Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
আশঙ্কার মেঘ তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে

একা ট্রাম্পে রক্ষে নেই, রোবট দোসর

এইচ-১বি ভিসা নিয়ে কড়াকড়ি। আর কল-সেন্টারের আউটসোর্সিং রুখতে মার্কিন কংগ্রেসে আসা বিল। ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় ধেয়ে আসা এই জোড়া ধাক্কার সঙ্গে এখন ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃত্রিম মেধার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) দ্রুত বাড়তে থাকা রমরমা।

গার্গী গুহঠাকুরতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৭ ০৩:৫৪
Share: Save:

এইচ-১বি ভিসা নিয়ে কড়াকড়ি। আর কল-সেন্টারের আউটসোর্সিং রুখতে মার্কিন কংগ্রেসে আসা বিল। ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় ধেয়ে আসা এই জোড়া ধাক্কার সঙ্গে এখন ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃত্রিম মেধার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) দ্রুত বাড়তে থাকা রমরমা। ২০২১ সালের মধ্যে যা এ দেশে প্রায় সাড়ে ছ’লক্ষ কাজের সুযোগকে স্রেফ গিলে খাবে বলে সমীক্ষায় আশঙ্কা!

এর ফলে এ রাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের অবস্থা কী দাঁড়াবে, সেই ছবি এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এই শিল্পে কর্মীদের একটি বড় অংশই যেহেতু দক্ষিণ ভারতীয় ও বাঙালি, তাই কাজখেকো রোবটের বিপদঘণ্টি সজোরে বাজার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে এ রাজ্যও।

যন্ত্র আর রোবটের কাছে মানুষ কাজ খোয়াতে শুরু করেছে আজ অনেক দিন। সহজেই তা টের পাওয়া যায় বড়-বড় কারখানায়। কিন্তু এখন কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তির দৌলতে তা ছিনিয়ে নিচ্ছে এমন অনেক কাজ, যা কিছু দিন আগেও ছিল কল্পনার বাইরে। তা সে কাজ ব্যাঙ্কের কর্মীর হোক বা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের। বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে যন্ত্রের কারণে ৬৯% চাকরি কমতে পারে ভারতে। আন্তর্জাতিক সমীক্ষা সংস্থা হর্সেস ফর সোর্সেস রিসার্চের দাবি, চার বছরের মধ্যে ৬.৪ লক্ষ কাজের সুযোগ হারিয়ে যাবে এই দেশে। বিশেষত মার খাবে তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা ও বিপিও। যেখানে অনেক ক্ষেত্রে একই কাজ করতে হয় বারবার। কিছু কাজে দক্ষতাও লাগে তুলনায় সামান্য কম।

প্রযুক্তি-সুনামির এই ঢেউ যে ধীরে-ধীরে উঠতে শুরু করেছে, তা স্পষ্ট রাজ্যে ব্যবসা করা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির পরিসংখ্যানেই। টিসিএস, কগনিজন্যান্ট, উইপ্রো— স্বয়ংক্রিয় মেশিনের কারণে (অটোমেশন) কর্মী নিয়োগে রাশ টানছে তিন সংস্থাই। একে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এইচ-১বি ভিসা নিয়ে কড়াকড়ি আর কল-সেন্টারের কাজ আমেরিকার বাইরে যেতে না-দেওয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প থরহরি কম্প। তার উপর কাজ রাখতে মেশিনের সঙ্গে এই লড়াই ঘুম কেড়ে নিচ্ছে তার কর্মীদের।

কগনিজ্যান্টের অন্যতম কর্তা ম্যালকম ফ্র্যাঙ্কের অবশ্য দাবি, যন্ত্রের কারণে এখনকার ১২% চাকরি হয়তো যাবে। তেমনই নতুন কাজের সুযোগও তৈরি হবে ১৩%। টেক মহীন্দ্রার প্রধান তথা ন্যাসকমের চেয়ারম্যান সি পি গুরনানির-ও দাবি, নতুন প্রযুক্তি শুধু কাজের সুযোগ কাড়বে না, তৈরি করবে নতুন কাজও। যন্ত্র চালাবেন নতুন ভাবে প্রশিক্ষিত কর্মীরা। আর ঠিক এখানেই গুরুত্ব পাচ্ছে প্রশিক্ষণ। ন্যাসকমের প্রেসিডেন্ট আর চন্দ্রশেখর বলেন, ‘‘অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কিন্তু পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মীদের নতুন প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’’ যদিও সমস্ত পুরনো কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে যে নতুন কাজের উপযুক্ত করে তোলা যাবে না, তা মেনে নিচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প।

মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস সম্প্রতি বলেছিলেন, সময় এসেছে কাজখেকো রোবটের উপরে কর বসানোর কথা ভাবার। সংস্থাগুলি যা-ই আশ্বাস দিক, মেশিনের কাছে কাজ হারানোর ভয়ে তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়া এখন এতটাই সন্ত্রস্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE