উর্জিত পটেল।
পর পর দু’বার।
ফণা তুলতে শুরু করা মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে জুঝতে জুনের পরে অগস্টের ঋণনীতিতেও সুদ বাড়াল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। অনেকে বলছেন, সে কথা আঁচ করেই সপ্তাহের শুরুতে আমানতে সুদ বাড়িয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক। সম্ভাবনা আরও বেশ কিছু ব্যাঙ্কের একই পথে হাঁটার। তবে এর পরে ব্যাঙ্কগুলি যদি ঋণেও সুদের হার বাড়ায়, তা হলে আগামী দিনে বাড়তে পারে বাড়ি, গাড়ি ও অন্যান্য ঋণের মাসিক কিস্তি।
ঋণনীতি কমিটির তিন দিনের বৈঠক শেষে বুধবার শীর্ষ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, রেপো রেট (বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি স্বল্প মেয়াদে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে যে সুদে ধার নেয়) ২৫ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে হচ্ছে ৬.৫%। একই পরিমাণ বেড়ে ৬.২৫% হল রিভার্স রেপো রেটও (বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির কাছ থেকে স্বল্প মেয়াদে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে সুদে ধার নেয়)।
গত কয়েক মাসে মূল্যবৃদ্ধি মাথা তোলায় সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা ছিলই। এ দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কথাতেও স্পষ্ট যে, এই মুহূর্তে মূল্যবৃদ্ধি চিন্তায় রেখেছে তাদের। শীর্ষ ব্যাঙ্কের মতে, মূল্যবৃদ্ধিতে যে যে বিষয় প্রভাব ফেলতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে—
• বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা।
• শিল্পের কাঁচামালের খরচ বৃদ্ধি।
• দেশ জুড়ে খাপছাড়া বর্ষা।
• খাদ্যশস্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত।
তবে এই সমস্ত আশঙ্কা সত্ত্বেও মূল্যবৃদ্ধিকে ৪ শতাংশের নির্দিষ্ট মাত্রায় (+/-২%) বেঁধে রাখতে শীর্ষ ব্যাঙ্ক বদ্ধপরিকর। জুনে খুচরোর তুলনায় বেশি হারে বেড়েছে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি। তার উপরে তেলের চড়া দামের জেরে যদি পণ্য পরিবহণের খরচ আরও বাড়ে, সে ক্ষেত্রে সমস্ত জিনিসপত্রেরই দর বাড়ার সম্ভাবনা। এই সবের কথা মাথায় রেখেই সুদ বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামের মাত্রাতিরিক্ত পতনে রাশ টানতে এ দিন মার্জিনাল স্ট্যান্ডিং ফেসিলিটিও (এমএসএফ) বাড়িয়ে ৬.৭৫% করেছে আরবিআই। উল্লেখ্য, অতি অল্প সময়ের (এমনকি এক দিন) জন্য ঋণ নেওয়ার সময়ে (সরকারি ঋণপত্র গচ্ছিত রেখে) ব্যাঙ্ককে যে হারে সুদ দিতে হয়, তাকেই বলে এমএসএফ।
তবে কেন্দ্রের আশা, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানোর প্রভাব ধীরে ধীরে কেটে যাবে। ফলে আগামী দিনে মূল্যবৃদ্ধির উপরে তার খুব একটা প্রভাব পড়বে না বলেই দাবি আর্থিক বিষয়ক সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গের।
অনেকের আবার আশঙ্কা, চাহিদায় ভর করে সংস্থাগুলি যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, তখনই এই সিদ্ধান্তে মূলধন সংগ্রহের খরচ বাড়বে। তাতে ব্যবসায় বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা। সুদ-নির্ভর আবাসন শিল্পও সে কথা জানিয়েছে।
ছোট শিল্পের জন্য: অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা ক্ষেত্রগুলিকে ঋণ দেওয়ার পথ সুগম করতে ব্যাঙ্ক ও ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে একজোটে ধার দিতে সায় দিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এতে ঝুঁকি ভাগাভাগি করে ঋণ দিতে পারবে তারা। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বন্ধন ব্যাঙ্কের কর্ণধার চন্দ্রশেখর ঘোষ।
আরও ক্ষমতা: গ্রাহকের অভিযোগ মেটাতে ব্যাঙ্কগুলির অম্বুডজ়মান ব্যবস্থা আরও জোরদার করার কথা জানাল শীর্ষ ব্যাঙ্ক। সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ নিয়ে নির্দেশিকা জারি করবে তারা।
মন্তব্যে না: আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কে পরিচালন সমস্যা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হল না শীর্ষ ব্যাঙ্ক। সামগ্রিক ভাবে ব্যাঙ্কের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হলেও, কোনও নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক নিয়ে কথা বলতে চায়নি তারা। অবশ্য সন্দীপ বক্সীকে ব্যাঙ্কটির সিওও হিসেবে নিয়োগে সায় দিয়েছে তারা।
সময় বাড়াতে কমিটি: বিদেশি মুদ্রা বাজারে লেনদেনের সময় বাড়ানো নিয়ে কথা বলতে কমিটি তৈরি করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। উল্লেখ্য, বিশ্ব বাজারের সঙ্গে ভারতীয় বাজারের যোগাযোগ ক্রমশ বাড়ায়, লেনদেনের সময় বাড়ানোর দাবি উঠছিল অনেক দিনই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy