Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
প্রত্যন্ত গ্রামে পরিষেবাই নয়া লাইসেন্সের পূর্বশর্ত

বন্ধনের মতো সংস্থাই পথ দেখাবে ব্যাঙ্কের প্রসারে

সার্বিক মন্দার বাজারে প্রায় পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধির হার নিয়ে অর্থনীতিবিদদের কাছে হাততালি কুড়োচ্ছে ভারত। একই সঙ্গে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে পড়ে সমালোচকদের খতিয়ানে ব্যর্থ সেই একই ভারত। আধার কার্ডের হাত ধরে এই সমালোচনার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলেও, শুধুমাত্র ব্যাঙ্কের খরচ আর লাভের অঙ্কে গরমিলই এই পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৫০
Share: Save:

সার্বিক মন্দার বাজারে প্রায় পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধির হার নিয়ে অর্থনীতিবিদদের কাছে হাততালি কুড়োচ্ছে ভারত। একই সঙ্গে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে পড়ে সমালোচকদের খতিয়ানে ব্যর্থ সেই একই ভারত। আধার কার্ডের হাত ধরে এই সমালোচনার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলেও, শুধুমাত্র ব্যাঙ্কের খরচ আর লাভের অঙ্কে গরমিলই এই পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বন্ধনের ব্যাঙ্কিং লাইসেন্স পাওয়াকে অবশেষে দিশা হিসেবে দেখতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট মহল।

আর্থিক পরিষেবা সংস্থাগুলির ধারণা, ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থাগুলি প্রত্যন্ত গ্রামে আর্থিক পরিষেবা দিয়ে অভ্যস্ত। সেই কারণে এই বাজারের সঙ্গে তাদের যে-পরিচয়, তা বড় ব্যাঙ্কগুলির পক্ষে অর্জন করা সম্ভব নয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (আরবিআই) নতুন ব্যাঙ্কিং লাইসেন্স দেওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত হল, অন্তত ২৫% শাখা খুলতে হবে সেই সব অঞ্চলে, যেখানে কোনও ব্যাঙ্কের শাখা নেই এবং জনসংখ্যা ১০ হাজারের নীচে। ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থাগুলির যা পরিকাঠামো, তা ব্যবহার করে তাদের পক্ষে এই সব অঞ্চলে লাভজনক ভাবে বাজার ধরা অনেক বেশি সহজসাধ্য। অথচ বৃহৎ ও পুরনো ব্যাঙ্কের কাছেও তা বড় চ্যালেঞ্জ।

আরবিআই নিয়ন্ত্রিত ‘নন ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি-মাইক্রো ফিনান্স ইনস্টিটিউশন’-গুলির সংগঠন এমএফআইএন-এর সিইও অলোক প্রসাদের হিসেবে, বছরে কর্মী পিছু একটি ব্যাঙ্কের গড়ে খরচ হয় ৭-৮ লক্ষ টাকা। কিন্তু গ্রাহক পিছু বছরে গড়ে ৩০-৪০ হাজার টাকার সঞ্চয় না-হলে কোনও শাখা ব্যবসায়িক ভাবে লাভজনক হয় না। অথচ ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থার ক্ষেত্রে কর্মী পিছু বছরে খরচ এক লক্ষ টাকা। ফলে ব্যাঙ্কের চেয়ে এক কদম এগিয়ে রয়েছে তারা। আবার নিজেদের সামাজিক অবস্থানের কথা ভেবেও ব্যাঙ্কের শাখায় যেতে কুণ্ঠাবোধ করেন অনেকে। সে জায়গায় ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থার সঙ্গে লেনদেনে তাঁরা স্বচ্ছন্দ। কিন্তু শুধু ঋণ নয়, প্রত্যেক নাগরিক সঞ্চয় বা বিমার মতো আর্থিক সুবিধা পাওয়ারও অধিকারী বলে মনে করেন এই শিল্পের আর এক সংগঠন সা-ধনের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর ম্যাথু টাইটাস।

আর সেই লক্ষ্য অর্জনেই হাতিয়ার হতে পারে ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থাগুলির ব্যাঙ্ক, দাবি প্রসাদ ও ম্যাথু-র। এর মূল ভিত্তিই হল, ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের নিবিড় যোগাযোগ। কারণ তাঁদের প্রতিনিধি বা কর্মী প্রায় গ্রাহকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে যান। তাঁদের সঙ্গে গ্রাহকদের সম্পর্কের ভিত ব্যাঙ্কের চেয়ে অনেক বেশি সহজ এবং মজবুত। ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থা ব্যাঙ্ক খুললেও সেখানে যেতে একজন গ্রাহক অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবেন বলেই দাবি তাঁদের।

পাশপাশি, ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থা ব্যাঙ্ক খুললে আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য রক্ষা করে ব্যবসা লাভজনক হবে বলেই দাবি সংশ্লিষ্ট শিল্পের। এখন বন্ধনের মতো প্রতিষ্ঠান ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থার কাছ থেকে যে-সুদে ঋণ নেয়, গ্রাহকদের কাছ থেকে তাদের তার চেয়ে বেশি হারে সুদ নিতে হয়। কিন্তু ব্যাঙ্ক খুললে তারা নিজেরাই আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। ফলে তহবিল সংগ্রহের খরচও কমবে। যার নিট ফল হল গ্রাহকদের সুদের হারও কমবে। আবার সুদের হার কমলে বেশি মানুষ ঋণ নিতে পারবেন। যা ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থার আয় বাড়াতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি, গরিব মানুষও সঞ্চয়ের মাধ্যমে কম খরচে নিজের সম্পদ গড়তে পারবেন। প্রসাদ জানান, কর্নাটকের একটি ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থা জনলক্ষ্মী-ও বন্ধনের মতোই ব্যাঙ্ক খোলার জন্য আরবিআই-এর অনুমোদনের অপেক্ষায়।

সাধারণের কাছে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে কেনিয়াও ভারতের থেকে এগিয়ে। কেনিয়ার মতো আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা দেশেও জনসংখ্যার ৪২ শতাংশের কোনও না কোনও আর্থিক সংস্থায় অ্যাকাউন্ট রয়েছে। কেনিয়ার ১৭% মানুষের মাসিক আয়ের টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়ে। সেখানে ভারতের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান নিতান্তই নগণ্য। ভারতে মাত্র ৩৫% মানুষের ব্যাঙ্কে বা অন্যান্য আর্থিক সংস্থায় অ্যাকাউন্ট আছে। আর মাত্র ২% মানুষের রোজগারের টাকা জমা পড়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। মোবাইল ব্যাঙ্কিং বা সমগোত্রীয় প্রথা ভাঙা ব্যবস্থার মাধ্যমে কেনিয়া এ ব্যাপারে পথিকৃৎ। ভারতের ক্ষেত্রেও বন্ধনের ব্যাঙ্কিং লাইসেন্স পাওয়াকে দিন বদলের সূচনা হিসাবেই দেখতে চাইছে সংশ্লিষ্ট মহল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

debepriya sengupta bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE