Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

খালেদার সেলে টিভি-এসি, বাইরে এরশাদের কুলগাছ

শহরের বাইরে কেরানিগঞ্জে আধুনিক সংশোধনাগার গড়ে হাজার দু’য়েক বন্দিকে সেখানে স্থানান্তর করা হলেও কারা মন্ত্রকের কিছু প্রশাসনিক কাজ এখনও ব্রিটিশ আমলে তৈরি পুরনো জেলটিতে হয়। তবে নিঝুম এই পুরনো কারাগারেই বৃহস্পতিবার রাখা হয় দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড পাওয়া দ্বিতীয় রাষ্ট্রপ্রধান খালেদা জিয়াকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:১৪
Share: Save:

দুর্নীতির দায়ে ২৮ বছর আগে বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মহম্মদ এরশাদকে জেলে যেতে হয়েছিল খালেদা জিয়ার আমলে। ঢাকার নিজামউদ্দিন রোডে সেই পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার এখন বন্দিশূন্য। শহরের বাইরে কেরানিগঞ্জে আধুনিক সংশোধনাগার গড়ে হাজার দু’য়েক বন্দিকে সেখানে স্থানান্তর করা হলেও কারা মন্ত্রকের কিছু প্রশাসনিক কাজ এখনও ব্রিটিশ আমলে তৈরি পুরনো জেলটিতে হয়। তবে নিঝুম এই পুরনো কারাগারেই বৃহস্পতিবার রাখা হয় দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড পাওয়া দ্বিতীয় রাষ্ট্রপ্রধান খালেদা জিয়াকে।

এরশাদের দল জাতীয় পার্টি এই ঘটনাকে ‘ইতিহাসের প্রতিশোধ’ হিসেবে দেখছে। দলের সাংসদ ইয়াহইয়া চৌধুরী বলেন— ‘‘এরশাদ জেলে একটি কুলগাছ পুঁতেছিলেন, এত দিনে তাতে নিশ্চয়ই কুল হচ্ছে। জেল কর্তৃপক্ষকে বলব, কারাবিধানে আপত্তি না থাকলে সেই কুল যেন তাঁরা খালেদাকে খেতে দেন!’’

বৃহস্পতিবার রায়ের পরে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদাকে রাখা হয়েছে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের যে ঘরে, সে’টি আগে জেল সুপারের অফিস ছিল। অশক্ত বিএনপি নেত্রীর জন্য সেই ঘরে এসি বসেছে। ডিশ অ্যান্টেনা লাগানো টেলিভিশন আনা হয়েছে। নতুন আরামদায়ক বিছানারও বন্দোবস্ত করে হয়েছে। পাশে একটি রান্নাঘর ও আধুনিক শৌচাগারও তৈরি করা হয়েছে। খালেদার আইনজীবীর আবেদনে তাঁর ব্যক্তিগত গৃহকর্মী ফতেমাকেও সঙ্গে থাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে কারা মন্ত্রক সূত্রে খবর, এই ব্যবস্থা অস্থায়ী। দিন দু’য়েক পরে খালেদাকে মহিলা ওয়ার্ডের শিশুদের ডে-কেয়ার সেন্টারের দু’টি বড় ঘরে স্থানান্তর করা হতে পারে।

বৃহস্পতিবার রাতেই আইনজীবীরা জেলে এসে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও জামিনের আবেদনে খালেদার সই নিয়ে গিয়েছেন। রায়ের প্রত্যয়িত কপি হাতে পাওয়ার পরে হাইকোর্টে এই আবেদন করা হবে। তবে আপিল গৃহীত হলে খালেদার ভোটে দাঁড়াতে কোনও সমস্যা হবে না বলেই আইনজীবীদের অভিমত। আইনমন্ত্রী বিশিষ্ট আইনজীবী আনিসুল হক বলেন, ‘‘সাধারণ ভাবে আপিল গৃহীত হলে ওঁর ভোটে লড়তে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে বিষয়টি উচ্চ আদালত ও নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারে।’’ প্রাক্তন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের কথায়, ‘‘সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গিয়ে যদি কারাদণ্ড বহাল থাকে, তবেই তিনি সাজা খাটার পরবর্তী ৫ বছর পর্যন্ত ভোটে লড়তে পারবেন না। এটাই আইন।’’ তিনি জানান, আপিল গৃহীত হওয়ার অর্থ সাজার বিষয়টি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। রায়ের আগে খালেদা বার বার বলে এসেছেন, ‘‘আমাকে ভোটে লড়তে না-দেওয়ার জন্যই সরকার সাজানো মামলায় জেলে পাঠানোর তোড়জোড় করছে।’’ এর ফলেই বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

নেত্রীর কারাদণ্ডের প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুরে বিএনপি কর্মীরা ঢাকায় মিছিল বার করে। তবে তাতে সেই জঙ্গি মেজাজ ছিল না। নেতৃত্ব জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তবে অনেকে বলছেন, শরিক জামাতে ইসলামির জঙ্গি কর্মীরা এ বার সঙ্গে নেই বলেই বিক্ষোভে তেজ নেই। সরকার ফেলার আন্দোলনের হুমকিও মাঠে মারা গিয়েছে। দুর্নীতি মামলায় শরিক নেত্রীর কারাদণ্ডের ঘটনা থেকে বস্তুত দূরত্বই রাখছে জামাত। এ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া তারা জানায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE