এই ঘটনাই বাবলুর বয়ানে নিজের ফোটোগ্রাফি ব্লগে তুলে ধরেছেন আকাশ। যেখানে বাবলু বলছেন, ‘‘আমি আর আমার স্ত্রী সব সময় মেয়ে চাইতাম। কিন্তু আমাদের তিন ছেলে। ৩০ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছি। বেশির ভাগ সময়ই যাত্রীরা খুব দুর্মুখ হয়। এক দিন সকালে এক ভদ্রলোক তাঁর মেয়েকে আমার রিকশায় তুলে দিয়ে কলেজে নিয়ে যেতে বলেন। বলেছিলেন সাবধানে নিয়ে যেতে। কিছুক্ষণ পরেই মেয়েটা কাঁদতে শুরু করে। আমি পিছন ফিরে তাকালে আমাকে এক ধমক দেয়। কিছু ক্ষণ পর আমাকে থামতে বলে কাকে যেন ফোন করার চেষ্টা করে।
“ওর কান্না দেখে বুঝতে পারি কোনও ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল বাড়ি থেকে। কিন্তু ছেলেটা আসেনি। হঠাত্ রিকশা থেকে ঝাঁপ দিয়ে পাগলের মতো রেল লাইনের দিকে ছুটতে শুরু করে। আমি চলে আসছিলাম। হঠাত্ই মেয়েটির বাবার মুখটা মনে পড়ে গেল। রিকশা ছেড়ে ওর পিছনে ছুটলাম।
আরও পড়ুন: দু’বছর পরে ‘রাজকন্যা’র জন্য নতুন জামা কিনে কাঁদলেন ভিখিরি বাবা
“ওকে আটকে দিয়েছিলাম। কিছু ক্ষণ আমার উপর চিত্কার করার পর অঝোরে কাঁদতে থাকে। আমি থামাইনি। ওকে কাঁদতে দিয়েছিলাম। প্রায় তিন ঘণ্টা কেটে যায় এ ভাবেই। তারপর ও নিজেই আমাকে বলে রিকশা নিয়ে আসতে। আর একটা কথাও আমরা বলিনি।
“ততক্ষণে বৃষ্টি নেমে গেছে। বৃষ্টির মধ্যেই ওকে বাড়ি পৌঁছে দিলাম। নামার সময় ছোট্ট অনুরোধ, কাকু, আর কোনও দিন আমার বাড়িতে এসো না। কাউকে বলো না তুমি আমাকে চেনো। ঘাড়় নেড়ে বাড়ি চলে এসেছিলাম। সেই দিন কোনও কথা বলিনি, কিছু খেতেও পারিনি। মনে হয়েছিল ভগবান মেয়ে না দিয়ে ভালই করেছেন।
“তার পর কেটে গিয়েছে আট বছর। হঠাত্ই সেই দুর্ঘটনা। অজ্ঞান হয়ে যাই। সবাই ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। জ্ঞান ফিরতেই দেখতে পাই সাদা পোশাক, গলায় স্টেথোস্কোপ, চোখে চশমা এক তরুণী। আমার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে জানতে চাইছেন, কেমন আছি। কেন আমি এতো দিন দেখা করতে আসিনি। প্রথমে চিনতেই পারিনি।
“যখন বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হল, শুনতে পেলাম ‘‘স্যর, উনি আমার বাবা।’’ বয়স্ক ডাক্তার ইংরেজিতে কিছু বললেন। আমার জখম হাতটা নিজের হাতে নিয়ে উত্তর এল, ‘‘যদি এই বাবার সাহায্য না পেতাম, তা হলে আমি ডাক্তার হতে পারতাম না।’’
“সরু বিছানায় শুয়ে চোখদুটো জোর করে বন্ধ করে রেখেছিলাম। এই অভাগা রিকশাওয়ালার একটা মেয়ে আছে। এক ডাক্তার মেয়ে।’’