Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বাজার ধরা বড় বালাই, রাস্তাও গড়ছে নির্মাণ সংস্থা

কেউ তৈরি করছে রাস্তা। কেউ ব্যস্ত নিকাশির বন্দোবস্তে। কেউ আবার সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে উড়ালপুল নির্মাণে।

গার্গী গুহঠাকুরতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ০২:২২
Share: Save:

কেউ তৈরি করছে রাস্তা। কেউ ব্যস্ত নিকাশির বন্দোবস্তে। কেউ আবার সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে উড়ালপুল নির্মাণে।

সাধারণত যে সমস্ত পরিকাঠামো গড়ার কাজ একান্ত ভাবেই সরকারের জন্য তোলা থাকে, বাজার ধরার তাগিদে এখন তাতে হাত লাগাচ্ছে আবাসন নির্মাণ সংস্থাগুলিও। ক্রেতা টানতে জোর দিচ্ছে প্রকল্পের পাশে নাগরিক পরিকাঠামো উন্নয়নে।

যেমন, প্রকল্পের লাগোয়া এক কিলোমিটার পাকা রাস্তা তৈরি করতে টাকা ঢেলেছে বিজিএ রিয়েলটর। সোনারপুর রেল স্টেশন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মধ্যবিত্তদের জন্য আবাসন প্রকল্প গড়ছে তারা। তাদের তৈরি প্রকল্পের সামনের রাস্তা ব্যবহার করেন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।

খড়দহে আবার প্রকল্প সংলগ্ন এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি করেছে সিদ্ধা গোষ্ঠী। খড়দহের পাটুলিয়ায় প্রকল্পের পাশে জলে ডোবা এলাকার ছবি মানানসই নয় বুঝেই ৩৬০ মিটার নিকাশির লাইন তৈরি করেছে তারা।

ক্রেতাদের যাতায়াত সহজ করতে জিঞ্জিরা বাজার থেকে বাটানগর পর্যন্ত উড়ালপুল তৈরির আংশিক দায় ঘাড়ে নিয়েছে হাইল্যান্ড গোষ্ঠীও। দু’লেনের ৭ কিলোমিটার লম্বা ওই উড়ালপুল তৈরির খরচ প্রায় ৩০০ কোটি।

ক্রেতার মন জিততে আবাসনের সীমানার মধ্যে ঝাঁ-চকচকে পরিকাঠামো তৈরিতে নির্মাণ সংস্থার আগ্রহ নতুন নয়। তা সে সুইমিং পুল, জগিং ট্র্যাক হোক বা হালফিলের ‘স্কাই ওয়াক’। কিন্তু তা বলে প্রকল্পের আশপাশে রাস্তা, নিকাশির মতো পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা তেমন শোনা যেত না। উপরের তিন ক্ষেত্রে গাঁটের কড়ি খরচ করে সেই দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে নির্মাণ সংস্থাগুলি। হয়তো সে জন্যই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির অধ্যাপক তথা চতুর্দশ ফিনান্স কমিশনের মুখ্য উপদেষ্টা পিনাকী চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘এ ধরনের উদ্যোগ অভিনব। লাভ সরকারেরই।’’

প্রকল্পের মধ্যে পরিকাঠামো গড়লে, তার দাম গোনেন ক্রেতা। তা ব্যবহারও করেন শুধু তাঁরা। কিন্তু পরিকাঠামো বাইরে হলে, পয়সা খরচ না-করে তার সুফল পাবেন আশপাশের মানুষ। খরচ বাড়বে নির্মাণ সংস্থার। তা সত্ত্বেও তারা এতে আগ্রহ দেখাচ্ছে কেন?

আবাসন শিল্পের মতে, এর কারণ মূলত দু’টি— (১) কলকাতা ও তার লাগোয়া অঞ্চলে আবাসন গড়ার মতো এক লপ্তে জমির অভাব (২) ক্রেতা টানার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।

কলকাতা সংলগ্ন অঞ্চলে রাস্তার পাশে জমি হয় নেই, আর নইলে দর আকাশছোঁয়া। তাই বাধ্য হয়েই কিছুটা দূরে প্রকল্প গড়ে বরং রাস্তা তৈরির বন্দোবস্ত করেছে নির্মাণ সংস্থা। সঙ্গে আছে ক্রেতা টানার লড়াই। নির্মাণ শিল্প বিশেষজ্ঞ অভিজিৎ দাসের দাবি, ‘‘বসবাসের জন্য এলাকার নাগরিক পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেন ক্রেতা। বিশেষত মধ্যবিত্ত ক্রেতার জন্য (যাঁরা মূলত থাকবেন বলে বাড়ি কিনছেন) এই পরিকাঠামো বিশেষ জরুরি।’’ উপদেষ্টা সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্কের অন্যতম কর্তা স্যমন্তক দাসও বলেন, ‘‘কলকাতায় ছাদ জোগাড় করতেই ফ্ল্যাট কেনেন অধিকাংশ ক্রেতা। তাই প্রকল্প সংলগ্ন পরিকাঠামো সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে।’’

পিনাকীবাবুর মতে, এতে মুনাফা হয়তো কম হবে। কিন্তু পরিকাঠামো না থাকা অঞ্চলে ফ্ল্যাট তৈরি করে বেচতেও পারবে সংস্থা। লাভবান হবে সরকার। উন্নয়ন হবে পরিকাঠামোরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

roads
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE