ছেন— ‘‘কফিন খোলা যাবে না। চেনার মতো অবস্থায় নেই। আপনারা অপেক্ষা করুন। মেডিক্যাল কলেজে যান। সেখানে মর্গে দেখানো হবে বডি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Accident Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE