Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Injury

বিক্ষোভের জেরে ফের উত্তপ্ত ঢাকা, ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ, জখম ৫

গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে শহিদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীর উপর যাত্রীবাহী বাস উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দুই পড়ুয়া নিহতের পর থেকেই চলছে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন। ঢাকা ছাড়াও সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের অন্য জেলাতেও।

ছবি রয়টার্স।

ছবি রয়টার্স।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ২৩:১৯
Share: Save:

ঢাকায় ছাত্র বিক্ষোভের জেরে সোমবার তিনটি আলাদা স্থানে ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, রামপুরায় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এবং শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের এই সংঘর্ষ ঘটেছে। এ সব এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস এবং রাবার বুলেট ছোড়ে। শাহবাগে জলকামানের ব্যবহার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় পুলিশ-সহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পুলিশ কয়েকজনকে আটকও করেছে।

গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে শহিদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীর উপর যাত্রীবাহী বাস উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দুই পড়ুয়া নিহতের পর থেকেই চলছে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন। ঢাকা ছাড়াও সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের অন্য জেলাতেও।

আন্দোলনের এক সপ্তাহের মাথায় সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সরকার। তবে খসরা অনুমোদিত হলে আজও ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এখন স্কুল পড়ুয়াদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীরাও সোমবার পথে নেমেছিল। এ দিকে সোমবার সকাল থেকে ঢাকার গণপরিবহন নামতে শুরু করেছে, অন্যদিকে শুরু হয়েছে ট্রাফিক সপ্তাহ।

আন্দোলন চলাকালীন ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই ছিল মুখপত্রের ভূমিকায়। ছোট বড় বিভিন্ন ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে ছাত্ররা যোগাযোগ করে আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে ফেসবুক লাইভে ছাত্র নিহত এবং ধর্ষণের ঘটনা বলায় সে সব নিয়ে উত্তেজিনা ছড়ায়। গত শনিবার ঢাকার জিগাতলা এলাকায় উত্তেজনা চলাকালীন এমন বেশ কিছু ভুয়ো খবর ও লাইভ দেশটির সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হতে থাকে। লাইভের ছাত্র মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে অভিনেত্রী ও মডেল কাজী নওশাবা আহমেদ গ্রেফতার হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলায় চার দিন রিমান্ডে রয়েছেন।

রবিবার রাতে পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে তাঁর বাড়ি থেকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন তাঁর পরিবার। রমনা থানায় দায়ের করা একটি মামলাতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ‘ভীতি ও সন্ত্রাস’ ছড়াতে ইন্টারনেটে ‘কল্পনাপ্রসূত উস্কানিমূলক মিথ্যা’ তথ্য প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুলের বিরুদ্ধে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত ও ষড়যন্ত্রের’ মামলার আবেদন করেছেন এবি সিদ্দিক নামের একজন। সেই মামলার আর্জি শুনে ঢাকার মহানগর হাকিম এ এইচ এম তোয়াহা অভিযোগটি সরাসরি মামলা আকারে গ্রহণ না করে তেজগাঁও থানা পুলিশকে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।

সোমবার বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত সভায় সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে এই খসড়াটি উত্থাপন করা হবে। বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এই আইনে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। তিনি আরও জানান, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের জেল ও অর্থদণ্ড। অর্থদণ্ডের পরিমাণ আদালত নির্ধারণ করবে। বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর কারণে কেউ আহত হলে বা প্রাণহানি ঘটলে এই আইনে মামলা হবে। তবে হত্যার উদ্দেশে গাড়ি চালানো হয়েছে বলে মনে হলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ৩০২ ধারায় মামলা হবে। তদন্ত করে এবং তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষে নির্ধারণ করা হবে দুর্ঘটনার প্রকৃতি কী ছিল। ৩০২ ধারায় মামলা হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। আর যদি তদন্তে মনে হয়, হত্যার উদ্দেশে নয়, বেপরোয়া চালানোর কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাহলে সড়ক পরিবহন আইনের ১০৩ ধারায় মামলা হবে। এই ধারায় সর্বোচ্চ ৫ বছর জেল, অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদনের পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই খসড়াকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করেছে ছাত্রলিগ। অন্য দিকে, সোমবার বিকেল ৩টে নাগাদ ছাত্র বিক্ষোভের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে বেরনো শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল শাহবাগের দিকে এগতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে। এরপর জলকামান ব্যবহার করে, লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় মিছিলটি। এমনই অভিযোগ ছাত্রদের। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, তাদের উপরই অতর্কিতে হামলা করা হয়। পরে হামলাকারীরা বসুন্ধরার গেটের ভিতরে ঢুকে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। তবে কারা হামলা করেছে তা এখনও জানা যায়নি।

নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে বেলাল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি। তারা কারও কথা মানছে না। এই ঘটনার কারণে আমরা নিজেরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছি।’

ঢাকার আরেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় রামপুরায় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে কয়েকজন হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। বিকেল পর্যন্ত সেখানে কয়েকদফা সংঘর্ষ চলেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির মুখপাত্র মহিউদ্দিন একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা নাগাদ বাইরের কিছু ছেলে হঠাৎ ক্যাম্পাসের গেটের বাইরে থেকে ইট ছুড়তে থাকে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া করলে পালিয়ে যায়। এরপর তারা বাইরে মিছিল করলে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে। পরে ছাত্ররা ভেতরে চলে আসে। এখন ক্যাম্পাসের ভেতরেই ছাত্ররা মিছিল করছে। আইডি কার্ড ছাড়া কউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ বাইরে অবস্থান করছে।’

বাংলাদেশের নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় অবিলম্বে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটিশ মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের আটকের ঘটনাকে ‘সরকারের দমননীতি জোরালো হওয়ার ভয়াবহ নজির’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তিও দাবি করা হয়েছে।

এ দিকে স্কুল পড়ুয়াদের শুরু করা আন্দোলনে লেগেছে রাজনীতির আঁচ। শনিবার বিকেলে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লিগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিক অপশক্তি আন্দোলনে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে আওয়ামী লিগ কার্যালয়ে হামলা করেছে। বিএনপি-জামায়াত অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সহিংসতায় রূপ দিয়েছে।

অন্য দিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে ধানমন্ডি আওয়ামী লিগের অফিস থেকে ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের মাথায় হেলমেট ছিল। অস্ত্র নিয়ে তারা কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের রক্তাক্ত ও জখম করেছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে শনিবার রাতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Injury Brawl Student Police Bangladesh Dhaka
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE