Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

লগ্নির থালি গোছানো তো?

ভাতের সঙ্গে ডাল, তরকারি, মাছ, মাংস। আর সব শেষে স্বাদ বদলের জন্য চাটনি, পাঁপড়, সন্দেশ। অতিথিকে খাওয়াতে যদি নিখুঁত ব্যবস্থা করতে পারি, তা হলে নিজের আর্থিক পরিকল্পনা নিয়ে কেন গা-ছাড়া মনোভাব দেখা যায়? কেনই বা সেখানে বেমক্কা বাদ পড়ে যায় অনেক কিছু? গুছিয়ে লগ্নির কথা লিখছেন মেধা রায়মাইনে পাওয়ার পরেই বললেন, ব্যাঙ্কে কিছুটা টাকা রেখে দিতে। সৌরভ অবশ্য এখনই লগ্নির কথা ভাবছিলেন না। বরং তাঁর ইচ্ছে দামি একটা মোবাইল কেনার। তার পরে বন্ধুবান্ধবদের রেস্তরাঁয় খাওয়াতে নিয়ে যাওয়ার আব্দার তো আছেই।

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:২৭
Share: Save:

সবেমাত্র নতুন চাকরিতে ঢুকেছে সৌরভ। গা থেকে এখনও কলেজের গন্ধ যায়নি। প্রথম মাসের মাইনের চেক হাতে এসেছে। রোজগারের প্রথম টাকা পেয়ে নিজে তো খুব খুশি বটেই। বাবা-মায়ের আনন্দও কম নয়। তবে বাবা একটু সতর্ক। মাইনে পাওয়ার পরেই বললেন, ব্যাঙ্কে কিছুটা টাকা রেখে দিতে। সৌরভ অবশ্য এখনই লগ্নির কথা ভাবছিলেন না। বরং তাঁর ইচ্ছে দামি একটা মোবাইল কেনার। তার পরে বন্ধুবান্ধবদের রেস্তরাঁয় খাওয়াতে নিয়ে যাওয়ার আব্দার তো আছেই। তা-ও কিছুটা বাবার মন রাখতেই টাকা জমানোর কথা ভাবতে হল তাঁকে। কিন্তু সে ভাবে লগ্নির কোনও বিষয়ই জানেন না। তখন অফিসের সহকর্মীরাই বললেন, বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে। আর্থিক পরিকল্পনার বিষয়টা যে অতটা সহজ নয়, সেটাই সৌরভকে বুঝিয়েছিলেন সেই বিশেষজ্ঞ। বলেছিলেন, শুধুমাত্র লগ্নির জন্য টাকা রাখলেই হবে না। বরং আয়ের খুঁটিনাটি, খরচের হিসেব, কর, উইল, পরিবারের সুরক্ষা— এই সব কিছু মিলেই তৈরি হয় সেই পরিকল্পনা। তিনি কী পরামর্শ দিয়েছিলেন, চলুন দেখি।

কেন করব

যে কোনও কাজেই হাত দেওয়ার আগে, তা কেন করব জানা জরুরি। আর্থিক পরিকল্পনাও ব্যতিক্রম নয়। তাই প্রথমেই স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত, কেন সেই পথে হাঁটব। মূলত যে যে কারণগুলি এতে থাকবে, তা হল—

• এখন মানুষের আয়ু আগের তুলনায় বেশি। ফলে অবসর নেওয়ার পরেও পড়ে থাকে অনেকটা সময়। যখন আবার অনেক ক্ষেত্রেই ছেলেমেয়ে কাছে থাকে না। তাই অবসর জীবন সচ্ছল ভাবে চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে আগেই।

• দেশে সামাজিক সুরক্ষা তেমন নেই। বেসরকারি ক্ষেত্রে অনেক জায়গাতে নেই পেনশনও। ফলে সঞ্চয়ের পরিকল্পনা না থাকলে মুশকিল।

• কষ্টের আয়ের টাকা কোথায় ঠিক মতো রাখলে বেশি রিটার্ন দেবে, তা জেনে রাখা দরকার।

• মূল্যবৃদ্ধির হারের সঙ্গে জুঝে বেশি রিটার্ন পেতে পরিকল্পনা জরুরি।

• যৌথ পরিবারে টাকা দিয়ে সাহায্য করার লোক পাওয়া যেত। এখন যা প্রায় দেখাই যায় না। তাই আপৎকালের টাকার জোগাড় করতে হবে আগে থেকেই।

• লাগে টাকা, পকেটে আছে কার্ড। এই ভাবে ভাবনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি আমরা। কিন্তু সময়ে টাকা শোধ না দিলে যে ধারের জালে জড়িয়ে যেতে হবে, তা মাথায় থাকে কই?

• বাজারে প্রচুর প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু সেগুলির মধ্যে থেকে কোন লক্ষ্যের জন্য কোনটা উপযুক্ত, তা বেছে নিতে ভাবনাচিন্তা করতে হবে।

কী ভাবে?

বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞের মতে, একটা পরিকল্পনায় অনেকগুলি ভাগ থাকে। যেমন—

• নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা করা।

• খরচ সীমার মধ্যে বেঁধে রাখা।

• পরিবারের সুরক্ষার বন্দোবস্ত।

• লক্ষ্য বেঁধে লগ্নির পথে হাঁটা।

• কর বাঁচিয়ে সঞ্চয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করা।

• উত্তরাধিকারীদের মধ্যে যাতে বিবাদ না বাধে, সে জন্য টাকা জমানোর শুরুতেই নমিনি করা এবং বয়স কালে (সাধারণত অবসরের আগে বা ঠিক পরে) উইল বা দানপত্রের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা।

একটু ভেবে দেখলে বোঝা যাবে, এই সব বিষয়গুলি নিয়েই আমরা কখনও না কখনও আলোচনা করেছি। কিন্তু এই সব কিছু মিলিয়েই যে আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে, প্রথম থেকেই তা মাথায় রাখা জরুরি। কোনও একটাকে বাদ যাবে না।

আবার প্রত্যেকের বয়স ও দায়দায়িত্ব অনুসারে লগ্নির অঙ্ক বা প্রকল্প পাল্টাবে ঠিকই। কিন্তু উপরের বিষয়গুলি মোটের উপরে সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

নিয়মিত আয়

খাতা পেন নিয়ে বসুন। যে যে জায়গা থেকে আমাদের হাতে টাকা আসে, সেই সবই এখানে একটা তালিকা তৈরি করে লিখতে হবে। যেমন—

• যাঁরা চাকরি করেন, তাঁরা মাস গেলে বেতন হাতে পান। তাই এখানে সেই অঙ্ক লিখতে হবে।

• পেশাদার বা পরামর্শদাতারা ক্লায়েন্টের থেকে কোনও পরিষেবার বিনিময়ে টাকা পান। এটা ঠিক যে প্রতি মাসে সেই অঙ্ক সমান হয় না। কিন্তু তা-ও একটা আন্দাজ থাকে, ফলে সেটাই এখানে লিখুন। চেষ্টা করুন কমটা লিখতে। কারণ, বেশি ধরে পরে যদি দেখা যায় হাতে কম টাকা এল, তাতে পরিকল্পনা ঠিক হবে না।

• ব্যবসা থেকে রোজগারও নিশ্চিত নয়। তা-ও চেষ্টা করুন সম্ভাব্য আয় লিখে রাখতে।

• অবসরপ্রাপ্তেরা নিয়মিত আয়ের জন্য মূলত নির্ভর করেন পেনশন এবং চাকরি জীবনে করা নানা লগ্নি থেকে সুদের উপরে। তালিকায় সবটা লিখুন।

• এর মানে এই নয় যে অবসরের আগে সুদ থেকে কোনও রোজগার হবে না। থাকতে পারে বাড়ি ভাড়া, ডিভিডেন্ড থেকে প্রাপ্ত টাকার হিসেবও। ফলে যখন আয় হিসেব করা হবে, তখন সমস্ত খাতে পাওয়া টাকা এক জাগয়ায় আনতে হবে।

• যদি চান তো একার নিজের আয় ধরেই এই হিসেব করতে পারেন। আর নয়তো পরিবারের সকলের রোজগারই এর মধ্যে ধরতে হবে। এতে সংসারের পুরো আয়ের ছবিটা স্পষ্ট হবে।

এটা হল রোজগারের হিসেব। এর উপর ভিত্তি করে তৈরি হবে খরচ এবং লগ্নির পরিকল্পনা।

উদাহরণ

সৌরভের কথাই ধরি—

তাঁর বেতন মাসে ৩০,০০০ টাকা। শুধু তা ধরে হিসেব করলে এক রকম।

কিন্তু সৌরভের বাবার পেনশন রয়েছে ১৬,০০০ টাকা। সুদ থেকে তিনি পান আরও মাস গেলে প্রায় ১৮,০০০ টাকা। অর্থাৎ বাবার মোট আয় ৩৪,০০০ টাকা।

আর পরিবারের সকলের হিসেব ধরলে আয় দাঁড়াবে ৬৪,০০০ টাকা।

খাতায় এই পুরোটাই প্রত্যেকের নামে আলাদা করে লিখতে হবে।

খরচের খতিয়ান

আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু খরচ করতেই হয়। টাকার অঙ্কের রকমফের হতে পারে। কিন্তু মোটের উপরে খরচের খাঁচাটা এক রকমই থাকে। তাই—

• খেরোর খাতায় লিখুন আপনার নিয়মিত খরচ। এখানে ছোট, বড় অঙ্কের তফাৎ করা ঠিক নয়। বরং মাস গেলে যা যা খরচ করা দরকার হয়, সব লিখুন। তাতে যদি পাঁচ টাকার কাঁচালঙ্কা কিনতে হয়, তা-ও বাদ দেবেন না। আবার নিয়মিত ওষুধপত্র কেনা, ছেলেমেয়ের স্কুল-কলেজের খরচও থাকবে এখানে। এর লক্ষ্য হল মোটামুটি মাসে কত টাকা খরচ না করলেই নয়, তার হিসেব করা।

• এ বার আসবে সেই সব খরচ, যা বছরের বিভিন্ন সময়ে আমাদের করতেই হয়। যেমন উৎসবে অনুষ্ঠানে উপহার দেওয়া। ছেলেমেয়ের স্কুলে কোনও অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষ অনুরোধ ইত্যাদি। এগুলি প্রতি মাসের নিয়মিত খরচ নয়। অথচ তালিকা তৈরি করলেই বোঝা যাবে যে প্রতি মাসেই এ সবের পিছনে কিছু না কিছু টাকা খরচ হয়েই যায়। সব সময়ে তা বাদ দেওয়াও সম্ভব হয় না।

• সব শেষে থাকবে এমন সব খরচ, যা না করলেও চলে। অথচ আমরা তা জেনেও সেগুলির পিছনে টাকা ওড়াই। যেমন, দিব্যি একটা স্মার্ট ফোনে কাজ চলে যাচ্ছিল। অথচ যেমনই বাজারে একটা নতুন ফোন এল, আমরাও তা কিনলাম। খাতায় লিখুন, এ সবের জন্য কত টাকা খরচ হচ্ছে।

এ ভাবে যদি প্রতি মাসে হিসেব করা যায়, তা হলে দেখা যাবে খরচের তালিকাটা বেশ ভালই লম্বা। এ বার দেখতে হবে, এগুলির থেকে কোনটা বাদ দেওয়া সম্ভব। সেগুলি প্রথমেই ছেঁটে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। আদর্শ আর্থিক পরিকল্পনা হল খরচকে (লগ্নি বাদে) আয়ের ৫০ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখতে পারা। সব সময়ে তা সম্ভব নয়। কিন্তু চেষ্টা করতে হবে।

উদাহরণ

সংসার খরচ দেন মূলত সৌরভের বাবা। তাঁকে আলাদা করে কিছু দিতে হয় না। কিন্তু খরচের হিসেব করার সময়ে সেই পুরোটাই লিখতে হবে—

তাঁর ব্যক্তিগত খরচ মাসে প্রায় ১০,০০০ টাকা (একটু বেশি ধরলে)।

সংসার খরচ প্রায় ২০,০০০ টাকা।

এর বাইরে ওষুধ, ডাক্তার, উৎসব অনুষ্ঠানে মাস গেলে প্রায় আরও ৫,০০০ টাকা লাগে।

অর্থাৎ, সব মিলিয়ে মাসে খরচ ৩৫,০০০ টাকা।

এ ছাড়াও বছরে প্রায় ২৫,০০০-৩০,০০০ টাকা অন্যান্য খরচ লাগে।

পরিবারের সুরক্ষা

আমরা অনেকেই বিমা করি পরবর্তী জীবনে টাকা হাতে আসবে ভেবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞেরা বলেন, বিমা আসলে ঝুঁকির সুরক্ষা। তাই লগ্নির সঙ্গে এক পংক্তিতে একে রাখা যাবে না। বরং কোনও লগ্নির পথে হাঁটার আগে প্রথমেই ব্যবস্থা করতে হবে স্বাস্থ্য বিমার। আর ঘাড়ে সংসারের দায়িত্ব এলে করতে হবে জীবন বিমা।

উদাহরণ

বিশেষজ্ঞের মতে, সৌরভের এখনই জীবন বিমা করার প্রয়োজন নেই। কারণ, সৌরভের উপরে আর্থিক ভাবে কেউ নির্ভরশীল নন। বরং জোর দিতে হবে নিজের স্বাস্থ্য বিমা করানোয়।

যখন সংসারের পুরো দায়িত্ব ঘাড়ে আসবে, তখনই একমাত্র তাঁকে জীবন বিমা করার কথা ভাবতে হবে।

লগ্নির পথে

খাতার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে ভাবলে ভুল হবে। এ বারই আসল কাজ। তা হল নিজের লগ্নিকে গুছিয়ে তোলা। ঠিক যে ভাবে বাগানে ফুল ফোটানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে হয়, তেমনই লগ্নির ঝাঁপিতে সঞ্চয়ের ফুল ফোটাতে মনোযোগ দিতে হবে। এ জন্য—

• প্রথমে লিখতে হবে নিজের লক্ষ্য। সাধারণত, স্বল্প মেয়াদি লক্ষ্যগুলির জন্য হাতে ১-৩ বছর সময় থাকে। এ ভাবেই ৩-৮ বছর হল মাঝারি। আর ৮ বছরের বেশি সময় হাতে থাকলে, তা হল দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য।

• এ বার দেখতে হবে কোন লক্ষ্যের জন্য কোন প্রকল্প জরুরি। যেমন, স্বল্প মেয়াদি লক্ষ্যের জন্য কম ঝুঁকির প্রকল্প ভাল। আবার বেশি দিন ধরে লগ্নি ধরে রাখতে পারলে বাছা যায় শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডের মতো তুলনায় বেশি ঝুঁকির প্রকল্প।

• এই ভাবে প্রত্যেকটি লক্ষ্য আলাদা করে নিয়ে সেগুলির জন্য বাছতে হবে প্রকল্প এবং সেই অনুসারে নিয়ম করে টাকা রেখে যেতে হবে।

• লিখতে হবে লগ্নির হিসেব। তা এককালীন হতে পারে। আবার নিয়মিতও হতে পারে। যেমন, স্বাস্থ্য বিমা ও জীবন বিমার প্রিমিয়াম, গাড়ি ও বাড়ি বিমার টাকা, এসআইপির হিসেব, রেকারিংয়ের খরচ ইত্যাদি। আবার বছরের কোনও সময়ে শেয়ারে টাকা ঢাললে, সেই মাসের তালিকায় তুলে রাখতে হবে তা-ও। এ ছাড়া, কোনও ঋণের কিস্তি থাকলে, তার কথাও ভুললে চলবে না।

উদাহরণ

সৌরভের ক্ষেত্রে এখন মন দিতে হবে তহবিল তৈরিতে। যেহেতু তাঁর বয়স কম, তাই এ জন্য কিছুটা হলেও ঝুঁকি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞ। তাঁর মাস গেলে হাতে প্রায় ২০,০০০ টাকা থাকে। স্বাস্থ্য বিমা করার পরে সেই টাকা ভাগ করে রাখতে হবে বিভিন্ন ইকুইটি ফান্ডে। কম ঝুঁকি নিতে চাইলে লগ্নি থাকতে হবে পিপিএফ, ডেট ফান্ডে।

ধরুন, তিনি মাসে ১০,০০০ টাকা রেখেছেন ফান্ডে। আর বাকি ৫,০০০ টাকা পিপিএফ এবং ডেট ফান্ডে। এ বার খাতায় লগ্নির হিসেবের পাশেই সঞ্চয় প্রকল্পের নাম, কবে শুরু, মাসে কত টাকা— তা লিখে রাখতে হবে। কোথাও এককালীন টাকা দিয়ে থাকলে, লিখতে হবে তা-ও। কোন প্রকল্পের টাকা কীসের জন্য রাখা হচ্ছে, হিসেবের পাশে সেটা লিখতে ভুললেও চলবে না।

বাবার লগ্নির কথা এখানে আলাদা করে বলা হল না। বরং তাঁর হাতে মাস গেলে যে টাকা থাকে, সেটা দিয়ে আপৎকালের তহবিল গড়ে তোলার কথা ভাবতে হবে। যাতে হঠাৎ হাসপাতালে ভর্তির মতো ক্ষেত্রে টাকার অভাব না হয়।

বাঁচাতে হবে করও

লগ্নি যেমন নিয়ম করে করতে হবে, তেমনই মন দিতে হবে কর বাঁচাতেও। যাতে আর একটু বেশি টাকা আসে হাতে। যেমন—

• পিপিএফে নির্দিষ্ট অঙ্ক পর্যন্ত লগ্নি, সুদ এবং মেয়াদ শেষে হাতে আসা টাকার পুরোটাই করমুক্ত।

• আবার কোনও কোনও স্থায়ী আমানত রয়েছে, যেখানে বছরে নির্দিষ্ট অঙ্কের জমা টাকা করমুক্ত। কিন্তু সুদে কর দিতে হয়।

• কিছু প্রকল্পে নির্দিষ্ট সময় লগ্নি পর্যন্ত ধরে রাখলে, পরবর্তীকালে তা তুলে নিলে হাতে আসা টাকায় করছাড় মেলে। যেমন, শেয়ার, ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট প্রভৃতি।

• বাড়ি ও সোনার মতো সম্পদ বিক্রি করে হওয়া মুনাফাতেও কর বাঁচানোর সুযোগ রয়েছে। লগ্নি পরিকল্পনার সময় মাথায় রাখতে হবে সে কথাও।

• তবে মনে রাখতে হবে কর বাঁচানো আর্থিক পরিকল্পনার অন্যতম অঙ্গ। কিন্তু সেটাই একমাত্র লক্ষ্য নয়। বরং যখন এমনিতেই করের আওতায় পড়ছেন না, তখন সেই সুযোগে সম্পদ বাড়ানোর দিকে মন দিতে পারেন।

উদাহরণ

এই বছর থেকে আয়করের নিয়ম অনুসারে বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ে পুরো করেই ছাড় (রিবেট) মিলবে। অর্থাৎ সৌরভ করের আওতায় এমনিতেই আসবেন না। কারণ মাসে ৩০,০০০ টাকা রোজগার মানে বছরে ৩.৬০ লক্ষ পান তিনি। তাই তাঁর মূল লক্ষ্য কর বাঁচানো নয়।

কিন্তু ঝুঁকি কমাতে পিপিএফের কথা বলা হয়েছে আগেই। রয়েছে পিএফও। এগুলিতে নির্দিষ্ট অঙ্ক পর্যন্ত টাকা ঢাললে করছাড় মেলে। তাই পরে বেতন বাড়লে এমনিতেই কর বাঁচানোয় তা কাজে লাগবে।

সম্পত্তি বণ্টন

কষ্ট করে রোজগার করা সম্পত্তি নিয়ে সন্তান বা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বিবাদ হোক, তা কে-ই বা চায়! অথচ সেটা আটকানোর জন্য যে আর্থিক পরিকল্পনার মধ্যেই উইলের কথা ভাবতে হয় তা আমরা ভুলে যাই। অনেকেই ভাবি, আমার আর কতটুকু সম্পত্তি! তার জন্য উইল করার দরকার কী? কিন্তু কাগজে-টিভিতে আমরা অনেক সময়েই দেখি যে সন্তানকে কষ্ট করে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়েছেন, সেই ছেলেমেয়ে বাবা-মাকে দেখছেন না। চাইছেন সম্পত্তি লিখে দেওয়া হোক। তাই বয়স হলে নিজের অধিকার রক্ষার জন্যও উইল করা জরুরি। এ জন্য উকিলের পরামর্শ নিয়ে তৈরি হতে হবে আগে থেকেই।

উদাহরণ

সৌরভ একনও বিয়ে করেননি। তাঁর বাবা-মা রয়েছেন। এখনও নিজের সেই অর্থে কোনও সম্পদ তৈরি হয়নি। তাই এ কথা মনে হতেই পারে যে উইল বা দানপত্রের কথা এখন ভাবব কেন। তা না ভাবলেও, লগ্নির সময়ে নমিনির নাম যাতে ঠিক থাকে সেটা মাথায় রাখতে হবে। কারণ, ঝামেলা এড়িয়ে পছন্দের মানুষকে সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে যাওয়ার সেটাও ভাল উপায়। সেই কারণে যে লগ্নিই করা হোক না কেন, প্রথম থেকেই নমিনি করা বাধ্যতামূলক। আবার বিয়ের পরে সেই নমিনির নাম পাল্টানোর কথা ভুললে চলবে না।

বরং তাঁর বাবাকে ভাবতে হবে কী ভাবে উইল করবেন, সেই কথা।

শেষপাত

আর্থিক পরিকল্পনার কী, কী ভাবে করব— এই বিষয়গুলি জানা হয়ে গেলে এ বার কাজ হল লগ্নিতে নেমে পড়া। তা হলে আর দেরি কেন? নতুন বছর শুরু হয়েছে। নতুন অর্থবর্ষও চালু হয়েছে। শুধু কোমর বেঁধে লগ্নি শুরু করলেই হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Investment Policy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE