Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
টেলিকমের লক্ষ্য কাগজে না ফেরা

আধার যাচাই বন্ধ, খোঁজ বিকল্পের

টেলিকম দফতর (ডট) স্বীকৃত ঠিকানা ও পরিচয়পত্র দিয়ে সিম বিক্রির ব্যবস্থা চালু রয়েছে অনেক আগে থেকেই। তবে সেই সব কাগুজে নথি যাচাই করে সিম চালু করতে কয়েক দিন সময় লাগত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ০২:১৯
Share: Save:

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মোবাইল সংযোগের জন্য আধার তথ্য যাচাই আর বাধ্যতামূলক নয়। সে কারণে আবেদনকারীর তথ্য পরীক্ষার জন্য শুরু হয়েছে বিকল্প ডিজিটাল পদ্ধতির খোঁজ। টেলিকম সংস্থাগুলিরও বক্তব্য, কেন্দ্রের ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ প্রকল্পকে সফল করতে গেলে ডিজিটাল পদ্ধতিতেই গ্রাহকদের তথ্য যাচাই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পুরনো কাগুজে পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া অনুচিত।

টেলিকম দফতর (ডট) স্বীকৃত ঠিকানা ও পরিচয়পত্র দিয়ে সিম বিক্রির ব্যবস্থা চালু রয়েছে অনেক আগে থেকেই। তবে সেই সব কাগুজে নথি যাচাই করে সিম চালু করতে কয়েক দিন সময় লাগত। আধারের মাধ্যমে তথ্য যাচাইয়ের পদ্ধতি ও পরিকাঠামো চালু হওয়ার পরে সেই সময় অনেকটাই কমে গিয়েছিল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চালু হয়ে যেত নতুন সিম। এর ফলে এক দিকে যেমন মোবাইল সংযোগ তাড়াতাড়ি বাড়ছিল, তেমনই গ্রাহক সিম পাচ্ছিলেন দ্রুত। কিন্তু সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, পুরনো ব্যবস্থা চালু থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই আধার ছাড়া সংযোগ দিতে চাইত না তারা।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে অবশ্য আধার নথি জমা দেওয়ার সেই বাধ্যবাধকতা আর নেই। কিন্তু টেলি শিল্পের বক্তব্য, ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর ওই যাচাই প্রক্রিয়া (ই-কেওয়াইসি) গড়ার জন্য তারা ইতিমধ্যেই বিপুল লগ্নি করেছে। তা ছাড়া ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ প্রকল্পকে সফল করতে হলে পুরনো কাগুজে পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া অনর্থক। সে কারণেই তথ্য যাচাইয়ের বিকল্প পথ খুঁজতে উদ্যোগী হয়েছে ডট ও আধার কর্তৃপক্ষ (ইউআইডিএআই)। টেলিকম সংস্থাগুলির সঙ্গে এ ব্যাপারে কথাও বলেছে তারা।

সম্প্রতি ডট ও ইউআইডিএআই অ্যাপের মাধ্যমে দ্রুত নতুন সিম সংযোগ ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দিয়েছে। সেই ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়ে টেলি শিল্পের সংগঠন সিওএআইয়ের ডিজি রাজন ম্যাথুজ জানান, তাঁরা ওই প্রস্তাবে কিছু সংশোধনের আর্জি জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ফের কাগুজে পদ্ধতিতে ফেরার অর্থ, ডিজিটাল ইন্ডিয়ার পথ থেকে এক ধাপ পিছিয়ে যাওয়া। পাশাপাশি, বর্তমান পরিকাঠামো ও লগ্নির অপচয়।’’ সংস্থাগুলির বক্তব্য, ডিজিটাল প্রযুক্তিতে গ্রাহক তথ্য যাচাই সম্ভব হলে মানুষের কাছে দ্রুত মোবাইল পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যাবে।

উল্লেখ্য, নথিপত্র জালিয়াতি করে বেনামে একাধিক মোবাইল সংযোগ নেওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। টেলিকম শিল্পের দাবি, প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় এক গুচ্ছ বাড়তি সতর্কতার প্রস্তাব রয়েছে। গ্রাহক দোকানে এসে আবেদন জানালে সেখানেই তাঁর ছবি তোলা হবে। সেই ছবিতে দোকানের ভৌগলিক অবস্থানের উল্লেখ থাকবে, যাতে অন্য কেউ সেই ছবি ও তথ্যের অপব্যবহার করতে না পারেন।

যদিও অনেকেরই বক্তব্য, বিকল্প পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হলেও তা ফাঁসের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। গ্রাহকের ছবি ও নথি কী ভাবে দোকানে সংস্থার প্রতিনিধির কাছে সংরক্ষিত থাকবে, তা নিয়ে আরও স্বচ্ছতা জরুরি বলে মনে করেন তাঁরা।

পদ্ধতি বদল

• আধার তথ্য যাচাই করে সিম বিক্রি বন্ধ।

• ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর বিকল্প ব্যবস্থার ভাবনা।

• টেলিকম সংস্থাগুলির সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে ডট ও ইউআইডিএআই।

• নতুন পদ্ধতির বিষয়ে কিছু প্রস্তাব উঠেছে ইতিমধ্যেই।

বিকল্প প্রস্তাব

• টেলিকম সংস্থার মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নতুন সিম পেতে আবেদন।

• দোকানে সংস্থার এজেন্টের সাহায্য নিয়ে সেই অ্যাপের মাধ্যমেই বৈদ্যুতিন পদ্ধতিতে আবেদনপত্র (কাস্টমার অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম বা ক্যাফ) ভর্তি করা।

• আবেদনের সময়ে দোকানেই গ্রাহকের ছবি তুলে তা ওই বৈদ্যুতিন ফর্মে যুক্ত করা হবে।

• জালিয়াতি রুখতে ছবি তোলার স্থানের ভৌগলিক তথ্য উল্লেখ করা থাকবে। ছবিতে থাকবে হলোগ্রামের মতো বিশেষ চিহ্ন (ওয়াটার মার্কিং) ও সংস্থার কোড।

• ঠিকানা ও পরিচয়ের প্রমাণপত্রেরও ছবি তুলে ওই ফর্মে যুক্ত করা হবে। তথ্যের নিরাপত্তার জন্য সেই ছবিতেও ওয়াটার মার্কিংয়ের পাশাপাশি সংস্থা ও বিপণির নাম, সার্কেল, তারিখ ও সময়ের উল্লেখ থাকবে। ফলে সেই ছবি ফের ব্যবহার করা যাবে না।

• ফর্ম জমা দিলে এজেন্টকে ‘ওটিপি’ পাঠাবে সংস্থা। সেটি তিনি নির্দিষ্ট জায়গায় লিখবেন।

• গ্রাহকের বিকল্প নম্বরেও ‘ওটিপি’ আসবে। সিম চালুর জন্য তাঁকেও সেই ‘ওটিপি’ দিয়ে আবেদন জানাতে হবে।

• সব তথ্য পাওয়ার পরে তা যাচাই করে দেখবে সংস্থা। তার পরেই হবে ‘টেলি ভেরিফিকেশন’। প্রয়োজনে এই পর্যায়ে পাঁচ সংখ্যার একটি ‘পিন’-ও তৈরি করা হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE