Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Bangladesh news

১৭ বছরের সাজা মাথায় ভোটের দৌড়ে ঠাঁই নাই খালেদার

শনিবার সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ করে দিল।

খালেদা জিয়া। —ফাইল চিত্র।

খালেদা জিয়া। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ২২:৩৯
Share: Save:

আলোচনা ছিল টানা ক’দিন ধরেই, তবে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি অনেকটাই নিশ্চিত ছিল এ বারে ভোটের মাঠে দৌড়োনোর জার্সি জুটবে না দুর্নীতির মামলায় জেলে থাকা তাদের দলীয় প্রধানের। সেই কারনে খালেদার দাঁড়াতে চাওয়া তিন আসনেই রাখা হয়েছিল বিকল্প প্রার্থী। খালেদা অংশ নিতে না পারাতে, এখন সেই প্রার্থীরাই রইলেন খালেদার বদলে খালেদার তিন আসনের ভোটের মাঠে। ১৭ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নের দৌড়ে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র বাতিল করলেও তার বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন খালেদা।

শনিবার সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ করে দিল। এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের এগারোতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আর কোনও সুযোগ থাকল না খালেদার।

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ভবনে দেশটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে আপিল কর্তৃপক্ষ খালেদার আবেদনের শুনানি নেন। দুপুরে শুনানিতে খালেদার পক্ষে ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মহম্মদ আলি। শুনানি শেষে ইসি খালেদার বিষয়ে সিদ্ধান্ত বিকালে দেবে বলে জানায়।

আরও পড়ুন: মনোনয়ন না পেয়ে ঢাকার গুলশনে খালেদার অফিসে হামলা, ভাঙচুর

এর পর সন্ধ্যায় ইসি সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন, খালেদা জিয়ার আবেদনের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে। নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ঘোষণা করেন, ‘সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত ও খালেদা জিয়ার দণ্ড বহাল থাকায় আপিল আবেদন আমি নামঞ্জুর করলাম।’

শনিবার দুপুরের আগেই খালেদা জিয়ার তিনটি আপিল একই সঙ্গে শুনানি হয়। পরে কমিশন বিকাল ৫টায় আবার শুনানি হবে উল্লেখ করে আপিল শুনানি স্থগিত রাখা হয়েছিল। শুনানির শেষে একজন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘‘রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক যথাক্রমে ফেনী-১, বগুড়া ৭ ও ৮ আসনে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে যে আপিল দায়ের করা হয়েছে, তা আইনগত বিশ্লেষণ করে আমার রায় এই আপিল মঞ্জুরের পক্ষে। আমি এই আপিল মঞ্জুর করলাম।’’

আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জে প্রার্থী হাসিনা

এই মতামত শুনে বিএনপির আইনজীবীরা উল্লসিত হয়ে উঠলে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘আপনারা ঠান্ডা হয়ে বসুন। এই রায় পূর্ণাঙ্গ নয়, এটি মাত্র একজনের রায়।’’ সেই সময়ে কমিশনার রফিকুল ইসলাম তাঁর রায় ঘোষণা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘‘সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দণ্ডপ্রাপ্তরা নির্বাচন করতে পারেন না। এ কারণে খালেদা জিয়ার আপিল নামঞ্জুর করা হলো।’’ আরেক কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরীও একই রায় দেন। কমিশনার কবিতা খানমও এই দুই কমিশনারের পক্ষে সহমত হয়ে বলেছেন, ‘‘খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আছেন। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে নৈতিক স্খলনজনিত কারণে দণ্ডিত হয়ে তিনি এখন কারাগারে। তাঁর দণ্ড স্থগিত হয়নি। মনোনয়নপত্র বাতিল করে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসাররা যে আদেশ দিয়েছেন, তাঁর স্পিরিট বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী আপিল নামঞ্জুর করা হলো।’’

সব শেষে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা তাঁর মতামতে জানান, ‘‘আমি আমার কমিশনার রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন ও কবিতা খানম-এই তিনজনের পক্ষে রায় দিলাম। এই আপিল আবেদন মঞ্জুর হয়নি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘৪-১ ভোটে এই আপিল নামঞ্জুর হলো।’’

বাংলাদেশের এগারোতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে বিএনপি চেয়ারপার্সন কারাবন্দি খালেদা জিয়া মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন— ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ নির্বাচনী আসনে।

বাংলাদেশের হাইকোর্টের একটি আদেশে রয়েছে, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপিলে ওই দণ্ড বাতিল বা স্থগিত হয়। সেই আদেশের ফলেই খালেদা শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকতে পারলেন না মোট ১৭ বছরের দণ্ড কাঁধে নিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh general election 2018 Khaleda Zia BNP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE