Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
পিছোতে পিছোতে কি নেহরু জমানায়!

মোদীর হার ঢাকতে ঢাল বাজপেয়ীও

অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ইতিমধ্যেই ব্লগে লিখেছেন, ‘‘বাজপেয়ী সরকার ২০০৪ সালে ৮% বৃদ্ধি ঘরে তুলে বিদায় নিয়েছিল। তার উপরে ১৯৯১ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত ধাপে ধাপে হওয়া সংস্কারের সুফল তার পরের সরকার পেয়েছে।’’ আর সরকারের প্রিন্সিপাল আর্থিক উপদেষ্টা সঞ্জীব স্যান্যালের যুক্তি, ‘‘সংস্কারের সুফল মিলতে কয়েক বছর লেগেই যায়।’’

ক্রমশ পিছিয়ে: চার প্রধানমন্ত্রী। মোদী, মনমোহন, বাজপেয়ী এবং নেহরু।

ক্রমশ পিছিয়ে: চার প্রধানমন্ত্রী। মোদী, মনমোহন, বাজপেয়ী এবং নেহরু।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৮ ০২:০১
Share: Save:

বৃদ্ধি মাপার নতুন ফিতে চালু করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তাতেও তিনি মনমোহন সিংহের কাছে গোহারা বলে কটাক্ষ করছে কংগ্রেস। সেই অস্বস্তি ঢাকতে এ বার সদ্য প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর নামও তরজায় টেনে আনল মোদী সরকার। দাবি করল, মনমোহন জমানায় বৃদ্ধির রমরমা আসলে তাঁর পূর্বসূরির আমলে হওয়া সংস্কারের হাত ধরে।

কিন্তু তাতেও উঠতে শুরু করেছে পাল্টা প্রশ্ন। অনেকেরই জিজ্ঞাসা, এত দিন তো মনমোহন জমানার কৃতিত্ব অস্বীকার করতে ওই পরিসংখ্যানকেই সরকারি ভাবে স্বীকৃত নয় বলে দাবি করছিল কেন্দ্র। এ বার কি তবে সেই কৃতিত্ব মানছে তারা? এক আর্থিক উপদেষ্টার কথায়, ‘‘মনমোহনের সাফল্যের কৃতিত্ব বাজপেয়ীকে দিতে হলে, বাজপেয়ীর অনেক সাফল্যের কৃতিত্বও নরসিংহ রাও-মনমোহনের সংস্কারকে দিতে হয়। এ ভাবে পিছোতে থাকলে তো আমরা নেহরুর আমলে পৌঁছে যাব!’’

সেই সম্ভাবনা উস্‌কে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ইতিমধ্যেই ব্লগে লিখেছেন, ‘‘বাজপেয়ী সরকার ২০০৪ সালে ৮% বৃদ্ধি ঘরে তুলে বিদায় নিয়েছিল। তার উপরে ১৯৯১ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত ধাপে ধাপে হওয়া সংস্কারের সুফল তার পরের সরকার পেয়েছে।’’ আর সরকারের প্রিন্সিপাল আর্থিক উপদেষ্টা সঞ্জীব স্যান্যালের যুক্তি, ‘‘সংস্কারের সুফল মিলতে কয়েক বছর লেগেই যায়।’’

ভোটের মুখে বৃদ্ধির তরজায় বিপাকে পড়া বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা এত দিন আর্থিক শৃঙ্খলা শিকেয় তুলে বৃদ্ধির হার চাঙ্গা করার অভিযোগ আনছিলেন মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধে। এ বার তাঁদের নতুন অস্ত্র বাজপেয়ী সরকারের ছ’বছরের সংস্কার, পরিকাঠামোয় লগ্নি। দাবি, এরই সুফল ঘরে তুলেছিল মনমোহন সরকার। জোয়ার এসেছিল বৃদ্ধিতে।

কিন্তু শুধু রাজনীতির যুক্তিতে হবে না। চাই প্রমাণও। তাই নর্থ ব্লকে আর্থিক উপদেষ্টাদের ডাক পড়েছে। খুঁজে বার করতে বলা হচ্ছে বাজপেয়ী সরকারের সংস্কারের সেই সব ফুল, যা পরে মনমোহন জমানায় ফুটেছে।

অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, বাজপেয়ী ব্যাঙ্ক, বিমা, টেলি, ফার্মা, বিমান, আবাসনের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির দরজা খোলেন। আবার শুল্ক বসিয়ে দেশীয় শিল্পের রক্ষাকবচের বন্দোবস্তও করেন। তাঁর আমলে ভ্যাট চালু হয়। আলাদা মন্ত্রক হয় বিলগ্নিকরণের জন্য। এক উপদেষ্টার যুক্তি, ওই সময়ে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনে ঘাটতির বদলে উদ্বৃত্ত ছিল। খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ছিল কম। হয়েছিল পুঁজির বাজারে সংস্কারও।

মুচকি হাসছেন মনমোহনের অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। মনে করাচ্ছেন, বাজপেয়ী জমানায় গড় বৃদ্ধি ছিল মাত্র ৫.৬%। আর কংগ্রেসের অন্য নেতারা বলছেন, ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’র ভরাডুবির কথা বিজেপি ভুলে গেল কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE