Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Bangladesh

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনে ২৬ জনের ফাঁসির আদেশ

বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের বহু আলোচিত সাত জন খুনের দুই মামলায় প্রধান আসামি নূর হোসেন এবং র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা-সহ মোট ২৬ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড দিল আদালত। সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন এই রায় ঘোষণা করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ ২০:৫৪
Share: Save:

বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের বহু আলোচিত সাত জন খুনের দুই মামলায় প্রধান আসামি নূর হোসেন এবং র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা-সহ মোট ২৬ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড দিল আদালত। সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন এই রায় ঘোষণা করেন। এই মামলার বাকি নয় আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

প্রায় তিন বছর আগের ঘটনা এটি। ২০১৪-র ২৭ এপ্রিল দুপুর দেড়টা নাগাদ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, প্রবীণ আইনজীবী চন্দন সরকার-সহ সাত জন। তিন দিন পর, ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছ’টি মৃতদেহ, পরের দিন মেলে আর একটি দেহ। নজরুল ইসলাম ও চন্দন সরকার ছাড়া খুন হন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গির আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মহম্মদ ইব্রাহিম। এই সাত জনকে নৃশংস ভাবে হত্যার ঘটনা আলোড়ন তুলে ছিল সারা দেশে।

সেই হত্যাকাণ্ডের পর উত্তেজিত জনতা সন্দেহভাজন কয়েক জনের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। ঘটনার এক দিন পরে কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে আওয়ামি লিগের স্থানীয় নেতা (পরে বহিষ্কৃত) নূর হোসেন-সহ ছ’জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিমকে হত্যার ঘটনায় ১১ মে একই থানায় আর একটি মামলা হয়। এই মামলার বাদী চন্দন সরকারের জামাই বিজয়কুমার পাল। হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত আর এক কাউন্সিলর নুর হোসেন পালিয়ে গেলেও পরে ভারতে ধরা পড়েন। এর পর তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

আরও পড়ুন...
লজ্জার রেকর্ড গড়ে হারল বাংলাদেশ

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া দুই মামলায় ২০১৬-র জানুয়ারিতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। কয়েক দফা শুনানির পর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এ বছরের ১৬ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। নির্ধারিত দিনেই আদালত নূর হোসেন ও র‌্যাবের চাকুরিচ্যুত তিন কর্মকর্তা-সহ ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।

হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট

২০১৪-র ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলায় হাজিরা দিতে যান নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম। গাড়িতে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডের খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়াম এলাকা থেকে নজরুল-সহ অপহৃত হন পাঁচ জন। প্রায় একই সময়ে অপহৃত হন অন্য এক গাড়িতে থাকা আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক। এই ঘটনার পর দিন নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন-সহ ছ’জনকে অভিযুক্ত করে ফতুল্লা থানায় অপহরণের মামলা করেন। যেটি পরে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

অপহরণের তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল বিকেলে বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া শান্তির নগর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় নজরুল, তাঁর বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, গাড়িচালক জাহাঙ্গির আলম, আইনজীবী চন্দন ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিমের হাত-পা বাঁধা দেহ উদ্ধার করা হয়। এর পর দিন একই জায়গায় মেলে নজরুলের আর এক বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটনের দেহ। উদ্ধার করা সব ক’টি দেহের পেটে ছিল আঘাতের চিহ্ন। এর পর উত্তেজিত জনতা ১ মে সকালে কাউন্সিলর নূর হোসেনের কার্যালয় এবং রাতে স্থানীয় আওয়ামি লিগ নেতা হাজি মহম্মদ ইয়াসিনের বাড়ি ভাঙচুর ও কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ৪ মে নজরুলের শ্বশুর অভিযোগ করেন, র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা লেফ্টেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, লেফ্টেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানা এবং মেজর আরিফ হোসেন ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে ওই সাত জনকে অপহরণের পর খুন করেন।

আরও পড়ুন...
ছেলে খুন হলেও চোখে জল নেই, নাতিকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় মারজানের মা

১১ মে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, সদস্য মাহবুবুর রহমান ইসমাইল ও চন্দনবাবুর জামাই বিজয়কুমার পালের রিট আবেদনে হাইকোর্ট তিন র‌্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়। ১৫ মে রাতে মিলিটারি পুলিশের সহায়তায় ঢাকা সেনানিবাসের বাসভবন থেকে তারেক সাঈদ ও মেজর আরিফ হোসেনকে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ। এর পর দিন রাতে নৌবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা এম এম রানাকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশের কাছে তুলে দেন। এই তিন কর্মকর্তাকেই বাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়।

সাত খুন মামলার প্রধান অভিযুক্ত পলাতক কাউন্সিলর নুর হোসেনকে ওই বছরের ১৪ জুন গভীর রাতে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর সংলগ্ন বাগুইআটি থানার পুলিশ আটক করে। পরে ২০১৫-র ১৩ নভেম্বর বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তাঁকে বাংলাদেশের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর তাঁকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাঁকে জেল হাজতে পাঠান।

আরও পড়ুন...
টিনের কৌটোয় বাংলাদেশের খাদ্য যাচ্ছে চিন, তাইওয়ান, ভিয়েতনামে

চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৫ জনকে আসামি করে ২০১৬-র ৮ ফেব্রুয়ারি চার্জ গঠন করে পুলিশ। তাদের মধ্যে ২৫ জনই র‌্যাবের সদস্য। এদের সবাইকেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে বাংলাদশের নিরাপত্তা সংস্থাটি। এই ৩৫ জন আসামীর মধ্যে গ্রেফতারর হন ২৩ জন। বাকি ১২ জন পলাতক। গ্রেফতার হওয়া আসামিদের মধ্যে ২১ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলায় ১২৭ জনকে সাক্ষী করা হয়। তবে আদালত সাক্ষ্য নেয় ১০৬ জনের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh Narayanganj killings death penalty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE