Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

মুক্তিতেই বা কী হবে, বলছেন শিবিরের রোহিঙ্গারা

বাংলাদেশ-মায়ানমারের মধ্যে গত সপ্তাহে সমঝোতা হয়েছে, তথ্য-প্রমাণ যাচাই করে মায়ানমারের অধিবাসীদের ফেরত নেওয়া হবে। দু’মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। সমস্যা হল, এ দেশে চলে আসা অনেক রোহিঙ্গার কাছেই এমন কোনও নথিপত্র নেই যাতে প্রমাণ হয় তাঁরা মায়ানমারের অধিবাসী।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
ঢাকা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫৮
Share: Save:

দেশে ফেরার নথি যাঁদের নেই তাঁদের নিয়ে জট রয়েছেই। কিন্তু যাঁদের তা আছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সেই সব রোহিঙ্গারা বুঝতে পারছেন না, বারবার পালিয়ে আসা ও ফেরত যাওয়ার এই যন্ত্রণা থেকে কত দিনে, কোন পথে মুক্তি পাবেন তাঁরা। কী ভাবে ঘুচবে তাঁদের সন্ত্রাস-যোগের তকমা। এ দেশের শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অনেকেই আগেও দু’-তিন বার এ ভাবে পালিয়ে এসেছেন। তাঁদের বক্তব্য, সুরক্ষা শান্তি সমানাধিকার— ন্যূনতম এই তিনটি না পেলে, কী হবে মায়ানমারে ফিরে? ভরসা এটুকুই বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্রপুঞ্জ চাইছে পাকাপাকি সমাধান। এ নিয়ে তাঁরা আরও আলোচনা চালাবেন বলে সরকারি সূত্রের খবর।

বাংলাদেশ-মায়ানমারের মধ্যে গত সপ্তাহে সমঝোতা হয়েছে, তথ্য-প্রমাণ যাচাই করে মায়ানমারের অধিবাসীদের ফেরত নেওয়া হবে। দু’মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। সমস্যা হল, এ দেশে চলে আসা অনেক রোহিঙ্গার কাছেই এমন কোনও নথিপত্র নেই যাতে প্রমাণ হয় তাঁরা মায়ানমারের অধিবাসী। প্রাণ হাতে করে পালানোর সময়ে নিতে পারেননি বা পথে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কুতুপালং শিবিরের ফতেমা বেগম যেমন পালিয়ে এসেছেন খালি হাতে। বলছেন, ‘‘কাগজপত্র ছিল। কিন্তু সব পুড়ে গিয়েছে।’’

এর চেয়েও বড় কথা বাংলাদেশে চলে আসা রোহিঙ্গাদের কত জন দেশে ফিরতে চান, তা নিয়েই যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ফিরে না যাওয়ার জন্যেই তাঁরা কাগজপত্র নষ্ট করে ফেলতে চাইবেন, এমন সম্ভাবনাও থাকছে। ফতেমাও চান রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি। কিন্তু তাঁদের ফেরানো নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে, সেখানে রোহিঙ্গা শব্দটিই ব্যবহার করা হয়নি। বলা হয়েছে মায়ানমারের অধিবাসী। এর জন্য লাগবে নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র, বসবাসের ঠিকানা, ব্যবসা বা জমির দলিল, স্কুলের পরিচয়পত্র, মায়ানমার কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা কাগজপত্র।

আরও পড়ুন: ‘রোহিঙ্গা’ না-বলাটা কৌশল পোপের

রাখাইনের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী নুরুল আমিন এখন বালুখালি ক্যাম্পে। এসেছেন সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। সঙ্গে সন্তানসম্ভবা স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে। হাতের কাছে থাকা সব কাগজপত্রই এনেছেন। কিন্তু দেশে ফেরার প্রশ্নে নুরুলেরও কিছু শর্ত আছে। ‘‘প্রথম শর্ত, আমাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। অন্যান্য গোষ্ঠীর মতো অধিকার দিতে হবে। আর আমার জমিজমা, ব্যবসা ফেরত দিতে হবে।’’

বাংলাদেশ-মায়ানমারের মধ্যে এ বারের সমঝোতা হয়েছে ১৯৯২ সালের চুক্তির কথা মাথায় রেখে। কিন্তু এই রকম ব্যবস্থার মাধ্যমে ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর হয়নি। উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে এমন লোকজন রয়েছেন, যাঁরা তিন চার বার দু’দেশে যাওয়া-আসা করেছেন। আশির কাছাকাছি বয়স হোসেন শরিফ এই নিয়ে চতুর্থ বার এসেছেন। বললেন, ‘‘আর কত কষ্ট করব। রোহিঙ্গা হিসেবে আমাদের মেনে নিলে তবেই যাব, নয়তো যাব না।’’ এই পরিস্থিতিতে সব রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোটা বেজায় শক্ত ও জটিল। বাংলাদেশ বলছে, এটা ব্যবস্থা সূচনামাত্র। যাঁদের নথি নেই, ইউএনএইচসিআর এবং বাংলাদেশ সরকার তাঁদের বিষয়ে আরও কয়েক দফায় আলোচনা করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rohingya Dhaka Myanmar রোহিঙ্গা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE