Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
ভাঁড়ার ভাগের কমিটি এক সপ্তাহেই

ছোট্ট বদলে বাড়তি ঋণ ৩ লক্ষ কোটি

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে থাকা ‘কুবেরের ধন’ ভাগবাটোয়ারার বিষয়টি পর্যালোচনা করতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত সোমবারই নিয়েছিল শীর্ষ ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদ। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ও পিটিআইয়ের খবর অনুযায়ী, ওই কমিটি তৈরি হবে দ্রুত।

সংবাদ স‌ংস্থা 
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:২৬
Share: Save:

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে থাকা ‘কুবেরের ধন’ ভাগবাটোয়ারার বিষয়টি পর্যালোচনা করতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত সোমবারই নিয়েছিল শীর্ষ ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদ। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ও পিটিআইয়ের খবর অনুযায়ী, ওই কমিটি তৈরি হবে দ্রুত। সম্ভবত এক সপ্তাহের মধ্যে। ছোট-মাঝারি শিল্পকে সুরাহা দিতে ২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ধার ঢেলে সাজা সমেত যে সমস্ত ভাবনাচিন্তার কথা শোনা গিয়েছিল, সেগুলিও ঘোষণা হতে পারে খুব তাড়াতাড়ি। আর ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের জন্য যে টাকা বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে তুলে রাখতে হয়, তার একটি অংশের সংস্থান করতে শীর্ষ ব্যাঙ্ক বাড়তি এক বছর সময় দেওয়ায়, বাজারে ২.৫ থেকে ৩ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত ধারের জোগান বাড়তে পারে বলে খবর সংবাদ সংস্থার।

ডিভিডেন্ড হিসেবে মুনাফার ভাগ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তো দিল্লিকে দেয়ই। কেন্দ্রের দাবি, তার সঙ্গে শীর্ষ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে থাকা বিপুল ‘টাকাকড়ির’ (৯.৬ লক্ষ কোটি টাকা) একটি অংশও আসা উচিত সরকারি কোষাগারে। ডলার, সোনা ইত্যাদি মিলিয়ে তার মোট অঙ্ক শীর্ষ ব্যাঙ্কের মোট সম্পদের প্রায় ২৬%-২৭%। অথচ বাকি দুনিয়া মানে যে, তা ১৬%-১৭% থাকাই যথেষ্ট। এই যুক্তিতে বৈঠকে বোর্ডের স্বাধীন সদস্য তথা সঙ্ঘের তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত এস গুরুমূর্তি-সহ ও সরকারি প্রতিনিধিদের বক্তব্য ছিল, ওই সম্পত্তির কতটা কার কাছে থাকবে, সেই নিয়ম সংশোধন করা জরুরি।

উল্টো দিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যুক্তি, ওই ভাঁড়ারের দিকে হাত না বাড়ানোই ভাল। কারণ, অর্থনীতির উপরে আসা ঝড়ঝাপ্টা সামাল দিতে শীর্ষ ব্যাঙ্কের আর্থিক ভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী থাকা জরুরি। এই দু’য়ের মধ্যপন্থা হিসেবে ঠিক হয় যে, ভাঁড়ার ভাগাভাগির যুক্তিগ্রাহ্যতা সমেত সমস্ত দিক খতিয়ে দেখতে তৈরি হবে বিশেষজ্ঞ কমিটি। যার সদস্য নির্বাচন এবং অন্যান্য শর্ত ঠিক করার ভার যৌথ ভাবে বর্তাবে কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপরে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে দাবি, ওই সমস্ত বিষয় ঠিক হবে মূলত অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেলের তত্ত্বাবধানে।

এ ছাড়া, সরকারের দাবি ছিল, অনাদায়ি ঋণের সমস্যার কারণে এই মুহূর্তে ছোট-মাঝারি শিল্পের অন্যতম সঙ্কট পর্যাপ্ত ঋণ না পাওয়া। একে নোটবন্দি এবং তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর জোড়া ধাক্কায় এই শিল্প কাবু। তার উপরে এই ক্ষেত্রে যুক্তদের এক বড় অংশ বিজেপির ‘বিশ্বস্ত’ ভোট ব্যাঙ্ক। তাই ভোটের মুখে তাঁদের ক্ষোভ প্রশমনে মরিয়া কেন্দ্রের পাখির চোখ যে কোনও মূল্যে এই শিল্পের জন্য পর্যাপ্ত ঋণের বন্দোবস্ত।

এই অবস্থায় কেন্দ্রের দাবি ছিল, বাসেল-৩ বিধি অনুযায়ী ক্যাপিটাল অ্যাডিকোয়েসি রেশিও (প্রতি ১০০ টাকা ধার দিতে যত টাকা মূলধন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে ঘরে রাখতে হয়) বড়জোর ৮% থাকলেই চলে। কিন্তু এ দেশে তা ৯%। ফলে বাড়তি টাকা আটকে থাকায় ধার দিতে পারছে না বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি। উল্টো দিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যুক্তি, এমন কৃত্রিম ভাবে ধার বাড়ালে আখেরে বেশি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বে কর্পোরেট সংস্থাগুলিই। শেষমেশ বৈঠকে বোর্ডের পরামর্শ ছিল, আপাতত ক্যাপিটাল অ্যাডিকোয়েসি রেশিও ৯ শতাংশই থাকুক। কিন্তু তেমনই ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের জন্য যে টাকা ব্যাঙ্কগুলিকে তুলে রাখতে হয় (ক্যাপিটাল কনজ়ার্ভেশন বাফার বা সিসিবি), তার একটি অংশের সংস্থান করতে এক বছর সময় বাড়তি দেওয়া হোক ব্যাঙ্কগুলিকে।

এখন এই সিসিবি ১.৮৭৫%। আরও ০.৬২৫% তুলে রাখার কথা ছিল ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে। এখন ২০২০ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে তা জমা দিলেই চলবে।

কেন্দ্রের দাবি, শুধু ওই সূত্রেই বাড়তি ২.৫ থেকে ৩ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের জোগান বাড়তে পারে বাজারে। শুধু তা-ই নয়। এর দৌলতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তি মূলধনের খোঁজেও হন্যে হতে হবে না এখনই।

এই ‘সাফল্যের কৃতিত্ব’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অর্থমন্ত্রী ও গুরুমূর্তিকে দিতে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছে স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। তাদের দাবি, ছোট শিল্পের স্বার্থে এই জয় কার্যত ছিনিয়ে এনেছেন তাঁরা। কিন্তু উল্টো দিকে, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের অভিযোগ, নোটবন্দি ও তড়িঘড়ি জিএসটি মারফত ছোট শিল্পকে ‘ভাতে মেরে’ এখন ত্রাণ না জোগানোর জন্য শীর্ষ ব্যাঙ্ককে দুষছে কেন্দ্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

RBI Tax
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE