বিনিয়োগের খরা কাটাতে এ বার শিল্পের জমির দাম কমানোর দাবি উঠল শাসক দলের অন্দরেই।
রাজ্যের উত্পাদন শিল্পের একমাত্র ‘শো-কেস’ অঞ্চল হলদিয়ার শিল্প তালুকে জমির ‘অবাস্তব’ দাম কমানোর আর্জি জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ। শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রকে এই অনুরোধ করেছেন পর্ষদের চেয়ারম্যান তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘জমির এই আকাশছোঁয়া দামের কথা খোদ শিল্পমন্ত্রীই জানতেন না। বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দর ঠিক করার কথা বলেছি। অমিতবাবু বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।’’ তবে এ নিয়ে অমিত মিত্রের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। ফোন বা এসএমএস-এর উত্তর দেননি তিনি।
প্রায় ৩০৭ একর জমি জুড়ে হলদিয়া শিল্প তালুক। একর প্রতি ১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা দাম ধার্য করেছে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম। এই তালুকে এখনও পর্যন্ত কোন সংস্থা জমি কেনেনি। শোভারামপুর, দেভোগ ও তেঁতুলবেড়ে মৌজার জমি নিয়ে তৈরি হয়েছে তালুকটি।
শিল্পমহলের অভিযোগ, বাজার দরের তুলনায় সরকার অনেক চড়া দর হাঁকছে। একটি সংস্থা ওই তালুকেরই এক মৌজায় বেসরকারি মালিকের থেকে একরে ৫ লক্ষ টাকার কাছাকাছি দরে জমি কিনেছে। জমির মূল্যায়ন করে সেই দাম ঠিক করেছে রাজ্যই। বাজার দর অনুযায়ী, শোভারামপুরে পাঁচ একর কিনতে ২৬ লক্ষ লেগেছে। অর্থাৎ রাজ্য সরকারেরই নির্ধারিত এই দরের চেয়ে তালুকের জমির দাম কুড়ি গুণ বেশি। লগ্নিকারীদের প্রশ্ন, এই পরিস্থিতিতে সরকারি শিল্প তালুকে এক কোটির বেশি দিয়ে জমি কেনার মধ্যে যুক্তি কোথায়?
নিগমের অবশ্য পাল্টা দাবি, জল, বিদ্যুত্, নিকাশি, রাস্তা-সহ যাবতীয় পরিকাঠামো শিল্প তালুকে তৈরি। সেই জন্যই বাড়তি টাকা ধরা হয়েছে। তবে নিগমের এই সাফাই মানতে নারাজ শিল্পমহল। তাদের মতে, পরিকাঠামোর জন্য একরে জমির দাম ৫ লক্ষের বদলে ১৫ লক্ষ হতে পারে। কিন্তু ১ কোটি টাকার বেশি দর নেওয়া অযৌক্তিক বলে তাদের অভিযোগ।
সম্প্রতি মালদহে ফুড পার্কের জমির দাম দেড় কোটি থেকে ৪৫ লক্ষে নামিয়ে আনা হয়েছে। শিল্পমন্ত্রীর সাফাই, জমির চড়া দামের জন্য লগ্নিকারীদের ব্যাঙ্ক ঋণ পেতে অসুবিধা হচ্ছে। সেই বাধা কাটাতেই এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের। সরকারি এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক বলে মেনে নিলেও শিল্পমহল মনে করছে আদতে সরকার মেনে নিয়েছে যে রাজ্যে লগ্নি আসছে না।
এই সিদ্ধান্তকেই নজির ধরে এগোতে চাইছে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ। হলদিয়া শিল্প তালুকের জমি নিগমকে দিয়েছে পর্ষদ। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের আশায় জমির জন্য দামও নিগমের থেকে নেওয়া হয়নি বলে পর্ষদ সূত্রের খবর। কিন্তু স্বপ্ন অধরাই। একটি লগ্নিও আসেনি তালুকে।
জমির দাম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সরকারি মহলেও। শিল্প দফতর সূত্রের খবর, প্রথমে হলদিয়া শিল্প তালুকে জমির দর একরে ৫০-৬০ লক্ষ টাকা ধরা হয়েছিল। কিন্তু নিগমের বোর্ডের বৈঠকে তা এক লাফে বাড়িয়ে ১ কোটি ২৬ লক্ষ ঠিক হয়। আর এই ‘অবাস্তব’ দামের কারণেই পিছিয়ে যান আগ্রহী লগ্নিকারীরা। শুভেন্দুবাবুর অভিযোগ, রাজ্যের এক সংস্থা তালুকে সিমেন্ট কারখানা গড়তে চাইলেও দাম বাধা হচ্ছে। তবে সামগ্রিক বিনিয়োগ-পরিবেশের অভাবও লগ্নির খরার জন্য দায়ী বলে মত বণিকসভার এক কর্তার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy