শরৎচন্দ্রের পল্লীসমাজ আজও আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক কারণ দেশের বিস্তীর্ণ প্রান্ত এখনও কৃষিভিত্তিক। আবার শহুরে জীবনযাত্রা প্রায় ৭০ শতাংশই কৃষিভিত্তিক উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। সেদিক থেকে কৃষি ব্যবহার ও তার আনুষঙ্গিক শিল্পগুলি যেভাবে গুরুত্ব পাবে তা বলাই বাহুল্য। এ কথা ঠিক যে, বিগত ৬৫ বছরে আমাদের দেশে কৃষিশিল্পে পুনর্গঠনের ওপরে ব্যাপক জোর দেওয়া হয়েছে। সেচ ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস ও আধুনিকীকরণ, ট্রাক্টর সহ উন্নত প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও প্রয়াস, কৃষি ক্ষেত্রে সবুজ থেকে হলুদ বিপ্লব, কো-অপারেটিভ ফার্মিং-এর প্রচলন, উৎকৃষ্ট মানের জৈবসারের আবিষ্কার, বিভিন্ন শস্যবীজ সহ পরিবেশ সম্পর্কেও সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়াসের মাধ্যমে আমরা কৃষি ব্যবস্থায় নিরন্তর অগ্রগতির স্বাক্ষর বহন করে চলেছি। আবার কৃষি শিল্পের সহযোগী হিসেবে যুক্ত হয়েছে হর্টিকালচার, মৎস্যচাষ, অ্যানিমেল হাসবেন্ড্রি, ডেয়ারি ফুড ও ফ্রুট প্রসেসিং, ফরেস্ট্রি, পোলট্রি ফার্মিং ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রেও আমাদের বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা ক্রমাগত সাফল্য ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন।
তবুও চাহিদার তুলনায় ঘাটতির পরিমাণ এখনও অনেক। সঙ্গে সম্মুখীন হতে হচ্ছে নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জেরও। যেমন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে চাহিদা বৃদ্ধি সত্বেও কৃষি জমির পরিমাণ কমেছে অথচ উত্তরোত্তর বেড়েছে জনসংখ্যা। এর ফলে আর পঁচিশ বছর থেকে ত্রিশ বছর বাদে প্রায় ত্রিশ শতাংশ নতুন মুখের আমদানি ঘটতে চলেছে যার জন্য খাবারের চাহিদার বৃদ্ধি হবে প্রায় ৬০ শতাংশেরও বেশি। পরিসংখ্যান বলছে এই শতাব্দীর শেষে খাদ্য শষ্যের চাহিদার পরিমাণ দাঁড়াবে ২২৫ মিলিয়ন টন যা বর্তমানে ১৯৭.৫ মিলিয়ন টন। আবার উপাদনের পরেও উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে খাদ্যশস্য নষ্ট হয়ে যায় কুড়ি থেকে পঁচিশ শতাংশের উপরে। এর সঙ্গেই রয়েছে ফুড সিকিউরিটি এবং নিউট্রিশন সিকিউরিটির মতো অত্যাবশ্যকীয় চ্যালেঞ্জও। প্রশ্ন হল কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার? এর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন আরও অনেক বেশি জ্ঞানী ও দক্ষ কৃষিবিজ্ঞানী এবং কৃষি প্রযুক্তিবিদ। প্রয়োজন উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ও জৈব সারের উদ্ভাবন। প্রয়োজন সেচ ও জল বণ্টন ব্যবস্থার আরও আধুনিকীকরণ। প্রয়োজন আরও আধুনিক মানের কোল্ড স্টোরেজ ব্যবস্থা ও গণবন্টন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ। খাদ্য শস্য ও পুষ্টিজনিত বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোও এই প্রয়োজনীয়তাগুলির মধ্যে পড়ে। এদিকে নজর রেখেই কৃষি ব্যবস্থায় উন্নতির জন্য আরও অনেক দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯২৯ সালে তৈরি হয়েছিল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর এগ্রিকালচার রিসার্চ যা সংক্ষেপে আই সি এ আর হিসেবে পরিচিত। এর উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হল দেশের কৃষি ব্যবস্থার বিকাশের পাশাপাশি কৃষি শিক্ষা ব্যবস্থা এবং রপ্তানিক বিস্তার ঘটানো। বর্তমানের আমাদের দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ১৬ শতাংশ কৃষি ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। মোট রপ্তানির ১৫ শতাংশ হয় কৃষিজাত উৎপাদন থেকে। খাদ্যশস্য ছাড়াও মাছ, মাংস, রাবার, কাপড়, ফুল ও ফলের এক বিরাট অবদান রয়েছে এখানে। এই পরিসরকে যতটা বাড়ানো যাবে, বিদেশী মুদ্রা অর্জনে ভারত ঠিক ততটাই সাফল্য পাবে। জাতীয় কৃষিশিল্পের উন্নতির এই লক্ষ্য পূরণে আগামী ১০ বছরে এই ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে অন্তত আরও ২০০০০ কৃষিবিজ্ঞানী, ১০০০০ কৃষি প্রযুক্তিবিদ এবং ৫৪০০০ কৃষিকর্মীর। আবার কৃষি ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের দক্ষতা বাড়ানোরও প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এদিকে নজর রেখেই দেশের বুকে গড়ে উঠছে একের পর এক কৃষি শিক্ষা কেন্দ্র। সরকারি ও বেসরকারি উভয় বিশ্ববিদ্যালয়েই এগ্রিকালচারে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শুধু কৃষিবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিই নয়, এই শাখায় যুক্ত হয়েছে পরিবেশ বিজ্ঞান, ফুড টেকনোলজি, জেনেটিক, মাইক্রো ও মলেকিউলার বায়োলজির মতো বিষয়গুলিও।
এই সব বিষয়গুলিকে এক সূত্রে বাঁধার জন্য আইসিএআর-এর উদ্যোগে একটি মডেল অ্যাক্টও তৈরি হয় ১৯৬৬ সালে। যার ভিত্তিতে পরবর্তীকালে এগ্রিকালচার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শাখায় স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও গবেষণার জন্য নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমও ঠিক করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই আইসিএআর-এর পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পড়ানো বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানের এই গুরুত্ব ও চাহিদার কথা মাথায় রেখেই জে আই এস বিশ্ববিদ্যালয়, এই বছর থেকে বি.এসসি.ইন এগ্রিকালচার পড়ানো শুরু করেছে। বিধানচন্দ্র কৃষি বিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ ধরণীধর পাত্রকে স্কুল অফ এগ্রিকালচারের ডিরেক্টর-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কৃষি শিক্ষা জগত ও কৃষি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ শিক্ষককেও পড়ানোর জন্য নিয়োগ করা হচ্ছে।
ডঃ পাত্রের মতে, ভবিষ্যতে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর উদ্দেশ্য নিয়েই জেআইএস শিক্ষাগোষ্ঠীর বি.এসসি. কোর্স শুরু করেছে। খুব শীঘ্রই মাস্টার্স, পি.এইচডি. পড়ানোর পাশাপাশি এগ্রিকালচারের অন্যান্য বিষয়গুলিও পড়ানো হবে এখানে। তিনি আশা করেন অন্যান্য বিষয়গুলির মতো জেএইএস শিক্ষাগোষ্ঠী এখানেও উৎকর্ষের দাগ রাখতে পারবে।
ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জেআইএস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy