Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Bangladesh News

দিনাজপুর সীমান্তে চোরা পাতাল পথের হদিশ কিন্তু চিন্তা বাড়াল

শান্ত সীমান্ত। নিশ্চিন্তে পারাপার। বাংলাদেশ-ভারতের পণ্য মানুষে একাকার। হাহাকার দুষ্কৃতীদের। চোরাচালান বন্ধ হলে চলে কীসে। অনিয়ম না থাকলে অসীম বিপন্নতা। এমন কড়া পাহারা। কড়ে আঙুল গলে না। অনেক চেষ্টায় ঢাকা-কলকাতা বাসের ড্রাইভারকে বড় টোপ।

অমিত বসু
শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৭ ১৭:২১
Share: Save:

শান্ত সীমান্ত। নিশ্চিন্তে পারাপার। বাংলাদেশ-ভারতের পণ্য মানুষে একাকার। হাহাকার দুষ্কৃতীদের। চোরাচালান বন্ধ হলে চলে কীসে। অনিয়ম না থাকলে অসীম বিপন্নতা। এমন কড়া পাহারা। কড়ে আঙুল গলে না। অনেক চেষ্টায় ঢাকা-কলকাতা বাসের ড্রাইভারকে বড় টোপ। আট কোটি টাকার সোনা পাচার করলে টেন পার্সেন্ট কমিশন। লোভে বশ। শেষ রক্ষা হল কই। ধরা পড়ল। ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স বা বিএসএফ আর বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ বা বিজিবি এখন আরও তৎপর। দু'পক্ষের নিত্য মিটিং। সামান্যতম ফাঁক ফোঁকর যেন না থাকে। বাঁকে বাঁকে টহলদারি।

সমতলে বাধা পেয়ে মাটির নীচে পথ খুঁজছে চোরাচালানকারীরা। এমন জায়গা বেছে নিচ্ছে যেখানে সীমান্তরক্ষীদের চোখ এড়িয়ে কাজ চালানো সম্ভব। গর্ত খোঁড়ায় অভ্যস্তদের কাজে লাগানো হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারতের বিপথগামীরা এই পথ তৈরিতে ব্যস্ত। প্রথমে চেষ্টা করেছিল মেঘালয়ে। জনবিরল জায়গা বলে এ সব কাজ চালানোর সুবিধে বেশি। সুড়ঙ্গ নির্মাণে সাফল্যের মুখেই ধরা পড়ে গেছে। অপরাধীদের জেরা চলছে। বিচারে অনেক তথ্য প্রকাশিত।

পশ্চিমবঙ্গে যে সব সীমান্ত দিয়ে মানুষের যাতায়াত সেখানে কিছু করতে পারছে না। টার্গেট করছে শুনশান স্থান। উত্তর দিনাজপুর তাদের পছন্দের জায়গা। সরু লম্বা জেলাটা গিয়ে মিশেছে জলপাইগুড়িতে। যোগাযোগ সহজ নয়। রাজ্যের অনান্য অঞ্চল থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। এক দিকে বিহার, অন্য দিকে বাংলাদেশ। ট্রেন নেই। যাওয়ার পথ একমাত্র ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। এমার্জেন্সি যোগাযোগের কোনও ব্যবস্থা নেই।

আরও পড়ুন, মেঘালয়ের বাংলাদেশ সীমান্তে গোপন সুড়ঙ্গের হদিশ

দেশভাগের আগে ভালই ছিল দিনাজপুর। বিশাল জেলা। বাস-ট্রেনে অবাধে ঢাকা। কলকাতার পরোয়া ছিল না। শহরটাকে সেখানকার মানুষ ভাল করে চিনতই না। দিনাজপুর খন্ডিত হতেই সংকট। ওপারের দিনাজপুরের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক যেমন ছিল তেমনই। সমস্যা এপারে। ঢাকা, কলকাতা দুই শহরই ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সীমান্ত টপকে ঢাকা পৌঁছন যতটা কঠিন এখন, তার চেয়ে অনেক কঠিন কলকাতার নাগাল পাওয়া। দীর্ঘ বাসযাত্রা নিঃসন্দেহে ক্লান্তিকর।

এমন জায়গাতেই অপকর্ম চালানোর প্রয়াস। উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া ব্লকের ফতেপুরে ডানকানের পরিত্যক্ত চা-বাগান। দিন দিন ঢ্যাঙা হচ্ছে গাছ। পাতা আছে কুঁড়ি নেই। আট-দশ ফুট লম্বা গাছের ফাঁকে সুড়ঙ্গ খনন। বাংলাদেশের পুরাতন আটওয়াড়ি গ্রামের পাশে নাগরী নদীর তীর পর্যন্ত। সুড়ঙ্গের এক কিলোমিটারের মধ্যে বসতি। অনেকটা কাটার পর বিএসএফের নজরে। বিএসএফের প্রাথমিক ধারণা, গরু পাচার করতেই এই সুড়ঙ্গ। সেটা ধোপে টেকেনি। তিন-চার ফুট চওড়া গর্তে গরু ঢুকবে কী করে। প্রাণী নয়, পণ্য চোরাচালানই ছিল উদ্দেশ্য।

সীমান্তে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে অবৈধ পাচারের চেষ্টা বেশি পঞ্জাবে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত পঞ্জাবে ড্রাগের চোরাই চালান ছিল যথেষ্ট। দু'দেশের দু'টো মুখ দিয়ে ঢোকা বেরনোতে অসুবিধে হত না। কড়া পাহারায় সে রাস্তা আপাতত বন্ধ। পঞ্জাবের অভিজ্ঞতাতেই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পাতাল পথ আরও কোথায় আছে কিনা খোঁজ চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India Border BSF BGB
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE