Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
অচলাবস্থা কাটল বিশ্ব বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে

খাদ্য সুরক্ষায় ভারতের দাবি মানল আমেরিকা

অবশেষে সন্ধি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় খাদ্য সুরক্ষা নিয়ে ভারতের দাবি মেনে নিল আমেরিকা। গণবণ্টনের জন্য শস্য মজুত করার ব্যবস্থা এবং ওই একই লক্ষ্যে দেওয়া খাদ্যে ভর্তুকি বজায় রাখার ব্যাপারে বৃহস্পতিবার ভারতের দাবির সঙ্গে একমত হল তারা। এ জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার পুরনো প্রথা থেকে সরে এসে তা ‘অনির্দিষ্টকাল’ বহাল রাখায় সায় দিয়েছে আমেরিকা।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১৯
Share: Save:

অবশেষে সন্ধি।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় খাদ্য সুরক্ষা নিয়ে ভারতের দাবি মেনে নিল আমেরিকা। গণবণ্টনের জন্য শস্য মজুত করার ব্যবস্থা এবং ওই একই লক্ষ্যে দেওয়া খাদ্যে ভর্তুকি বজায় রাখার ব্যাপারে বৃহস্পতিবার ভারতের দাবির সঙ্গে একমত হল তারা। এ জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার পুরনো প্রথা থেকে সরে এসে তা ‘অনির্দিষ্টকাল’ বহাল রাখায় সায় দিয়েছে আমেরিকা।

যতদিন না ডব্লিউটিও-র সদস্য রাষ্ট্রগুলি এ নিয়ে স্থায়ী রফাসূত্র বার করতে পারে, ততদিন ভারতে চালু থাকবে ওই ভর্তুকি। ফলে অবাধ বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে যে-চুক্তি (ট্রেড ফেসিলিটেশন এগ্রিমেন্ট) হয়েছিল, তা রূপায়ণের পথে আর কোনও বাধা রইল না বলে এ দিন নয়াদিল্লিতে জানিয়েছেন ভারতের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তার কারণ, ওই চুক্তির যে-ধারাটি ভারত বহাল রাখার দাবি তুলেছিল, সেই সমঝোতাসূত্র বা ‘পিস ক্লজ’ এ বার যত দিন প্রয়োজন চালু রাখতে পারবে ভারত।

এই সূত্রকে হাতিয়ার করেই খাদ্য সুরক্ষা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। ২০১৭ সালের পরে তা বন্ধ করার সময়সীমা আগে স্থির করলেও আর তা চাপিয়ে দিতে পারবে না ডব্লিউটিও। প্রসঙ্গত, এ নিয়ে মূল আপত্তি আসে আমেরিকার কাছ থেকেই। এ দিন আমেরিকা রফার পথে হাঁটায় মসৃণ হল ডব্লিউটিও-র যাত্রাপথ।

এ জন্য অবশ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই বাহবা দিয়েছেন সীতারামন। তিনি বলেন, “মোদীর মার্কিন সফরের পর থেকেই দু’পক্ষের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে।”

পাশাপাশি, ওয়াশিংটনে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল ফ্রোম্যান বলেন, “জুলাইয়ে থমকে যাওয়া বালি চুক্তি এ বার রূপায়ণ করা সম্ভব হবে।” প্রসঙ্গত, জুলাইয়ে ফ্রোম্যান বলেছিলেন, “আমরা হতাশ। ভারতের একরোখা মনোভাবে ঘোরতর সঙ্কটে ডব্লিউটিও।”

প্রসঙ্গত, জুলাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে উন্নয়নশীল দেশগুলির সংগঠন জি২০-র বৈঠকে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে এই গুরুত্বপূর্ণ বালি চুক্তি। শেষ পর্যন্ত খাদ্য সুরক্ষার প্রশ্নে ডব্লিউটিও-র নয়া বাণিজ্য চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তেই অটল ছিল ভারত। তবে অবাধ বাণিজ্য চালু করার মরিয়া প্রচেষ্টা হিসেবে সদস্য দেশগুলি আশ্বাস দিয়েছিল, ভারতের উদ্বেগের বিষয়টি প্রতিকারের যথাসম্ভব চেষ্টা করা হবে।

দরিদ্রদের ভর্তুকিতে খাদ্য বণ্টনের কারণেই ভারতকে উপযুক্ত পরিমাণে শস্য মজুত রাখতে হয়। আর, এখানেই আপত্তি ছিল ডব্লিউটিও তথা উন্নত দুনিয়ার। তাদের অভিযোগ ছিল, শস্য মজুত করলে ভাঙা হবে অবাধ বাণিজ্যের শর্ত, কারণ তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কৃত্রিম ভাবে বাড়িয়ে দেবে শস্যের দর। প্রসঙ্গত, ডব্লিউটিও আইনে শস্যের মোট উৎপাদন মূল্যের মাত্র ১০ শতাংশে ভর্তুকি দেওয়া যায়। যে-দরে ওই ভর্তুকি নির্ধারিত হয়, তা-ও অন্তত দু’দশকের পুরনো। এখানেই আপত্তি ছিল ভারতের। অন্য দিকে, আমেরিকা কৃষিতে ভর্তুকি দেয় ১২০০০ কোটি ডলার, যেখানে ভারতে তা মাত্র ১২০০ কোটি ডলার।

ডব্লিউটিও চুক্তি সম্ভব হলে লাল ফিতের ফাঁস এড়িয়ে অবাধ বাণিজ্য বৃদ্ধির হাত ধরে বিশ্বের জাতীয় আয় বাড়বে ১ লক্ষ কোটি ডলার। প্রায় ২ কোটি ১০ লক্ষ কাজের সুযোগও তৈরি হবে। ভারতের শিল্পমহল এবং রফতানিকারীরাও মনে করছেন, এর ফলে লাভবান হবেন তাঁরা।

১৯৯৫ সালে তৈরি হওয়ার পর থেকেই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রধান লক্ষ্য পৃথিবী জুড়ে বাণিজ্য যথাসম্ভব অবাধ করা। কর এবং পরিমাণগত বিধিনিষেধ সরল করেই ধাপে ধাপে এই লক্ষ্যে এগোতে চায় ডব্লিউটিও। এতে জোর দিতে ২০০১ সালে পুরোদস্তুর আলোচনা শুরু হয় দোহাতে। কিন্তু সেখানে সমঝোতা হয়নি। কারণ, বাণিজ্য নীতি নিয়ে মতান্তর থেকেই যায় আমেরিকা, ইউরোপের মতো উন্নত দুনিয়ার সঙ্গে ভারত, চিনের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির।

তার পর ২০১৩-র বালি চুক্তি নিয়েও অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় ডব্লিউটিও-র ভবিতব্য ঘিরে যে-সংশয়ের মেঘ জমেছিল, এ বার তা কাটবে বলেই আশাবাদী সংশ্লিষ্ট মহল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Food Security Bill India-US
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE