—ফাইল চিত্র।
মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া এলাকা থেকে প্রায় এক লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সরিয়ে সম্পূর্ণ এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশ সরকারের। আগামী কাল, ৩ অক্টোবর নবনির্মিত সেই শিবির উদ্বোধন করার কথা ছিল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কিন্তু গত কালই সরকারি এক আধিকারিক জানান, এখনই ওই নতুন দ্বীপে সরানো হচ্ছে না শরণার্থীদের। নিজেদেরই সিদ্ধান্ত থেকে কেন হঠাৎ পিছিয়ে এল বাংলাদেশ সরকার, তা স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশ সেনার মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলমগীর কবীর অবশ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই ওই শিবির উদ্বোধনের নতুন দিন ঘোষণা করা হবে।
ভাসান চর। বিতর্কিত এই দ্বীপেই মায়ানমার থেকে আসা প্রায় এক লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে ঢাকার। যা নিয়ে আপত্তি রয়েছে রোহিঙ্গা নেতা থেকে শুরু করে পরিবেশবিদ এমনকি সমাজকর্মীদেরও। মূল ভূখণ্ড থেকে নৌকো বা ভুটভুটি করে প্রায় এক ঘণ্টা সমুদ্র পথ পেরোলে পৌঁছনো যায় ভাসান চর। ঝড়-বৃষ্টির মরসুমে ওই সমুদ্র পথ পেরোনো বেশ কষ্টকর বিষয়। এমন এক জায়গায় তাঁদের সরানো হচ্ছে শুনে প্রথম থেকেই আপত্তি তুলেছিলেন রোহিঙ্গারা। তাঁদের নেতা আব্দুল গফ্ফর যেমন বললেন, ‘‘এত দূরে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আচমকা কারও শরীর খারাপ হলে, কোনও জরুরি অবস্থা হলে তখন কী করব? একটা ঘূর্ণিঝড় এলেই তো সব শুদ্ধ উড়ে যাব।’’ সমাজকর্মীরাও বলে আসছেন, গত ৫০ বছরে ভাসান চরের আশপাশের উপকূলবর্তী এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ফলে এমন জায়াগায় এত জন শরণার্থীকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়াটা ঝুঁকির। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের তরফে প্রত্যেককেই আশ্বস্ত করা হচ্ছে। সরকারের দাবি, নতুন দ্বীপে প্রায় ন’ফুট উঁচু বাঁধ দেওয়া হয়েছে। যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে দ্বীপে বসবাসকারী মানুষদের কোনও ক্ষতি না হয়।
২০০৬ সালে হঠাৎ জেগে উঠেছিল এই নতুন দ্বীপ। কাদা-মাটিতে ভর্তি সেই দ্বীপ সংস্কার করে ধীরে ধীরে তা বসবাসের যোগ্য করে তুলেছে বাংলাদেশ সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। আপাতত মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া যে এলাকায় রোহিঙ্গারা রয়েছেন, সেখানে দিন দিন ভিড় আর দূষণ এতটাই বাড়ছে যে ওই জায়গায় সবাইকে একসঙ্গে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এ বার স্থানীয় বাসিন্দাদের দিয়ে রোহিঙ্গাদের বোঝানোর কাজে নেমেছে প্রশাসন। বাংলাদেশ রিফিউজি কমিশনার মহম্মদ আব্দুল কালাম বললেন, ‘‘প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বোঝানো হচ্ছে। ওখানে থাকলে তাঁদের অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।’’
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আজ আবার মুখ খুলেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেজ। তাঁর বক্তব্য, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হিংসায় যারা অভিযুক্ত, তাদের অবিলম্বে শাস্তি হওয়া উচিত। সেই সঙ্গেই এই সমস্যা সমাধানে ভারতের সদর্থক ভূমিকা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশকে মানবিক দিক দিয়ে সাহায্য করতে পারে ভারত। মায়ানমারের সঙ্গে নয়াদিল্লির সুসম্পর্ককেও এ ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy