জঙ্গিদের দেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: এএফপি।
তামিমকে চিহ্নিত করা গিয়েছিল গতকালই। নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশের অভিযানে নিহত অপর দুই জঙ্গিকেও শনাক্ত করা গেছে। একজন যশোহরের ফজলে রাব্বি। অপর তরুণ ঢাকার ধানমন্ডির বাসিন্দা তাওসিফ হোসেন।
ঢাকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটি) প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, “ফজলে রাব্বির পকেটে একটি পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। সেটি দেখেই তার পরিচয় জানা গিয়েছে। তবে অপর জঙ্গি তাওসিফের বিষয়ে অনেকটা নিশ্চিত হলেও এখনও শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি”।
ফজলে রাব্বির গ্রামের বাড়ি যশোহরের কিসমত নওয়াপাড়ায়। সে যশোহর এমএম কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। গত ৫ এপ্রিল থেকে সে নিখোঁজ ছিল বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। এর দু’দিন পর রাব্বির নিখোঁজ হওয়া নিয়ে থানায় জিডি-ও করা হয়েছিল। রাব্বির বাবা হাবিবুল্লাহ স্থানীয় একটি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ।
ফজলে রাব্বি।
নিহত অপর জঙ্গির নাম সম্ভবত তাওসিফ হোসেন। সে ঢাকার ধানমন্ডির ১৫ নম্বর (নতুন) সড়কের বাসিন্দা। বাবার নাম আজমল হোসেন। র্যাবের দেওয়া সর্বশেষ নিখোঁজ তালিকায় তাওসিফের নাম ৭ নম্বরে ছিল। গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ সে হয়। ধানমন্ডি থানায় ওই দিনই একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ১৪৩) দায়ের করা হয়েছিল। ম্যাপেল লিফ নামে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল পাশ করা তাওসিফ মালয়েশিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র ছিল গুলশনের অন্যতম হামলাকারী এবং নিহত জঙ্গি নিবরাস।
তাওসিফ হোসেন।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, “তাওসিফের বিষয়ে আমরা ৯৫ ভাগ নিশ্চিত হয়েছি। বাকি ৫ ভাগ ‘রিচেক’ করার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে”। এর আগে শনিবার দুপুরে নিহত দুজনকে মানিক ও ইকবাল বলে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছিল পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গিদের একাধিক সাংগঠনিক নাম রয়েছে। মানিক ও ইকবাল এদের সাংগঠনিক নাম ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই সেই বাড়ি। ছবি: এএফপি।
এ দিকে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশের অভিযানে নিহত তিন জঙ্গির লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। তিন জঙ্গিরই মাথায় গুলির আঘাত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ। সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘দু’জনের শরীরে স্প্লিনটার আর গুলির চিহ্ন ছিল। গুলির কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। মাথার সামনে দিয়ে গুলি ঢুকে পেছন দিয়ে বেরিয়ে গেছে। তবে তামিমের শরীরে শুধু গুলির চিহ্নই পাওয়া গেছে’’।
তিনি আরও জানান, ‘‘জঙ্গিদের শরীর থেকে উরুর মাংস, চুল এবং রক্তের নমুনা মহাখালির রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে’’।
তামিম চৌধুরী।
শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া কবরস্থান এলাকার এক তিনতলা বাড়িতে যৌথবাহিনীর অভিযানে মৃত্যু হয়েছিল এই তিন নিও জেএমবি জঙ্গির। এদের মধ্যে তামিম ছিল বাংলাদেশের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসবাদীদের একজন। গত ১-২ জুলাই গুলশনের হোলি আর্টিজান বেকারির হত্যাকাণ্ডে প্রধান নেপথ্য পাণ্ডা ছিল কানাডার নাগরিক এই তামিম চৌধুরীই। বছর তিনেক আগে কানাডা থেকে বাংলাদেশে এসে ছন্নছাড়া হয়ে যাওয়া জেএমবি’র একটি গোষ্ঠীর মাথা হয়ে দাঁড়ায় সে। গুলশন কাণ্ডের তদন্ত যত এগোতে থাকে, ততই সামনে আসতে শুরু করে তামিমের নাম। শুরু হয় তামিমের খোঁজ।
আরও পড়ুন: নিজেই নিজেকে ‘বাংলার বাঘ’ বানিয়েছিল তামিম
সম্প্রতি গোয়েন্দা সূত্রে খবর মেলে তামিম লুকিয়ে আছে নারায়ণগঞ্জে। তাড়াহুড়ো না করে গোপন নজরদারি বাড়িয়ে দেয় পুলিশ। তারপর আস্তে আস্তে ‘শিকার’এর জাল গোটাতে থাকে। শনিবার ভোরে পাইকপাড়ার কবরস্থান এলাকার ওই তিনতলা বাড়ি ঘিরে ফেলে অভিযান শুরু করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা। পরে র্যাব-সহ অন্য বাহিনীও অভিযানে যোগ দেয়। সকাল নটা নাগাদ শুরু হয় চূড়ান্ত অভিযান। ঘণ্টা খানেকের অপারেশনে নিহত হয় নব্য জেএমবির প্রধান ও গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরী। মারা যায় তামিমের দুই সঙ্গীও।
(সৌজন্যে বাংলা ট্রিবিউন)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy