শিক্ষা আর স্বাস্থ্যের একটা ডাকনাম রয়েছে নর্থ ব্লকে। অর্থ মন্ত্রকে কান পাতলেই শোনা যায়। তা হল, ‘সফ্ট টার্গেট’! কারণ, সবাই জানেন যে এই খাতে পর্যাপ্ত খরচ করা জরুরি। কিন্তু তবু বাজেটের অঙ্ক মেলাতে গিয়ে এদের বরাদ্দে কোপ পড়ে প্রায় প্রতি বছরই।
গরিব-মধ্যবিত্তের মন জয়ে টাকা ঢালতে হবে? তা বরাদ্দ কমবে কোথায়? অবধারিত শিক্ষা-স্বাস্থ্য থেকে। ঘাটতির হিসেব না মিললেও প্রথমে কোপে পড়বে এই দুই খাতের টাকা। বরাবর এই অলিখিত নিয়ম চলে এসেছে। মোদী সরকারও তার ব্যতিক্রম নয়। গত তিন বাজেটে স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বেড়েছে শামুকের গতিতে। সর্বশিক্ষা অভিযানের জন্য যা দরকার, মিলেছে তার তুলনায় নেহাতই সামান্য।
১ ফেব্রুয়ারির বাজেট কি ব্যতিক্রম হতে পারবে? বিভিন্ন সূত্রে ইঙ্গিত, সেই সম্ভাবনা নিতান্ত ক্ষীণ। আর্থিক সমীক্ষায় শিক্ষায় গুরুত্বের কথা, দক্ষ মানবসম্পদের প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গ তোলা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, চাষিদের দুর্দশা কাটাতে বৃদ্ধি, চাকরি, বেসরকারি লগ্নি ইত্যাদি বাড়াতে কৃষি, গ্রাম ও পরিকাঠামোয় বিপুল অঙ্ক ঢালতে হবে। প্রশ্ন হল, তার পরে আর শিক্ষা-স্বাস্থ্যে খুব বেশি খরচের সুযোগ থাকবে কি?
অঙ্কে গরমিল
• স্বাস্থ্যে বরাদ্দ হওয়া উচিত জিডিপির অন্তত ২.৫ থেকে ৫ শতাংশ। সেখানে হয় বড়জোর ১.২%। যার মধ্যে আবার কেন্দ্রের অবদান ০.২৯%। বাকিটা রাজ্যের
• শিক্ষায় খরচ হওয়া উচিত জিডিপির ৬.৫%। সেখানে হয় মেরেকেটে ৪%
চাওয়া-পাওয়া
• গত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ৪৭,৩৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন জেটলি। যা কি না ২০১১-’১২ সালের থেকেও কম
• ২০১৬-’১৭ সালে সর্বশিক্ষা অভিযানের জন্য চাওয়া হয়েছিল ৫৫ হাজার কোটি। শেষমেশ জুটেছিল ২২,৫০০ কোটি। তার এক-তৃতীয়াংশও খরচ হয়নি!
• রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানে বরাদ্দ কমছে প্রতি বছরই কাটছাঁট কেন?
• ঘাটতির লক্ষ্য মানার হাততালি কুড়োনো যায়। অথচ খরচ ছাঁটাই করা যায় কার্যত চুপিসারে
• বাকি ক্ষেত্রে বরাদ্দের পরে রাজকোষে টান পড়লে,
শিক্ষা-স্বাস্থ্যই তাই নর্থ ব্লকের ‘সফ্ট টার্গেট’
অথচ উল্টো
• উন্নত দুনিয়া কিন্তু প্রায় কখনও কার্পণ্য করে না এই খাতে টাকা দিতে
• দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির পাশাপাশি আর্থিক অসাম্য
দূর করতে এই দু’য়ে বরাদ্দ বাড়ানোর পক্ষে অর্মত্য সেন-সহ অনেক অর্থনীতিবিদ
• আর্থিক অসাম্যে উন্নত দুনিয়া তো দূর অস্ত্, ভারত পিছিয়ে প্রায় সব প্রতিবেশীর থেকেও। বিশেষজ্ঞদের মতে তাই শিক্ষা, স্বাস্থ্যে বাড়তি জোর এখন আরও জরুরি
এখন প্রশ্ন
• দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি যে জরুরি, তা বলছে আর্থিক সমীক্ষাও। বলা হয়েছে শিক্ষায় জোর দেওয়ার কথা। কিন্তু প্রশ্ন হল, তার জন্য যথেষ্ট বরাদ্দ সরকার করতে পারবে কি?
চমক অবশ্য থাকতে পারে। যেমন, সকলের জন্য স্বাস্থ্য বিমা। যাতে গরিব, নিম্ন-মধ্যবিত্তের স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামের খরচ হয়তো কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বইবে। রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনায় এত দিন বছরে ৩০ হাজার টাকার কভারেজ মিলত। গত বাজেটে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্প ঘোষণা করে তা বাড়িয়ে ১ লক্ষ করেছিলেন। এ বার ভোটের আগে জোর জল্পনা, সকলের জন্য ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমা ঘোষণা হওয়ার। যদিও প্রশ্ন উঠছে, সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় খরচ না করে, স্বাস্থ্য বিমার অঙ্ক বাড়িয়ে কার লাভ? মানুষের না কি গুটিকয়েক সংস্থার?
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (হু) মতে, স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ২.৫% থেকে ৫% খরচ হওয়া উচিত। সেখানে কেন্দ্র খরচ করে ০.২৯%। রাজ্যের খরচ যোগ করেও তা ১.২% পেরোয় না। শিক্ষার ক্ষেত্রেও ছবিটা প্রায় একই। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাই মানছেন, শিক্ষা-স্বাস্থ্যে খরচ কমালে তার ধাক্কা সহজে চোখে পড়ে না।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বহু দিন ধরেই বলছেন, অসাম্য দূর করার একমাত্র রাস্তা— শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে টাকা ঢালা। কিন্তু তাঁর কথায় আর কান দিচ্ছে কে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy