Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অনুৎপাদক সম্পদের চাপ আরও বাড়ছে ব্যাঙ্ক শিল্পে

অনুৎপাদক সম্পদ ব্যাঙ্কগুলির ব্যবসার পথে যে কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেই ছবি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল বেশ কিছু দিন আগেই। যে কারণে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশে বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি পরিস্থিতি শোধরাতে তৎপরও হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই অনুৎপাদক সম্পদের চাপ থেকে এখনই মুক্তি পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না বলে শুক্রবার জানিয়ে দিল তারা। বরং তাদের সতর্ক বার্তা ‘সময়ে শোধ না-হওয়া’ ঋণের বোঝা বাড়তে থাকার এই ঝোঁক আগামী বছরেও বহাল থাকারই সম্ভাবনা।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৫
Share: Save:

অনুৎপাদক সম্পদ ব্যাঙ্কগুলির ব্যবসার পথে যে কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেই ছবি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল বেশ কিছু দিন আগেই। যে কারণে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশে বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি পরিস্থিতি শোধরাতে তৎপরও হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই অনুৎপাদক সম্পদের চাপ থেকে এখনই মুক্তি পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না বলে শুক্রবার জানিয়ে দিল তারা। বরং তাদের সতর্ক বার্তা ‘সময়ে শোধ না-হওয়া’ ঋণের বোঝা বাড়তে থাকার এই ঝোঁক আগামী বছরেও বহাল থাকারই সম্ভাবনা।

এই আশঙ্কার কারণ, গত সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকের আর্থিক ফলাফলে দেখা গিয়েছে যে, বহু ব্যাঙ্কেরই অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ আরও বেড়েছে। যা খেয়ে নিচ্ছে তাদের মুনাফার এক বড়সড় অংশকে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই কমজোরি হয়ে যাচ্ছে ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক ভিত।

এ দিন ব্যাঙ্ক অব বরোদা এবং ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, দেশের অন্যতম বৃহৎ এই দুই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কই দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে তাদের অনুৎপাদক সম্পদ বাড়ার কথা জানিয়েছে। তা বেড়েছে ইউকো, সিন্ডিকেট ও ইউনাইটেড ব্যাঙ্কেরও। এর আগে চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত আরও কিছু ব্যাঙ্কের আর্থিক ফলাফলেও ওই সম্পদের বোঝা বাড়তে দেখা গিয়েছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের ফল প্রকাশ করা ৩৪টি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫টিরই মোট ঋণের সাপেক্ষে অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ বাড়তে দেখা গিয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই আবার চলতি আর্থিক বছরে তাদের অনুৎপাদক সম্পদ আরও বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাসও দিয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যথেষ্ট আশঙ্কাজনক বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

বস্তুত, এর আগে মূল্যায়ন সংস্থা ফিচ এক সমীক্ষায় জানিয়েছিল, ভারতের ব্যাঙ্কিং শিল্প প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণের উপর দাঁড়িয়ে। যা তাদের দেওয়া মোট ঋণের প্রায় ১০%। এ দিন ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞদের দাবি, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বলেই এই সমস্যার ফাঁস থেকে বেরোনোর পথ খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা। কারণ তাঁদের মতে, অর্থনীতি দুর্বল। ফলে পরিকাঠামো, খনন, ধাতু বস্ত্রের মতো ক্ষেত্রগুলিতে তেমন কাজকর্ম শুরু হতে পারছে না। তাই যে সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই প্রচুর পরিমাণে ঋণ নিয়ে নিয়েছে, তারা সেগুলি শোধ করতে পারছে না। আর সেগুলি অনুৎপাদক সম্পদ হয়ে জমছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে।

সংস্থাই হোক বা ব্যক্তি, ব্যাঙ্ক কাউকে ঋণ দিলে তা ব্যাঙ্কের সম্পদ হিসেবেই ধরা হয়। কিন্তু সেই ঋণ যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদায় করা না-যায়, তবে তা ধরা হয় অনুৎপাদক সম্পদ হিসেবে। যে সম্পদ ব্যাঙ্কের আয় তো বাড়ায়ই না, বরং হিসাবের খাতায় তার জন্য আলাদা করে আর্থিক সংস্থান করতে হয়। আর তা করতে গিয়েই বিভিন্ন ব্যাঙ্কের মুনাফা কমে যাচ্ছে বলে দাবি ব্যাঙ্কিং শিল্পের। যা কাঁটা হয়ে বিঁধছে তাদের গলায়।

অনুৎপাদক সম্পদ খাতে ব্যাঙ্কগুলির এই লোকসানের আশঙ্কাকে ক্রমশ কমিয়ে আনার অন্যতম একটি উপায় আরও বেশি করে মূলধনের জোগান। আর্থিক বিশ্লেষকরা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, এ বিষয়ে নতুন আন্তর্জাতিক বিধি মানতে হলে আগামী ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির দরকার অন্তত ১১ হাজার কোটি ডলার (প্রায় ৬,৮২,০০০ কোটি টাকা) মূলধন।

এর আগে গত দু’টি অর্থবর্ষে বৃদ্ধি টানা ৫ শতাংশের নীচে থাকায় অনুৎপাদক সম্পদও এক লাফে মোট সম্পদের ৪% পেরিয়ে যায় (২০১১ সালে ছিল ২.৪%)। পাশাপাশি মন্থর হয়ে যায় ঋণ নেওয়ার হার। ব্যাঙ্ক অব বরোদার এক কর্তা বলেন, “এই সমস্যা আরও অন্তত একটি-দু’টি ত্রৈমাসিক তো চলবেই।” প্রসঙ্গত, ব্যাঙ্কটির অনুৎপাদক সম্পদ বাড়ার পাশাপাশি লাভ কমেছে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

banking sector non performing asset
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE