Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

হাসিনার অভিযান নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ১৯ মে পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী মাদক-বিরোধী অভিযান শুরু করার পরে এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষ মারা পড়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৮ ০১:৫৪
Share: Save:

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার মাদক-বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে এ বার সরকারের ভিতর থেকেই সমালোচনা উঠল। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘এই অভিযানের অনেক কিছুই স্বচ্ছ নয়। মাদক ব্যবসার মাথাদের কেউই ধরা পড়ছে না। তাদের গ্রেফতার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে না-পারলে অভিযান কতটা সফল হবে, সন্দেহ রয়েছে।’’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ১৯ মে পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী মাদক-বিরোধী অভিযান শুরু করার পরে এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষ মারা পড়েছেন। পুলিশের অভিযোগ, এরা সকলেই তালিকাভুক্ত মাদক চোরাচালানদার। সব ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে, হয় তাঁরা নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে গুলি খেয়েছেন, অথবা পুলিশকে আক্রমণ করার পরে পাল্টা গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুলি করে মারা হয়েছে।

রাশেদ খান মেনন আওয়ামি লিগের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি। কিন্তু সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। এ দিন এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও দুনিয়ার কোথাও গুলি করে মেরে মাদক সমস্যার সমাধান হয়নি। এটা সামাজিক সমস্যা। দেশে মাদক প্রবেশ রোখার বিষয়টি কী ভাবে আটকানো হচ্ছে, সেটিও স্পষ্ট নয়।’’ মন্ত্রী মেনন যখন এই সমালোচনা করেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াঁ ও আওয়ামি লিগের কয়েক জন নেতাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

বুধবারই হাসিনা ঘোষণা করেছেন, মাদক-বিরোধী অভিযান চলবে। সমালোচকদের এক হাত নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তা হলে কি অভিযান বন্ধ করে দেব?’’ হাসিনার কথায়, ‘‘অভিযানে ১০ হাজার দুষ্কৃতী গ্রেফতার হয়েছে। সেটা কেউ বলছে না। এ ধরনের বড়সড় অভিযানে কিছু ঘটনা ঘটতেই পারে। সেটাকে বড় করে দেখানো ঠিক নয়।’’ মাদক চোরাচালানের মাথাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।

এই অভিযানের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন না উঠলেও, যে ভাবে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেসরকারি নজরদার সংস্থা টিআইবি (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) এ দিন অভিযানে ব্যাপক প্রাণহানির সমালোচনা করে বলেছে, বিচার পাওয়াটা সব মানুষের মৌলিক অধিকার। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই যে ভাবে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে গোয়েন্দাদের ‘তালিকাভুক্ত মাদক চালানিরা’ নিহত হচ্ছেন, তা অসাংবিধানিক। টিআইবি-র অভিযোগ, মাদক চোরাচালানের রুই-কাতলাদের গায়ে হাত পড়ছে না। তাদের ধরে আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার নিশ্চিত করতে পারলে তবেই এই অভিযান সফল হতে পারে।

পরিচিত সাংবাদিক ও কবি মাসুদা ভাট্টিও এ দিন মাদক-বিরোধী অভিযানের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘‘সরকারের ভাবমূর্তি ভাল হবে ভেবেই হয়তো এই অভিযান। কিন্তু এমন অভিযানের পরে সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে পড়ে।’’ ভাট্টি বলেন, ‘‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়ে মধ্যমণি হয়ে থাকেন। কোনও রাষ্ট্রপ্রধান তাঁকে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কী জবাব দেবেন? আমরাও জাতি হিসেবে লজ্জায় পড়ে যাব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE