Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বছরে সাশ্রয় ২৭ কোটি

বণ্টন সংস্থার বিদ্যুৎ কিনে খরচ বাঁচাবে ইস্টার্ন কোলফিল্ডস

‘লক্ষ্মী’ এল ঘরে। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে বছরে ২৭ কোটি টাকা বাঁচাবে ইস্টার্ন কোলফিল্ডস (ইসিএল)। আবার, কয়লা উত্তোলনকারী এই সরকারি সংস্থাকে বিদ্যুৎ বেচে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আয় করবে বণ্টন সংস্থা।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৫ ০৩:১৬
Share: Save:

‘লক্ষ্মী’ এল ঘরে।

রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে বছরে ২৭ কোটি টাকা বাঁচাবে ইস্টার্ন কোলফিল্ডস (ইসিএল)। আবার, কয়লা উত্তোলনকারী এই সরকারি সংস্থাকে বিদ্যুৎ বেচে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আয় করবে বণ্টন সংস্থা। কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই সরকারি সংস্থার মধ্যে এই চুক্তিতে লাভবান হবে দু’পক্ষই। দুই সংস্থার কর্তারাই তাই একে বলছেন, ‘‘লক্ষী এল ঘরে।’’

কোল ইন্ডিয়ার সহযোগী সংস্থা ইসিএল এত দিন তাদের চাহিদার বেশির ভাগ বিদ্যুৎই কিনত আসানসোলের একটি বেসরকারি তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে। খনি চালাতে সামান্য পরিমাণ বিদ্যুৎ কেনা হত ডিভিসি এবং বণ্টন সংস্থার কাছ থেকে। কোল ইন্ডিয়ার এক কর্তা জানান, ওই বেসরকারি সংস্থার বিদ্যুতের মান ও দাম নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না ইসিএল কর্তৃপক্ষ। যে-কারণে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবছিলেন। আর সেই সূত্র ধরেই এই চুক্তি।

ইসিএলের এক কর্তা নীলাদ্রি রায় বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ কিনতে বেশি টাকা গুনাগার দিতে হচ্ছে বুঝতে পেরেই বণ্টন সংস্থার থেকে কেনার কথা ভাবতে শুরু করি।’’ সংস্থা সূত্রে খবর, ইউনিট পিছু বিদ্যুতের দাম কত হবে, তা নিয়ে দর কষাকষির পরে দু’পক্ষই নিজেদের লাভের কথা বিবেচনা করে সমঝোতায় আসে। চুক্তি অনুযায়ী, এ বার থেকে ইসিএলের খনি চালানোর পুরো চাহিদাই মেটাবে বণ্টন সংস্থা। এক কর্তার কথায়, ‘‘বণ্টন সংস্থা যেমন এত বড় গ্রাহক হাতছাড়া করতে চায়নি, তেমনই ইসিএল-ও অর্থ সাশ্রয় করতে মরিয়া ছিল।’’

নীলাদ্রিবাবুর কথায়, ‘‘চুক্তির পরে দেখছি, আগের তুলনায় গড়ে ইউনিট পিছু ১৩ পয়সা করে কম দাম দিতে হবে আমাদের। এতে বছরে ২৭ কোটি টাকা বাঁচবে। তাই আমরা বণ্টন সংস্থার সঙ্গেই চুক্তি করেছি।’’ বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘ইসিএলের মতো গ্রাহক পাওয়া মানে বর্ধমান জেলা থেকে আমাদের বছরে রাজস্ব আদায় এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়বে।’’ সেটা কত? বন্টন সংস্থার সূত্রে খবর, শুধু ইসিএলকে বিদ্যুৎ বেচে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আসবে বলে ধারণা। নিগমের দাবি, ‘‘ভাল মানের বিদ্যুৎ পাওয়ার আশায় ওই অঞ্চলের আরও কিছু সংস্থা আমাদের থেকে বিদ্যুৎ কিনবে বলে যোগাযোগ করেছে।’’

চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনবে ইসিএল। বর্ধমান ও পুরুলিয়া মিলিয়ে তাদের ১২৪টি কেন্দ্রে সরবরাহ করা হবে। সংস্থার ওই কর্তা জানান, চুক্তির পরে রাধামাধবপুর, সেন্ট্রাল হাসপাতাল (কালা), বারবনডিয়া, মনোহরবহাল, রায়চক হাউস ও দামড়া কোলিয়ারিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দিয়েছে বণ্টন সংস্থা। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ জোগাতে কিছু নতুন সাব-স্টেশন ও ট্রান্সফর্মার বসাতে হবে বলে জানান বন্টন সংস্থার এক কর্তা।

এখন রাজ্যের যে-অঞ্চলগুলি থেকে বণ্টন সংস্থার সবচেয়ে বেশি লোকসান হয়, তার অন্যতম বর্ধমান জেলার আসানসোল। বিদ্যুৎ চুরি-সহ নানা কারণে সেখানে রাজস্ব আদায়ও কম। ফলে ইসিএলের মতো গ্রাহক পেয়ে খুশি রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, ইসিএলকে কম দামে বিদ্যুৎ দিতে হলেও টাকা পেতে সমস্যা হবে না। বণ্টন সংস্থার দাবি, বর্ধমান অঞ্চলে গ়ড়ে প্রতিদিন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। নতুন চুক্তির ফলে সেখানে সংস্থার চাহিদা ২০% বাড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE