Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coca-Cola

বাংলা হৃদয় জিততে নয়া মন্ত্র কোকের

কোকাকোলা বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মোয়াচ্ছের আহমেদ বললেন, ‘‘বাংলাদেশ এবং বাংলা ভাষার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সম্মান জানাতেই আমাদের এই উদ্যোগ। গত তিন বছর ধারাবাহিক ভাবে ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’’

কোকাকোলার সেই বিজ্ঞাপন।

কোকাকোলার সেই বিজ্ঞাপন।

অঞ্জন রায়
ঢাকা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৯:১৮
Share: Save:

দৈনন্দিন ক্ষেত্রে আর তেমন ভাবে ব্যবহৃত হয় না। ফলে, বাংলা শব্দ ভাণ্ডারের অনেকগুলোই আজ প্রায় হারিয়ে গিয়েছে। নতুন প্রজন্মের নাগালের বাইরে থাকা সেই সব শব্দের বেশ কয়েকটি ফের হাজির হল বাজারে। সৌজন্যে, কোকাকোলা।

বাংলাদেশে কোকাকোলা তাদের বোতলের লেবেলে ওই শব্দগুলি নতুন ভঙ্গিমায় ব্যবহার করেছে। সঙ্গে লেখা হয়েছে তাদের অর্থও। নরম পানীয় প্রস্তুতকারক ওই বহুজাতিক সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, মোট ২১টি শব্দকে তাদের পণ্যের লেবেলে অর্থ-সহ লেখা হয়েছে। বাংলা ভাষার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান জানাতেই এই উদ্যোগ।

ফেব্রুয়ারি আসলে এ দেশে ভাষার মাস। এর আগেও ভাষাদিবস উপলক্ষে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে কোকাকোলা। কখনও সরাসরি ভাষা, কখনও বা বাংলায় স্বজনের সঙ্গে ভাষার সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেছে করেছে তারা। এ বার তারা বেছে নিয়েছে বাংলা ভাষায় কম ব্যবহৃত ২১টি শব্দকে। বাঙালিকে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পুনঃপরিচয় করিয়ে দিতে তারা কোকাকোলার লেবেলে ওই শব্দগুলি ব্যবহার করেছে। কোকাকোলা বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মোয়াচ্ছের আহমেদ বললেন, ‘‘বাংলাদেশ এবং বাংলা ভাষার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সম্মান জানাতেই আমাদের এই উদ্যোগ। গত তিন বছর ধারাবাহিক ভাবে ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’’

কোকাকোলার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘‘বাংলা ভাষার সৃজনশীল প্রয়োগে বহুজাতিক সংস্থাগুলির এগিয়ে আসার বিষয়টি খুবই ভাল। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এতে আরও অনেক শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে জানবে। ইন্টারনেটের এই দাপুটে সময়ে এমন পদক্ষেপ অবশ্যই সময়পোযোগী।’’

কোকাকোলার লেবেলে বাংলায় লেখা বিজ্ঞাপন।

ওই একুশের মধ্যে রয়েছে অবিমিশ্র, প্রত্যুৎপন্নমতি, বিপ্রতীপ, পয়মন্ত, বহুব্রীহি, কেউকেটা, কেতাদুরস্তের মতো শব্দ। এ বিষয়ে একটি ওয়েবসাইটও খোলা হয়েছে। সেখানে এমন আরও হারিয়ে যাওয়া বাংলা শব্দের সন্ধান দিতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেখানে ৫ হাজারের বেশি শব্দ জমা পড়েছে বলে কোকাকোলার দাবি। তবে, কোকাকোলার লেবেলে কয়েকটি শব্দের ভুল বানান ও অর্থ লেখা হয়েছে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।

তবে যাদের কথা ভেবে কোকাকোলা এমন উদ্যোগ নিয়েছে, সেই নয়া প্রজন্ম কিন্তু খুশি। সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া আহসানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সে বলে, ‘‘এই শব্দগুলো তো বইয়ের পাতায় বেশি পাই না। কোকের বোতলে দেখে তাই ভাল লাগছে।’’ অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া জয়িতারও একই মত। তার কথায়, ‘‘কোকের ২১টা বোতলই সংগ্রহে রাখতে চাই।’’

এই উদ্যোগে খুশি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও। ঢাকার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম মণির কথায়, ‘‘আমরা বাবা-মায়ের মুখে এ সব শব্দগুলো শুনেছি। কিন্তু, আমরা আর তেমন ভাবে এগুলো ব্যবহার করি না। আমার সন্তানরা অনেক নতুন শব্দ ও তার অর্থ জানতে পারবে।’’

আরও পড়ুন: অর্থ পাচারে দোষী খালেদা, পাঁচ বছরের জেল

খুশি সদ্য শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরিতে যোগ দেওয়া মাহাবুব মাশরিফও। তিনি বললেন, ‘‘বাংলা শব্দের যে বিশাল ভাণ্ডার, আমরা অনেকেই তার খোঁজ রাখি না। একটি বহুজাতিক কোম্পানি সেই দায়িত্ব নিয়েছে, তাদের অভিনন্দন।’’

বিজ্ঞাপন নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের মতে এমন উদ্যোগ নতুন কিছু নয়। এর আগে বিভিন্ন সংস্থা আঞ্চলিক ভাষার উপর জোর দিয়েছে। তাতে পণ্যের বিক্রিও বেড়েছে। তবে, এ ধরনের ক্ষেত্রে বানান এবং অর্থ যাতে সঠিকটাই ব্যবহার করা হয়, সে দিকে খেয়াল রাখা উচিত বলেও তাঁদের মত।

নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE