Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
মাঝারি মেয়াদে সূচক চাঙ্গা থাকার আশা

গুজরাত ভোটের দিকে তাকিয়ে বাজার

মুড়ি-মুড়কির মতো সব শেয়ার হু হু করে বাড়তে থাকা নিয়ে গত সপ্তাহে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল এই কলমে। উপযুক্ত কারণ ছাড়াই একটু বেশি উচ্চতায় উঠে গিয়েছিল শেয়ার বাজার।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০৮
Share: Save:

অবশেষে সংশোধন। আবারও প্রমাণ হল, অন্যান্য বস্তুর মতো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাজ করে শেয়ার সূচকের উপরেও। অর্থাৎ, উঠলে পড়তেও হবে।

মুড়ি-মুড়কির মতো সব শেয়ার হু হু করে বাড়তে থাকা নিয়ে গত সপ্তাহে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল এই কলমে। উপযুক্ত কারণ ছাড়াই একটু বেশি উচ্চতায় উঠে গিয়েছিল শেয়ার বাজার। বেশি উঁচু জায়গা থেকে পড়লে কিন্তু গায়েও বেশি লাগে। এই কারণে মাঝে মধ্যে সংশোধন প্রয়োজন। গত সপ্তাহে বাজার দেখেছে এই সংশোধন।

শুরু হয়েছিল পরিকাঠামো শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমার খবরে। পরে এই নিম্নচাপে গতি আনে বেশ ভাল রকম রাজকোষ ঘাটতির খবর। অক্টোবরেই যা পৌঁছে গিয়েছে সারা বছরের বাজেট লক্ষ্যমাত্রার ৯৬.১ শতাংশে। বছর শেষ হতে এখনও পাঁচ মাস বাকি। পণ্য-পরিষেবা করের (জিএসটি) কারণে সাময়িক ভাবে রাজস্ব কমা এবং সরকারি খরচ বাড়াকেই এর কারণ হিসেবে ভাবা হচ্ছে। এই ঘাটতি অর্থনীতি তথা শেয়ার বাজারের কাছে যথেষ্ট চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ঠিক আগে খবর আসে ২০১৭-র অক্টোবরে আটটি মূল পরিকাঠামো শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির হার গত বছরের ৭.১% থেকে সটান নেমে এসেছে ৪.৭ শতাংশে। জোড়া ধাক্কায় সপ্তাহের শেষ দু’দিনে সেনসেক্স নেমেছে প্রায় ৭৭০ পয়েন্ট। ফলে তা ফের চলে এসেছে ৩২ হাজারের ঘরে। প্রায় ২৪০ পয়েন্ট নামে নিফ্‌টিও। থিতু হয় ১০,১২২ অঙ্কে।

আরও পড়ুন: বৃদ্ধি কেন ৯% ছাড়াল না, প্রশ্ন

কালো মেঘের পাশাপাশি রুপোলি রেখাও দেখা গিয়েছে গত সপ্তাহেই। বৃহস্পতিবার খবর আসে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে জাতীয় আয় বা জিডিপি বেড়েছে ৬.৩% হারে। এর আগের তিন মাসে বৃদ্ধির হার নেমে গিয়েছিল ৫.৭ শতাংশে। মনে রাখতে হবে জুলাই মাসেই চালু হয়েছিল জিএসটি। সব তথ্য পাওয়া গেলে এই হার ৬.৩% থেকে আরও কিছুটা বাড়তে পারে বলে অর্থনীতিবিদদের ধারণা। সে যাই হোক, আগের পাঁচটি ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার টানা কমার পরে এ বার তা কিছুটা ওঠায় বাজারে স্বস্তি ফিরবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এখন নোট বাতিল এবং জিএসটি তড়িঘড়ি রূপায়ণের প্রতিকূল প্রভাব কেটে যাওয়ার অপেক্ষাতেই রয়েছে বাজার। গুজরাতের নির্বাচনী ফলাফল কোন দিকে যায়, তার একটি বড় প্রভাব অবশ্য থাকবে শেয়ার সূচকের উপরে।

বাজারের জন্য আর একটি ভাল খবর হল, নভেম্বরে গাড়ি বিক্রি বেশ আকর্ষণীয় হারে বৃদ্ধি। মারুতি-সুজুকির বিক্রি বেড়েছে ১৫% হারে। সংস্থাটির মোট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১,৪৫,৩০০টি গাড়ি। ভাল রকম বিক্রি বেড়েছে হুন্ডাই, মহীন্দ্রা, হোন্ডা, টাটা মোটরস, টয়োটা, ফোর্ড— অর্থাৎ প্রায় সবা সংস্থারই। এটিকে অর্থনীতির চাকা কিছুটা ঘোরার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন অনেকে।

গত সপ্তাহে শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হয়েছে ভারত-২২ ইটিএফ। সংশোধনের মুখে পড়া বাজারেও কিন্তু এই ইটিএফ নথিভুক্ত হয় ইস্যুর দামের উপরে। শুক্রবারও বাজার পড়া সত্ত্বেও, ভারত-২২ কিন্তু খুব একটা পড়েনি। এই ইটিএফের ঝুলিতে ২২টি ভাল সংস্থার শেয়ার থাকার কারণে বড় মেয়াদে এই ফান্ড ভালই করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

রিলায়্যান্স নিপ্পন মিউচুয়াল ফান্ডের সফল ইস্যুর পরে এ বার বাজারে শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এইচডিএফসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। রিলায়্যান্সের ইস্যুতে আবেদন জমা পড়েছিল নির্ধারিত শেয়ারের ৮১.৫৪ গুণ। এইচডিএফসি মিউচুয়াল ফান্ডের মোট সম্পদের পরিমাণ এখন ২.৭০ লক্ষ কোটি টাকা। এর মধ্যে শেয়ারে লগ্নির অঙ্ক প্রায় ১.২০ লক্ষ কোটি।

রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে আরও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার বিলগ্নিকরণ করতে হবে। সেগুলির ভাল দাম পেতে হলে শেয়ার বাজার চাঙ্গা থাকা জরুরি। সংস্কারের পথ থেকে যে কেন্দ্র সরছে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সরকারের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হল রাজকোষ ঘাটতি সীমার মধ্যে বেঁধে রাখা এবং মূল্যবৃদ্ধিকে মাথা তুলতে না-দেওয়া। এই দুই বিষয়ে সফল হলে এবং গুজরাত ভোটের ফল আশানুরূপ হলে, মাঝারি মেয়াদে বাজারের চাঙ্গা থাকারই কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

economy Market Gujarat Assembly Election 2017
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE