Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সফর-সঙ্গী

গাড়ি কিনবেন বলে ড্রাইভিং শিখছেন। খুঁটিয়ে মাপছেন সব মডেল। কিন্তু গাড়ির চাবির সঙ্গেই যার কাগজপত্র বুঝে নিতে হবে, সেই বিমার খুঁটিনাটি জানছেন তো? নিশ্চিন্তির ড্রাইভে এর সঙ্গ কিন্তু জরুরি। লিখছেন দেবপ্রিয় সেনগুপ্তগাড়ি কিনলে যে রক্ষাকবচ তার গায়ে না-চাপিয়ে উপায় নেই। আজ আমাদের আলোচনা একে ঘিরেই। গাড়ি কিনলে এই বিমা করানো বাধ্যতামূলক। না-হলে তা চালানোই যাবে না রাস্তায়।

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩২
Share: Save:

প্রতি দিন রাস্তায় লক্ষ লক্ষ যানবাহনের মিছিলে ছুটে বেড়াতে হয় যাকে, তার জীবনে অনশ্চিয়তা তো থাকবেই। এর একটা কারণ যদি হয় অন্য গাড়ির ধাক্কা খাওয়ার ভয়, তা হলে অন্যটা অপর কোনও গাড়ি, মানুষ বা সম্পত্তিকে ধাক্কা দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটানোর দায়। দু’ক্ষেত্রেই ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে মারাত্মক। উঠে আসতে পারে অনেক টাকা-পয়সা খরচের প্রশ্ন। আর তখনই গুরুত্ব পায় গাড়ি বিমা। গাড়ি কিনলে যে রক্ষাকবচ তার গায়ে না-চাপিয়ে উপায় নেই। আজ আমাদের আলোচনা একে ঘিরেই।

ধরন-ধারণ

প্রয়োজনের ফারাক অনুযায়ী গাড়ি বিমা দু’ধরনের। নতুন হোক বা হাতফেরতা, সব রকম গাড়ির ক্ষেত্রেই যা প্রযোজ্য। এর একটি—

থার্ড পার্টি লায়াবিলিটি কভার

গাড়ি কিনলে এই বিমা করানো বাধ্যতামূলক। না-হলে তা চালানোই যাবে না রাস্তায়। বিমা শিল্পের পরিভাষায় এটি ‘অ্যাক্ট অনলি কভার’।

কেন

আপনার গাড়ির ধাক্কায় অন্য কোনও গাড়ি, সম্পত্তির ক্ষতি হতে পারে, কেউ জখম বা কারও মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে— সে কথা মাথায় রেখেই এই বিমার জন্ম। অর্থাৎ আপনার গাড়ি যাঁর বা যে জিনিসের ক্ষতি করবে, তাঁকে বা সেই বস্তুটিকে আর্থিক সুরক্ষা দেবে এটি। বিমার দু’টি পক্ষ হল, আপনি ও বিমা সংস্থা। আর তৃতীয় পক্ষ যিনি বা যাঁর সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে। তাই এর নাম থার্ড পার্টি লায়াবিলিটি। মনে রাখবেন, আপনার গাড়ির ক্ষতি ভরা এই বিমার কাজ নয়।

কী আছে

থার্ড পার্টি লায়াবিলিটির আওতায় বিমাকারী যে সমস্ত সুবিধা পেয়ে থাকে, সেগুলি হল—

তৃতীয় পক্ষের ক্ষতিপূরণ: আপনার গাড়ির ধাক্কায় কেউ জখম হলে বা কারও মৃত্যু হলে, সেই তৃতীয় পক্ষের ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে এই বিমার আওতায় কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই। তবে অন্য কোনও গাড়ি বা সম্পত্তির লোকসান হলে বিমামূল্যের উর্দ্ধসীমা ৭.৫০ লক্ষ টাকা। বিমাকারী চাইলে অবশ্য তা ৬,০০০ টাকায় সীমাবদ্ধ রাখতে পারেন। সে ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামও কম হবে। তবে খেয়াল রাখবেন, বিমা সংস্থা তখন ওইটুকু টাকাই দেবে। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক তার চেয়ে বেশি হলে কিন্তু আপনাকে তা ভরতে হবে নিজের পকেট থেকেই।

ব্যক্তিগত সুরক্ষা: যাঁর নামে গাড়ি, তাঁর নামে ড্রাইভিং লাইসেন্সও থাকলে প্রিমিয়ামের সঙ্গে আরও ৫০ টাকা দিয়ে বাড়তি একটি সুরক্ষা নেওয়া বাধ্যতামূলক। যেখানে দুর্ঘটনায় বিমাকারীর ব্যক্তিগত ক্ষতি হলেও বিমার সুবিধা মিলবে। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখুন। যেমন, স্বামীর ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে, কিন্তু গাড়ি তাঁর স্ত্রীর নামে ও তাঁর লাইসেন্স নেই। সে ক্ষেত্রে থার্ড পার্টি লায়াবিলিটি কভারে মূল গাড়ি বিমার সঙ্গে এই বাড়তি সুবিধা স্ত্রী পাবেন না। তাই এ ক্ষেত্রে ৫০ টাকা খরচ করে লাভ নেই। এজেন্ট-কেও বিষয়টি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া ভাল।

প্রিমিয়াম

এই বিমার জন্য মাসে মাসে বা বছরে কত প্রিমিয়াম বইতে হবে, তা নির্ভর করবে আপনার গাড়ি কী ধরনের তার উপর। চার চাকার ক্ষেত্রে তার অঙ্ক এক রকম, দু’চাকার ক্ষেত্রে আর এক। আবার দু’ক্ষেত্রেই প্রিমিয়ামের ফারাক হবে গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষমতার বিচারে।

যেমন, চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা প্রিমিয়ামের

তিনটি শ্রেণি হল—

• ১০০০ সিসি বা তার চেয়ে কম

• ১০০০ সিসি-র বেশি থেকে ১৫০০ সিসি পর্যন্ত

• ১৫০০ সিসি-র বেশি

দু’চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে তা চারটি—

• ৭৫ সিসি পর্যন্ত

• ৭৫ সিসি-র বেশি থেকে ১৫০ সিসি পর্যন্ত

• ১৫০ সিসি-র বেশি থেকে ৩৫০ সিসি পর্যন্ত

• ৩৫০ সিসি-র বেশি

বাড়তি

কফি খেতে ঢুকে অনেক সময়ই তাতে বাড়তি ক্রিম বা মধু যোগ করে নিশ্চয়ই আহ্লাদে আটখানা হন আপনি। রেস্তোরাঁয় মূল খাবারের সঙ্গে সাইড ডিশ না-নেওয়ার কথা কস্মিনকালেও ভাবতে পারেন না। ঠিক তেমনই বিমার ‘অ্যাড অন’। মূল বিমার সঙ্গে বিমাকারীকে যেখানে দেওয়া হয় আরও অনেক বাড়তি সুযোগ-সুবিধা। তবে এটা বাধ্যতামূলক নয়, প্রয়োজন বোধ করলে নিতে পারেন। প্রতিটির জন্য গুনতে হবে বাড়তি টাকা।

এই তালিকায় মূলত কিছু ব্যক্তিগত দুর্ঘটনাজনিত বিমার সুবিধা মেলে। যেগুলি আপনার গাড়িতে সওয়ার চালক ও যাত্রীর রক্ষাকবচ হতে পারে। যেমন:

বেতনভুক চালকের জন্য: একে বলে ওয়াইডার লিগাল লায়াবিলিটি। যেখানে বেতনভুক চালক তাঁর কাজে থাকাকলীন (অন ডিউটি) দুর্ঘটনায় পড়ে শারীরিক ভাবে অক্ষম হলে বা মারা গেলে বিমার টাকা মিলবে।

কর্মীর জন্য: গাড়ি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত না হলেও, যদি তাতে চেপে বিমাকারীর নিজস্ব ব্যবসা বা দফতরে নিযুক্ত কর্মী কোনও কাজে যান এবং গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে, তা হলে তাঁর জন্য বিমার সুবিধা মেলে। ক্ষতিপূরণ দাবি করা যায় ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

সওয়ারির জন্য: গাড়িতে চালক-সহ যে ক’জন যাত্রী চাপতে পারেন (বিভিন্ন গাড়িতে বসার জায়গা অনুযায়ী যার সংখ্যা আলাদা আলাদা), তাঁদের সকলের জন্য দুর্ঘটনাজনিত বিমার সুরক্ষা নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে যাত্রী সংখ্যার ভিত্তিতে বিমা করানো যেতে পারে। আবার চাইলে তা করানো যায় পরিবারের যে সব সদস্য গাড়িতে চাপবেন তাঁদের নামেও।

কম্প্রিহেনসিভ বা প্যাকেজ পলিসি

এটি নিজের গাড়ির জন্য বাড়তি সুরক্ষাকবচ। বাধ্যতামূলক না-হলেও, গাড়ি কেনার পরে এই বিমা না-করালে নিজেরই ক্ষতি। আগামী দিনে জলে যেতে পারে অনেক টাকা।

কেন

আপনার গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়লে বা তা চুরি হয়ে গেলে যে ক্ষতি হবে, তা পূরণের কথা ভেবেই আনা হয়েছে এই বিমা। বিমামূল্য অনুযায়ী আর্থিক সুবিধা দাবি করা যায়। ভূমিকম্প, বন্যা, ঝড়, সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ধর্মঘট, সন্ত্রাসবাদজনিত ঘটনা-সহ অন্য কোনও কারণে গাড়ির ক্ষতি হলেও প্যাকেজ পলিসির আওতায় বিমার সুরক্ষা পাবেন। চাইলে আলাদা করে

যাত্রী-সুরক্ষাও নেওয়া যায়।

সাধারণত ‘থার্ড পার্টি লায়াবিলিটি’র সুবিধার সঙ্গে এ ধরনের নানা বাড়তি সুরক্ষা নিয়ে অনেকে সার্বিক ভাবে এই বিমা প্রকল্প আনে বলে এটিকে কম্প্রিহেনসিভ বা প্যাকেজ পলিসি বলা হয়।

কী আছে

এই গাড়ি বিমা প্রকল্পের আওতায় বিমাকারী যে সমস্ত সুবিধা পেয়ে থাকেন, সেগুলি হল—

পুরো গাড়ির ক্ষতিপূরণ: ধরা যাক, নতুন গাড়ির দাম (শো-রুম থেকে কেনার সময়) ৫ লক্ষ টাকা। এই দামকে বলা হয় ইনশিওরড ডিক্লেয়ার্ড ভ্যালু বা আইডিভি। কেনার পরে প্রথম বছরেই পুরো গাড়ির কোনও ক্ষতি হলে বা হারালে তার দামের উপর ৫% বাদ দিয়ে (ডেপ্রিসিয়েশন) গাড়ির বিমামূল্য ধরা হবে ৪.৭৫ লক্ষ টাকা। সে ক্ষেত্রে এই বিমামূল্য দাবি করতে পারবেন বিমাকারী।

পরের বছর থেকে প্রতি বছর গাড়িটির বাজারমূল্য থেকে যথাক্রমে ২০%, ৩০%, ৪০% ও ৫০% করে বাদ দিয়ে বিমামূল্য ধরা হবে।

গাড়ি পাঁচ বছরের পুরনো হওয়ার পরে পুরো বাজারের দরের হিসেবেই বিমামূল্য ধরা হবে। তবে তার পর আর কত দিন বিমার সুবিধা নেওয়া যাবে তা নির্ভর করবে গাড়িটি অবস্থার উপর। যা মূল্যায়ন করবে বিমা সংস্থা।

আংশিক ক্ষতিপূরণ: গাড়ির আংশিক ক্ষতি হলে, তা পূরণেরও ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন, দুর্ঘটনায় কাচ ভাঙলে পুরো খরচ বা দাম পাওয়া যায়। অন্যান্য যন্ত্রাংশ, যেমন রবার, এয়ারব্যাগ, টায়ার, ব্যাটারি ইত্যাদি মেরামতের ক্ষেত্রে মেলে মোট খরচ বা দামের ৫০%।

বাকি ধাতব যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে হওয়া ক্ষতি গাড়ি কেনার পরে ৬ মাসের কম সময়ের মধ্যে হলে কোনও ডেপ্রিসিয়েশন নেই। অর্থাৎ মেরামতের পুরো খরচই মিলবে। তবে ৬ মাসের পর থেকে এক বছরের মধ্যে হলে, খরচের ৫% বাদ দিয়ে বাকি টাকাটা পাওয়া যাবে। ২ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তা ঘটলে, প্রতি বছর এই বাদ যাওয়া বা ডেপ্রিসিয়েশনের হার হবে আলাদা আলাদা। ১০ বছরের পরে হওয়ার পরে মিলবে ৫০% বিমার সুবিধা।

প্রিমিয়াম

থার্ড পার্টি লায়াবিলিটি কভারের মতো গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষমতার নিরিখে একই রকম শ্রেণিতে ভেঙে প্রিমিয়াম আলাদা আলাদা হবে এই গাড়ি বিমাতেও। তবে কম্প্রিহেনসিভ পলিসি-তে তার অঙ্ক নির্ভর করবে আরও ক’টি বিষয়ের উপর। সে ক্ষেত্রে দেখা হবে গাড়ির বয়স, দাম, কোন রিজিওনাল ট্রাফিক অফিসে (আরটিও) সেটি নথিভুক্ত ইত্যাদি।

বাড়তি

এখানেও আছে বাড়তি কিছু সুবিধা পাওয়ার বন্দোবস্ত। এবং একই ভাবে সে জন্য বিমাকারীকে গুনতে হবে অতিরক্ত গাঁটের কড়ি। তবে কোনওটাই বাধ্যতামূলক নয়। সেই বাড়তি সুবিধার তালিকায় এই বিমাও দেবে ব্যক্তিগত দুর্ঘটনাজনিত আর্থিক সুরক্ষার সুযোগ। সেই সঙ্গে গাড়ির বিভিন্ন ক্ষতি ভরার আরও কিছু বাড়তি সুবিধা। গাড়ির এই বাড়তি ক্ষতিপূরণগুলি আবার কখনওই অ্যাক্ট-অনলি প্রকল্পে দাবি করা যায় না। যেমন:

দুর্ঘটনাজনিত ব্যক্তিগত ক্ষতিপূরণ: আপনার নিজের গাড়ির ক্ষতি হলে তা পূরণের আশ্বাস দেয় কম্প্রিহেনসিভ গাড়ি বিমা প্রকল্প। কিন্তু দুর্ঘটনাজনিত কারণে গাড়ির সওয়ারির শারীরিক অক্ষমতা বা মৃত্যুর মতো ব্যক্তিগত ক্ষতিপূরণের সুবিধাও বাড়তি হিসেবে নিতে পারেন।

এই প্রকল্পের আওতায় গাড়ি সংক্রান্ত যে বাড়তি সুবিধাগুলি মেসে তার মধ্যে রয়েছে:

জিরো ডেপ্রিসিয়েশন: এ ক্ষেত্রে ইনশিওরড ডিক্লেয়ার্ড ভ্যালু বা আইডিভি একই থাকবে। তাই অনেকেই চলতি কথায় এই সুবিধাকে বলেন ‘বাম্পার টু বাম্পার’। তবে গাড়ি কেনার পাঁচ বছর কেটে যাওয়ার পরে ষষ্ঠ বছর থেকে আর এটা মিলবে না। কেউ যদি তাঁর কেনা গাড়ি দু’বছর পরে কাউকে বিক্রি করেন, তখন হাতফেরতা হলেও গাড়িটির ক্রেতা ওই পাঁচ বছরের হিসেবে বাকি তিন বছরের জন্য এই সুবিধা নিতে পারবেন। কিন্তু কেউ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পর কাউকে তা বেচলে, তখন বিমার এই সুবিধা পাওয়া যাবে না।

ইনভয়েস প্রোটেক্ট: ধরা যাক গাড়ির দাম ৫ লক্ষ। আইডিভি ধরে গাড়ি বিমামূল্য হবে ৪.৭৫ লক্ষ। কিন্তু পুরো গাড়িটির কোনও ক্ষতি হলে বা সেটি চুরি হয়ে গেলে মালিকের ফের নতুন গাড়ি কেনার দরকার হতে পারে। এই বাড়তি সুরক্ষা নেওয়া থাকলে সে ক্ষেত্রে আর্থিক সুরাহা হবে। গাড়িটির প্রথমবারের রেজিস্ট্রেশনের খরচ, প্রিমিয়াম বাবদ খরচের টাকা, রোড ট্যাক্স— সবই ফেরত পাওয়া যাবে।

ইঞ্জিন প্রোটেক্ট: বৃষ্টির জল বা জমা জল ঢুকে ইঞ্জিনের ক্ষতি হতে পারে। সে সমস্যার বাড়তি সুরক্ষাকবচ এটি।

নো ক্লেম বোনাস: যে বছর বিমা করা হবে, সেই বছর ক্ষতিপূরণ দাবি করা না-হলে বোনাসের সুবিধা পরের বছর মেলে। ২০% থেকে শুরু করে পরের বছরগুলিতে সর্বোচ্চ ৫০% ছাড় মেলে প্রিমিয়ামে। তবে যে বছর বিমার দাবি করা হয়, তার পরের বছর তা মেলে না। দাবি জানানোর পরে ফের এই সুবিধা পেতে শর্তও রয়েছে।

এক সংস্থা থেকে অন্য সংস্থায় গাড়ি বিমা সরালেও প্রমাণপত্র দাখিল করে এই সুবিধা বজায় রাখা যাবে।

হারিয়ে গেলে

বিমার পলিসি হারিয়ে গেলে সংস্থাকে লিখিত আর্জি জানান। ‘ডুপ্লিকেট’ পলিসি পেতে পারেন। এ জন্য অনেক সময় সংস্থা নামমাত্র কিছু ফি নিতে পারে।

ক্ষতিপূরণ চাইতে

গাড়ির যে কোনও ক্ষতিতেই বিমার টাকা দাবি করতে পারেন আপনি। তবে সে জন্য যে সব নথি লাগবে, সেগুলি হল—

• ঠিক মতো পূরণ করা বিমার আবেদনপত্র
• গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটের (এখন স্মার্ট কার্ড) কপি
• ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি
• রোড ট্যাক্সের সার্টিফিকেট
• বিমায় নগদহীন সুবিধা না-নিলে, ক্ষতি হওয়া গাড়িটির মেরামতি খাতে খরচ মেটানোর রসিদ
• নগদহীন সুবিধা নিলে, মেরামতির ওই রসিদের পাশাপাশি বিমা সংস্থার চাহিদা মতো অন্যান্য কিছু কাগজপত্র
• গাড়ি চুরি হলে তার চাবি

আগের কাজ আগে

দুর্ঘটনায় গাড়ির ক্ষতি হলে বা তা চুরি হয়ে গেলে দ্রুত বিমা সংস্থাকে জানাতে হবে। গাড়ি সারানোর আগে সার্ভে করার কথা। মেরামত করুন সেটা হওয়ার পরে। গাড়ি চুরি হলে সঙ্গে সঙ্গে এফআইআর করতে হবে। দেরি না-করে সংশ্লিষ্ট ‘আরটিও’-কেও জানান। যাতে কেউ বেআইনি ভাবে সেই গাড়ি কাউকে হস্তান্তর করতে না পারে।

কত দিনের জন্য

গাড়ির দু’ধরনের বিমার মেয়াদই এক বছর। প্রতি বছর পুনর্নবীকরণ করতে হয়। গাড়ির হাতবদল হলে বিমার পলিসি-ও হাতবদল করা যায়। তবে তার জন্য নতুন ক্রেতাকে বাড়তি খরচ করতে হয়। যদিও সাধারণত নো ক্লেম বোনাসের সুবিধার হাতবদল হয় না।

সিএনজি বা এলপিজি

বহু গাড়িতে পেট্রোল-ডিজেলের বদলে জ্বালানি হিসেবে সিএনজি বা এলপিজি-তে চালানোর ‘কিট’ লাগানো হয়। আইআরডিএ-র নিয়ম, তা পরিবহণ দফতরের ‘রোড ট্রান্স অথরিটি’ (আরটিএ) ও বিমা সংস্থা, উভয়কেই জানাতে হবে। আরটিএ যেমন সেই অনুযায়ী গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন অব সার্টিফিকেট বদল করবে, তেমনই নতুন সেই ব্যবস্থাটি বিমার আওতায় আনবে বিমা সংস্থা। এ জন্য গুনতে হবে বাড়তি প্রিমিয়াম।

পাঠকের প্রশ্ন

প্রঃ কলকাতায় গত জুলাইয়ে একটি ফ্ল্যাট কেনা হলে কতটা জিএসটি দিতে হবে? ৯৮০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটির দাম ৩৪,৭৯,০০০ টাকা।
শ্যামাপ্রসাদ নন্দী
ফ্ল্যাট তৈরি ও পুরসভা থেকে কমপ্লিশন সার্টিফিকেট পাওয়ার পরে কেনা হলে, সেটির উপরে জিএসটি প্রযোজ্য হবে না। ওই কর দিতে হবে ফ্ল্যাট নির্মীয়মাণ অবস্থায় বুক করা বা কেনা হলে। অর্থাৎ সেটি তৈরি হওয়ার আগে বুক করা হলে কিংবা কমপ্লিশন সার্টিফিকেট পাওয়ার আগে কেনা হলে। জিএসটি-র হার হবে ১২%।

পরামর্শদাতা: তিমিরবরণ চট্টোপাধ্যায়

প্রঃ শেয়ার এক বছর ধরে রাখার আগেই বিক্রি করলে, মুনাফার উপর মূলধনী লাভকর দেওয়ার পরে বাকি থাকা অংশ কি করযোগ্য আয়? তা এক বছর বা তার বেশি ধরে রাখার পরে বেচলে যে লাভ হয়, তা কি করযোগ্য আয়?
তরুণ কুমার সাহা, আলিপুরদুয়ার
শেয়ার কেনার এক বছরের মধ্যেই বাজারে বিক্রি করে লাভ হলে তা স্বল্পকালীন মূলধনী লাভ। এর উপর স্বল্পকালীন মূলধনী লাভকর দিতে হয় ১৫%। তবে একবার এই কর দেওয়া হয়ে গেলে কর বাবদ আর কোনও দায় থাকে না। ওই শেয়ার এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে রাখার পরে বিক্রি করে লাভ হলে তা দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভ। যা করমুক্ত। তবে শর্ত হল, ওই শেয়ার বিক্রি করতে হবে বাজারে। এবং তার উপর সিকিউরিটি ট্র্যানজ্যাকশন ট্যাক্স দিতে হবে।

পরামর্শদাতা: অমিতাভ গুহ সরকার

পরামর্শের জন্য লিখুন:
‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১।
ই-মেল: bishoy@abp.in
ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

car Car Insurance Driving
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE