Advertisement
E-Paper

ব্যাঙ্কে জাল চেকে টাকা তুলে প্রতারণা

জাল নোটের পরে এ বার জাল চেক! চেক জাল করে স্টেট ব্যাঙ্কের খড়দহ শাখার জনৈক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে গিয়ে ধরা পড়েছেন এক মহিলা। ব্যাঙ্কের চেক নম্বর, আইএফসি কোড, ব্যাঙ্কের শাখার নাম ইত্যাদি বদলে এবং অন্যের সই নকল করে দু’বার টাকা তুলেওছেন তিনি।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪৮
Share
Save

জাল নোটের পরে এ বার জাল চেক!

চেক জাল করে স্টেট ব্যাঙ্কের খড়দহ শাখার জনৈক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে গিয়ে ধরা পড়েছেন এক মহিলা। ব্যাঙ্কের চেক নম্বর, আইএফসি কোড, ব্যাঙ্কের শাখার নাম ইত্যাদি বদলে এবং অন্যের সই নকল করে দু’বার টাকা তুলেওছেন তিনি। ধরা পড়েছেন তৃতীয় বারে। যে-রকম নিখুঁত ভাবে চেকে বিভিন্ন তথ্য পাল্টানো হয়েছে এবং আগের দু’বার ব্যাঙ্কের চোখে ধুলো দেওয়া গিয়েছে, তা চোখ কপালে তুলে দিয়েছে অনেকেরই। জেরায় মহিলার দাবি, তাঁর নাম পাপিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়। ধরা পড়ার সময়ে সোমা দাসের নামে চেক লিখে টাকা তুলছিলেন তিনি।

এ ভাবে ব্যাঙ্কের চোখকে ফাঁকি দিয়ে টাকা হাতানোর জন্য কত ভেবেচিন্তে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা তাঁর কার্যকলাপ থেকেই স্পষ্ট। কারণ, টাকা তোলার জন্য যে-চেকের পাতাটি ব্যবহার করা হচ্ছিল, তা জাল নয়, আসলই। কিন্তু বিশেষ কায়দায় সেই চেকের নম্বর, ব্যাঙ্কের শাখা, তার ঠিকানা, আইএফসি কোড, অ্যাকাউন্ট নম্বর, এমআইসিআর কোড ইত্যাদি মুছে ফেলা হয়েছে। এবং তার জায়গায় বসানো হয়েছে সেই ব্যক্তির চেকের তথ্য, যাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে ‘দক্ষ’ হাতে নকল করা হয়েছে গ্রাহকের সই। তার পর টাকার অঙ্ক লিখে তাকে ‘বেয়ারার চেক’ হিসেবে জমা দেওয়া হয়েছে ব্যাঙ্কের কাউন্টারে। এর আগে দু’বার এ ভাবে টাকা তুলতে সফলও হয়েছেন ওই মহিলা।

এই জাল চেক যাতে ব্যাঙ্ককর্মীদের মনে সন্দেহ না-জাগায়, তা নিশ্চিত করতে একাধিক সাবধানতাও অবলম্বন করেছিলেন ওই মহিলা। প্রথমত, যাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা হয়েছে, নিখুঁত ভাবে জোগাড় করা হয়েছে তাঁদের অ্যাকাউন্ট এবং চেক সম্পর্কিত তথ্য। দ্বিতীয়ত, চেকের অঙ্ক সব সময়ে সীমিত রাখা হয়েছে ৫০ হাজারের মধ্যে। যেহেতু তার বেশি তোলার জন্য বেয়ারার চেক জমা পড়লেই সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। জানতে চান, সত্যিই ওই চেক তিনি দিয়েছেন কি না। সে কথা মাথায় রেখেই এর আগে স্টেট ব্যাঙ্কের বনহুগলি ও টিটাগড় শাখা থেকে টাকা হাতানোর সময়ে ৪৪ হাজার এবং সাড়ে ৪৭ হাজারের চেক দিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু গত ৫ অগস্ট খড়দহ শাখায় ৩৯,৫০০ টাকার জাল চেক জমা দিতেই সন্দেহ হয় কাউন্টারে কর্মরত অফিসারের। সঙ্গে সঙ্গে পাশের অফিসারকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে সে কথা জানান তিনি। দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া হয় ব্যাঙ্কের দরজা। এর পরেই ওই মহিলাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন স্টেট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। প্রতারণার বিষয়টি যিনি তদন্ত করে দেখছেন, স্টেট ব্যাঙ্কের সেই অফিসার বিবেকানন্দ পাত্রের দাবি, “অন্য দুই শাখা থেকে জাল চেকে টাকা তোলার ঘটনা জানতে পারার পরেই অফিসার ও কর্মীদের এ ধরনের প্রতারণা ধরার বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিই আমরা। তার সুফল হিসেবেই খড়দহ শাখায় প্রতারণার চেষ্টা রোখা গেল।”

কিন্তু এর আগে নকল সই কেন ধরতে পারলেন না ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ? উত্তরে এক ব্যাঙ্ককর্তার দাবি, “কিছু ক্ষেত্রে এত সূক্ষ্ম ভাবে (অনেক সময়ে গ্রাহকের সই জোগাড়ের পরে তা স্ক্যান করে বসিয়ে দিয়ে) তা করা হয় যে, সাদা চোখে ধরা শক্ত।”

খড়দহ শাখার যে-গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার চেষ্টা হচ্ছিল, তাঁর সম্পর্কে এত তথ্য প্রতারক মহিলার হাতে এল কী ভাবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ওই গ্রাহক জানিয়েছেন, অ্যাকাউন্ট থেকে বৈদ্যুতিন ব্যবস্থায় (ইসিএস) জীবনবিমার প্রিমিয়াম জমা দিতে এক এজেন্টকে একটি ক্যানসেলড চেক দিয়েছিলেন তিনি। এজেন্টের কথায় সইও করেছিলেন তাতে (যদিও তা করার কথা নয়)। এ ছাড়া, বাসস্থানের প্রমাণপত্র হিসাবে ব্যাঙ্কের পাসবইয়ের প্রথম ও শেষ পাতার ফোটোকপিও নিয়ে যান ওই এজেন্ট। এই ঘটনার সঙ্গে ওই চেকের কোনও সম্পর্ক আছে কি না, এখন পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

ব্যাঙ্কের মতে, প্রতারক যাবতীয় তথ্য ওই ক্যানসেলড চেক থেকেই পেয়েছিলেন কি না, তা প্রমাণসাপেক্ষ। তবে ওই ধরনের চেক দেওয়ার বিষয়ে সাবধানী হওয়া কেন জরুরি, এই ঘটনা তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ।

fake currency bank progyananda chowdhury fake check business news online business news fraud case

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}