শেষ পর্যন্ত বিরোধিতায় অনড় রইলেন অমিত মিত্র। কিন্তু তা সত্ত্বেও জিএসটি-তে কেন্দ্র ও রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সোমবার ঐকমত্যে পৌঁছতে পারলেন। তবে দিনের শেষে জিএসটি চালু হওয়ার দিনক্ষণ ১ এপ্রিল থেকে ১ জুলাইয়ে পিছিয়ে দিতে বাধ্য হলেন তিনি।
পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি-তে করদাতাদের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বিবাদ চলছিল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনড় অবস্থান নিয়ে দাবি তুলেছিলেন, যাঁদের বছরে ব্যবসার পরিমাণ দেড় কোটি টাকার কম, সেই সব ছোট ব্যবসায়ীর উপর শুধুমাত্র রাজ্যেরই নিয়ন্ত্রণ থাকুক। কিন্তু কেন্দ্র পণ্যের উপর করের এক্তিয়ার ছাড়লেও পরিষেবা করের অধিকার ছেড়ে দিতে রাজি হয়নি। আজ জিএসটি পরিষদের বৈঠকে কেন্দ্রের অধিকার অনেকখানিই রাজ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে সমঝোতার পথ তৈরি করেছেন জেটলি। ঠিক হয়েছে, বছরে দেড় কোটির নীচে ব্যবসার ক্ষেত্রে ৯০% ব্যবসায়ীর স্ক্রুটিনি ও অডিটের অধিকার থাকবে রাজ্যের হাতে। বাকি ১০% কেন্দ্রের হাতে থাকবে। দেড় কোটির উপরে ব্যবসার ক্ষেত্রে অর্ধেক কেন্দ্রের হাতে, অর্ধেক রাজ্যের হাতে থাকবে। আন্তঃ-রাজ্য জিএসটি-র ক্ষেত্রেও একই ভাবে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি হবে।
এই রফাসূত্রে বাকি সব রাজ্য রাজি হলেও একমাত্র আপত্তি জানিয়েছেন অমিত মিত্র। জেটলি বলেন, ‘‘শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী দেড় কোটি টাকার কমের ব্যবসায় কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ৯০ ও ১০% অনুপাতে এক্তিয়ার ভাগাভাগিতে আপত্তি তুলেছেন। তবে তাঁর আপত্তি শুধু ওইটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।’’
প্রসঙ্গত, তৃণমূল কংগ্রেস তথা মমতা-সরকার প্রথম থেকেই জিএসটি-তে সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্রের দখলদারি নিয়ে বিরোধিতা চালিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। নোট বাতিলের পরে এমনিতেই অর্থনীতিতে ধাক্কা লেগেছে বলে জিএসটি চালুতেই আপত্তি তোলেন অমিতবাবু। যুক্তি ছিল, তা চালুর দিন পিছোনো হোক। না-হলে ফের অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হবে। আজ অমিতবাবু দাবি তোলেন, দেড় কোটির নীচের ব্যবসায় ১০ শতাংশও কেন্দ্রকে ছাড়তে তিনি রাজি নন। পুরোটাই রাজ্যের হাতে থাকা উচিত।
রাজ্যগুলির দাবির কাছে মাথা নুইয়ে উপকূল থেকে ১২ নটিকাল মাইল পর্যন্ত জলসীমানাতেও যে-কোনও আর্থিক কর্মকাণ্ডে কর আদায়ের অধিকার রাজ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন জেটলি। যদিও আইনত তা কেন্দ্রেরই এলাকা।
আজ কেন্দ্র-রাজ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সমঝোতা হলেও অরুণ জেটলি নিজেই মেনে নিয়েছেন, ১ এপ্রিল থেকে জিএসটি চালু করা সম্ভব নয়। তার বদলে ১ জুলাই থেকে জিএসটি চালুর লক্ষ্য স্থির করাটা অনেক বাস্তববাদী। কারণ এখনও জিএসটি সংক্রান্ত তিনটি বিলের খসড়া চূড়ান্ত হওয়া বাকি। রাজ্যের জিএসটি বিলটি সমস্ত বিধানসভায় পাশ করাতে হবে। কেন্দ্রীয় জিএসটি, আন্তঃ-রাজ্য জিএসটি এবং ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিল সংসদে পাশ করাতে হবে। কোন পণ্যে কত হারে কর বসবে, তা-ও ঠিক হওয়া বাকি। উল্লেখ্য, শিল্পমহল দাবি তুলেছিল, গ্রহণযোগ্য জিএসটি চালুর জন্য বাস্তবসম্মত দিন ঠিক হোক।
জেটলি আজ সেই দাবি মেনে নিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, শুধু প্রক্রিয়াগত কাজ যে বাকি রয়েছে, তা নয়। নোট বাতিলের প্রভাব অর্থনীতিতে পড়েছে। তা কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার পরেই জিএসটি চালু করা যুক্তিসঙ্গত বলে জেটলিও মানছেন। সেই কারণেই তিনি জিএসটি চালুর দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি মেনে নিয়েছেন।
জেটলি অবশ্য যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘জিএসটি-তে লেনদেনের উপর কর বসে বলে বছরের যে কোনও সময় থেকেই তা চালু হতে পারে। তা ছাড়া এর ফলে শিল্পমহলকেও কিছুটা সময় দেওয়া যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy