সমস্যাটা ভারতেও ছিল। ১৯৪৭-এ স্বাধীন হওয়ার পর মহাত্মা গাঁধীকে বিরোধীরা মানতে চায়নি। তারা মনে করত, গাঁধী কংগ্রেস নেতা। তাঁকে স্বীকার করা মানে, বিরোধী রাজনীতি শেষ। গাঁধীকে উৎখাত না করলে বিরোধী আন্দোলন উজ্জীবিত হবে না। সেটা ধরে নিয়ে তাঁর ভাবমূর্তি ভাঙতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তাঁকে কার্যত আসামির কাঠগড়ায় তুলতেও দ্বিধা করেনি। তাঁর রাজনৈতিক দর্শনকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা হয়, ঘাড়ে দেশভাগের দায় চাপানো হয়। সব থেকে বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে বামপন্থীরা। ধীরে ধীরে ধারণা বদলায়। গাঁধী যে কোনও দলের নয় সারা দেশের মুখ, মেনেছে সবাই। আজ সবার চোখেই তিনি জাতির জনক। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানকে একই ভাবে বিরোধীরা স্বীকৃতি দিতে নারাজ। তিনি যে শুধু আওয়ামি লিগের সম্পদ নন, জাতির পিতা বিশ্বাস করতে সংশয়। গাঁধী ছাড়া ভারত ভাবা যায় না। মুজিবকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অস্তিত্ব কোথায়। বিদেশের চোখে গাঁধী-রবীন্দ্রনাথের দেশ ভারত। দু'জনের সখ্য ছিল অসংবাদিত। মিল যেমন, মত বিরোধও তেমন। বিতর্কে শক্ত মৈত্রীর ভিত। মুজিবের হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ। বাংলাদেশও মুজিব-রবীন্দ্রনাথের দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত। ভারত-বাংলাদেশ দু'দেশেরই জাতীয় সঙ্গীতে রবীন্দ্রনাথের গান। এমন ঘটনাও তো বিরল। দু'টি দেশের জাতীয় সঙ্গীত একই কবির লেখা, যার মূল সুর, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথের আদর তাই। তাঁকে মানলেই তো চলবে না, তাঁর আদর্শ পূরণ করতে হবে। সেটা একটা কোনও দলের পক্ষে সম্ভব নয়। সংহতি ছাড়া প্রগতি অসম্ভব। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হৃদয়ে ধরে আছেন মুজিব আর রবীন্দ্রনাথকে। সেই শক্তিতেই তিনি অগ্রগামী। মুক্তি যুদ্ধের আদর্শকে সার্থক করে তুলতে বদ্ধপরিকর। কোনও বাধাই তাঁর কাছে বাধা নয়। মানুষ তাঁর সঙ্গে। ঠিক পথে আছেন, তাই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।
হাসিনার জনসমর্থন চিড় ধরিয়েছে বিরোধীদের আত্মবিশ্বাসে। নতুন পথ খুঁজে ক্লান্ত। মুজিবকে প্রত্যাখান করে বিরোধী ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। তাতে লাভ নেই। মানুষ কি সেটা মানবে। মুজিবকে অস্বীকার করা মানে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শচ্যুত হওয়া। জয় বাংলার স্বপ্ন ছেড়ে ভিন্ন ভাবনার সন্ধান। তারা যে দিকেই যাক পথ আগলে দাঁড়িয়ে জামাত। বিরোধীদের ঠিক করতে হবে, হৃদয়ে কাকে ঠাঁই দেবে, মুজিবকে না জামাতকে।
মাঝখানে একটা বছর। তার পরেই ২০১৯-এ সংসদীয় নির্বাচন। দশম সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সব দলই। ঠাহর করতে চাইছে মানুষের মন। সে তো রহস্যের সমুদ্র। নাগাল পাওয়া দুরূহ। এটা ঠিক, বাংলাদেশের কোনও মানুষই ভোট বয়কট করাটা পছন্দ করে না। ২০১৪-তে বিএনপি ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোয় মানুষ ক্ষুব্ধ। ক্ষতি তাদেরও। অকারণে মানুষের থেকে দূরত্ব বেড়েছে। আবার ভোটে ফিরে, কর্পোরেশন, জেলাস্তরে নির্বাচন লড়েছে বিএনপি। আওয়ামি লিগকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। আসন কম পেলেও ভোট পেয়েছে যথেষ্ট। সেটাই বা কম কীসে।
ভোট করতে নতুন নির্বাচন কমিশন তৈরি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা, সবাইকে নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে একশো ভাগ আশাবাদী। তিনি সহযোগী হিসেবে পেয়েছেন চার নির্বাচন কমিশনার মাহবুর তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম, শাহাদৎ হোসেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আওয়ামি লিগ বা বিএনপি যাঁদের নাম সুপারিশ করেছিল তাঁদের মানা হয়নি। আওয়ামি লিগ চেয়েছিল শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী বা বেগম কবিতা খানমকে। বিএনপি সুপারিশ করেছিল মাহবুব তালুকদার আর তোফারেল আহমেদের নাম।
দুই প্রধান দলের দাবি অস্বীকার করে রাষ্ট্রপতি বেছে নিয়েছেন কেএম নুরুল হুদাকে। তার পরেও কি কেউ বলতে পারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কোনও দলের লোক।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের যন্ত্রণা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy