Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বাজার থেকে বিদেশি সংস্থার লগ্নি ফিরে যাওয়ার ভয় কাটছে

অবশেষে মাটি ভিজেছে। স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মনে, শেয়ার বাজারে। কম বর্ষণের ভয়ও খানিকটা কেটেছে। আবার আশা জাগছে অর্থনীতির হাল ফেরার। গত সোমবার এই কলমে আমরা আলোচনা করেছিলাম অর্থনীতির জন্য কয়েকটি শুভ ইঙ্গিত নিয়ে। সেগুলিতে ভর করেই সূচক উঠেছে গোটা সপ্তাহ ধরে।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০৩:০৫
Share: Save:

অবশেষে মাটি ভিজেছে। স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মনে, শেয়ার বাজারে। কম বর্ষণের ভয়ও খানিকটা কেটেছে। আবার আশা জাগছে অর্থনীতির হাল ফেরার।

গত সোমবার এই কলমে আমরা আলোচনা করেছিলাম অর্থনীতির জন্য কয়েকটি শুভ ইঙ্গিত নিয়ে। সেগুলিতে ভর করেই সূচক উঠেছে গোটা সপ্তাহ ধরে। সেনসেক্স আবার পার করেছে ২৭ হাজারের বাধা। নিফটি উঠে এসেছে ৮,০০০-এর উপরে। বর্ষা পৌঁছে গিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। জুন মাসে এখনও পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে গড় বর্ষণের ১০ থেকে ১৩ শতাংশ বেশি। শস্য বপন শুরু হয়েছে দেশের বহু অঞ্চলে। আশা জাগছে মানুষের মনে।

পাশাপাশি, বাজারকে শক্তি জুগিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখনই সুদ না-বাড়ানোর সিদ্ধান্ত। ফলে ভারত থেকে বিদেশি আর্থিক সংস্থার লগ্নি ফিরে যাওয়ার ভয় আপাতত কমেছে। এর জেরে শেয়ার বাজারের পাশাপাশি চাঙ্গা হয়েছে বন্ড বাজারও। বেড়েছে ডলারের তুলনায় টাকার দাম।

আবহাওয়া সম্পর্কে আগাম পূর্বাভাস প্রাথমিক ভাবে অক্ষরে অক্ষরে না-মেলায় সবাই খুশি। ফসল ভাল হলে দাম বাড়ার প্রবণতা কমবে। ফলে সুদ আরও কমার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে। ফসল ভাল হলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা থাকবে। গ্রামে বজায় থাকবে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের চাহিদা। সব মিলিয়ে ভাল লাগার পরিবেশ আবার তৈরি হচ্ছে।

মনে করা হচ্ছে, চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় অর্ধে সংস্থাগুলি ভাল ফল প্রকাশ করবে। এগিয়ে যাওয়ার জন্য পিছন দিক থেকে হাওয়া (টেল উইন্ড) বইতে থাকবে। তবে বহির্বিশ্ব থেকে বিপরীতমুখী হাওয়া (হেড উইন্ড) হয়তো বাজারকে তেমন উচ্চতায় উঠতে দেবে না। এই কারণে জার্মানির সংস্থা ডয়েশ ব্রোকারেজ বছর শেষে সেনসেক্সের লক্ষ্যমাত্রা ৩৩,০০০ থেকে ৩১,০০০ অঙ্কে নামিয়ে এনেছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ২৭,০০০ থেকে ৩১,০০০-এ ওঠার অর্থ প্রায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি। খুব মন্দ নয়। একটু বড় মেয়াদে বাজার সম্পর্কে অনেকেই বেশ আশাবাদী। এই কারণে মাঝারি মাপের পতনে ভাল শেয়ারে লগ্নি করার পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকেই। পাশাপাশি একই ভাবে লগ্নি করা যেতে পারে সুবিন্যস্ত ভাল মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পেও।

প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ভারতের বৃহত্তম সংস্থাগত লগ্নিকারী জীবন বিমা নিগম চলতি আর্থিক বছরে সরকারি ঋণপত্রে লগ্নির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে ১.৭ লক্ষ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় ১৫,০০০ কোটি টাকা (১৬ শতাংশ) বেশি। ৫৫,০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত লগ্নি
করা হতে পারে ইকুইটিতে। তথ্যটি বন্ড এবং শেয়ার বাজার উভয় ক্ষেত্রের জন্যই বেশ শুভ।

১ : ১ অনুপাতে বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে ইনফোসিস। কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা নিজেদের ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে দেখে নিতে পারেন বোনাস শেয়ার জমা পড়ল কি না। গত এক বছরের মধ্যে এই নিয়ে ১ : ১ অনুপাতে দু’বার বোনাস শেয়ার ইস্যু করল দেশের অগ্রণী এই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। বোনাস শেয়ার ইস্যু করার পরে সংস্থার শেয়ারের বাজার দর নেমে এসেছে ১,০০০ টাকার আশেপাশে। ফলে ছোট লগ্নিকারীদের সুবিধা হবে এই শেয়ার কিনতে।

শুরু হয়ে গিয়েছে ডিভিডেন্ডের মরসুম। মরসুমের একদম গোড়ায় ডিভিডেন্ড প্রদান করবে ইনফোসিস, রিলায়্যান্স এবং টিসিএস। অক্টোবরের মধ্যে মোটামুটি শেষ হবে ডিভিডেন্ড বণ্টন। ফলাফল তেমন ভাল না-হওয়ায় ডিভিডেন্ড কমাতে পারে একগুচ্ছ কোম্পানি। করমুক্ত হওয়ায় লগ্নিকারীদের কাছে ডিভিডেন্ড একটি অতি পছন্দসই আয়। সময় মতো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে দেখে নিতে হবে সব ডিভিডেন্ড জমা পড়ল কি না।

করমুক্ত বন্ড বাজারে আসতে দেরি হওয়ায় উঁচু আয়ের মানুষেরা অতীতে ইস্যু করা করমুক্ত বন্ড বাজার থেকে কেনার দিকে ঝুঁকেছেন। বাজার থেকে কেনা বন্ডে এখন আয় দাঁড়াচ্ছে ৭.২৫ শতাংশ থেকে ৭.৫০ শতাংশ, যা করমুক্ত ১০.৭১ শতাংশের সমান। ব্যাঙ্ক আমানতে সুদ আরও কমলে বাড়তে পারে এই বন্ডের বাজার দর। কর সাশ্রয়ের জন্য যাঁদের লগ্নি করতে হবে, তাঁরা মার্চ মাসের জন্য বসে
না-থেকে, ঝুঁকে পড়া বাজারের সুযোগ নিয়ে একটু একটু করে ইএলএসএস প্রকল্পে লগ্নি করতে পারেন। যাঁরা এখনও পিপিএফ অ্যাকাউন্টে ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষের জন্য টাকা জমা করেননি, তাঁরা এক বা একাধিক কিস্তিতে অনধিক ১.৫ লক্ষ টাকা জমা করতে পারেন।

গত সপ্তাহে শেয়ার বাজার খানিকটা চাঙ্গা হয়েছে। যে-কারণে বাজারে নথিবদ্ধ মোট শেয়ারের দাম অর্থাৎ ‘মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন’ আবার ছাড়িয়ে গিয়েছে ১০০ লক্ষ কোটি টাকার গণ্ডি। শেয়ার বাজার সম্পর্কে এই ধরনেরই কিছু পরিসংখ্যান দেওয়া হল সঙ্গের সারণিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE