ফাইল চিত্র
উড়ে যেতেও সময় লাগে। আকাশে আটকায়। ওঠা-নামা অনির্দিষ্ট। অধরা সড়ক, রেলপথও। অবস্থা আরও সঙ্গীন। ঘড়ি ঘোরে, রাস্তা অফুরান। যেতে তো হবে। জলপথ তো বিকল্প হতে পারে না। আপসেই স্বস্তি। দেরি হয় হোক। পৌঁছলেই হল। মানুষের সঙ্গে পণ্য পরিবহণও একই ভাবে। একমাত্র ব্যতিক্রম তরল সোনা, প্রাকৃতিক গ্যাস। পাঠানো যায় পাইপ লাইনে। এক দিক দিয়ে ঢাললে অন্য মুখ দিয়ে বেরোবে। কল খুললে জল পড়ার মতো। ছড়ছড়িয়ে টার্মিনালের পাত্র ভরাবে। বাংলাদেশ-ভারতের এখন পাইপ লাইন বসানোর দিকে নজর। দু'দেশই রাজি। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্তও হয়েছে। যুক্তি অকাট্য। প্লেন, ট্রেনে ডিজেল পাঠালে চলে না। প্লেনে তো পোষাবেই না।। অত খরচ বইবে কে। ট্রেনেও ঝামেলা। গতি অত্যন্ত শ্লথ। যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। একবার থামলে আর চলতেই চায় না। প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সঙ্গে পণ্যবাহী ট্রেনের তুলনাই হয় না। ভারত থেকে ডিজেল পাঠালেও সময়মতো পাওয়া দুষ্কর। পথ অতিক্রম করতে প্রাণান্ত। লাইন চওড়া হয়েছে। মিটার গেজের জায়গায় এখন ব্রডগেজ। স্পিড বেড়েছে। চওড়া রেকে ডিজেল ধরবেও বেশি। তাতেও হচ্ছে না।
আরও পড়ুন- ‘রেললাইন থেকে তুলে আনা পাথরে ক্রস চিহ্ন এঁকে উপহার দিয়েছিলেন’
সমস্যা সমাধানে একটা নয় দুটো পাইপ লাইন বসানো হচ্ছে। একটিতে যাবে ডিজেল, অন্যটিতে প্রাকৃতিক গ্যাস। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে শিলিগুড়ি থেকে পাইপ লাইন সোজা চলে যাবে বাংলাদেশের পার্বতীপুর। এতে যাবে ডিজেল। পরিবহণ সংকট কাটবে। ট্যাঙ্কারে ভরে ট্রেনে পাঠানোর ঝক্কি শেষ। সময়, খরচ দুই-ই বাঁচবে। বাংলাদেশকে ডিজেল পেতে হাপিত্যেশ করে বসে থাকার দরকার নেই। ভয় একটাই। স্যাবোটাজ করার চেষ্টা যেন না হয়। পাইপ লাইনে কড়া চোখ রাখতে হবে। বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ছাড়াও বিভিন্ন স্তরের অভিজ্ঞ নিরাপত্তা কর্মীরা সেই দায়িত্ব নেবে, জ্বালানিতে বিস্ফোরণ ঘটলে বিপজ্জনক। বিশাল এলাকা গ্রাস করবে আগুন। সেটা নেভানো কঠিন। সন্ত্রাসীরা সেই সুযোগ ছাড়বে কেন। তারা তক্কে তক্কে থাকবে। যাতে নাশকতা ঘটিয়ে নিজেদের জাহির করা যায়। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিয়েছে দু'দেশের নিরাপত্তা মন্ত্রক। তারা জানিয়েছে, জঙ্গিরা যতই আগ্রাসী হোক, পাইপ লাইনে ছুঁচ ফোটাতে পারবে না।
পশ্চিমবঙ্গের দত্তফুলিয়া থেকে বাংলাদেশের খুলনা, লম্বা ১৩১ কিলোমিটার পাইপ লাইন যাচ্ছে। এতে যাবে প্রাকৃতিক গ্যাস। এটা হবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পাইপ লাইন।
খুলনায় গ্যাসের টার্মিনাল বসাবে আন্তর্জাতিক পেট্রোপণ্য সংস্থা পেট্রোনেট। এতে বিনিয়োগ করবে ৫ হাজার কোটি টাকা। ইন্ডিয়ান অয়েল বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে উত্তর পূর্ব ভারতে পেট্রোপণ্য সরবরাহের পরিকল্পনা নিচ্ছে। অন্যান্য বহুজাতিক পেট্রোপণ্য সংস্থার দৃষ্টি এবার বাংলাদেশ-ভারতের দিকে। এখন ডিজেল যাচ্ছে ট্রেনে। শিলিগুড়ির নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুরে ট্রেন ঢুকছে। এক ট্রেকে যাচ্ছে ২ হাজার ২০০ টন ডিজেল। জুলাই পর্যন্ত মাসে এক ট্রেক করে পাঠানো হবে। তারপর যাবে দু'ট্রেক। ভারতে ৫১৫ কিলোমিটার আর বাংলাদেশে ২৫৬ কিলোমিটার পাড়ি দিচ্ছে ডিজেল ভর্তি পণ্যবাহী ট্রেন। পাইপ লাইন হয়ে গেলে বাংলাদেশে বছরে যাবে ১০ লাখ টন ডিজেল। পাইপ লাইনের খরচ ভারতের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy