একার রোজগারে সংসার চালাতে গিয়ে আমরা অনেকেই হিমশিম খাই। সেখানেই যদি চাকরির পাশাপাশি অন্য কাজ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব হয়, তা হলে ক্ষতি কী? মৌসুমি সেরকমই এক জন।
২৬ হাজারের চাকরি ছাড়াও, ফ্রিলান্স লেখালিখি করে মাসে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা হাতে আসে তাঁর। এ ভাবে বাড়তি রোজগার তাঁর দূরদর্শিতার পরিচয় দেয়। ভিন্ রাজ্যে থেকে নিজের ঘোরা, কেনাকাটার শখ যেমন তিনি মেটান, তেমনই দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁর পরিবারেরও। কিছু ইচ্ছের কথা চিঠিতে জানিয়েছেন তিনি। চলুন দেখে নিই তার কতটা পূরণ করা সম্ভব।
• বিমার সুরক্ষা
জীবনবিমা: পরিবারের দায়িত্ব এই বয়সেই নিতে হয় মৌসুমিকে। তাই প্রথমেই উচিত নিজের বড় অঙ্কের টার্ম পলিসি করা। আপাতত শুরু করতে পারেন ২৫ লক্ষ টাকা দিয়ে। ভবিষ্যতে ধাপে ধাপে সেই অঙ্ক বাড়াতে হবে।
স্বাস্থ্যবিমা: অফিস থেকে নিজের এবং বাবা-মায়ের ২.৫ লক্ষ টাকার বিমা পান তিনি। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। ফলে আলাদা পলিসি তাঁকে এখনই করাতে হবে। সংস্থার ও নিজের মোট বিমার অঙ্ক কমপক্ষে হতে হবে ৫ লক্ষ টাকা। এটিও ভবিষ্যতে বাড়াতে হবে।
• অবসরের সঞ্চয়
দেখে ভাল লাগল, চাকরিতে ঢুকেই নিজের অবসর জীবনের কথা ভাবছেন মৌসুমি। সে জন্য আমি বলব—
পিপিএফ: সুদ কমলেও, করমুক্ত প্রকল্প হওয়ায় এখনও পিপিএফ বড় তহবিল গড়ে তোলার পক্ষে ভাল। আপাতত ৫০০ টাকা করে মাসে সেখানে রাখছেন তিনি। সেই অঙ্ক বাড়িয়ে ন্যূনতম ১,০০০ করুন।
পিএফ: বেতনের অনুপাতে নিজে থেকে আরও টাকা এখানে কাটানো সম্ভব। সে জন্য এখনই ভলান্টারি পিএফ প্রকল্পে লগ্নি করতে হবে।
শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে এসআইপি: মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে লড়ে তহবিল গড়তে গেলে মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখতেই হবে। ইতিমধ্যেই সে কথা ভেবেছেন। যত দ্রুত সম্ভব সেই পথে এগোন।
প্রথমে যদি খুব বেশি অঙ্কের এস আই পি করা সম্ভব না-ও হয়, তা-ও অল্প অল্প করেই লগ্নি শুরু করুন। তার পরে সেই অঙ্ক বাড়াতে থাকুন। সে জন্য শুরুতেই এক সঙ্গে অনেক ফান্ডে টাকা ঢালতে হবে তা নয়। বরং একটু পড়শোনা করুন। বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে ২টি বা ৩টি ফান্ড বাছুন। তার পরে কমপক্ষে ৫০০ বা ১,০০০ টাকা করে সেখানে রাখতে থাকুন।
শেয়ার: সরাসরি শেয়ারেও টাকা রাখার কথা ভাবুন। তবে এ জন্য তৈরি হতে গেলে সংস্থাগুলি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হবে। মৌসুমির বয়স কম। তাই এখনই যদি ধীরে ধীরে শেয়ারে লগ্নি শুরু করেন, অবসরের সময়ে ভাল সঞ্চয় হবে।
ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডে এসআইপি: সব টাকা শেয়ার বা শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে রাখতে না-চাইলে ভাবুন ডেট ফান্ডের কথাও। ঝুঁকি কমাতে যা সাহায্য করবে। তবে এসআইপি-র পুরো টাকাই আবার এই ধরনের ফান্ডে রেখে দেবেন না। ইকুইটি ও ডেট মিলিয়ে-মিশিয়ে রাখতে হবে।
স্থায়ী আমানত: প্রয়োজনে হাতে টাকা পেতে বেছে নিন স্থায়ী আমানতকে। হাতে থোক টাকা এলে এখানে রাখুন।
• সন্তানের জন্য
এখন থেকেই বিয়ের পরে সন্তানের জন্য টাকা জমানোর কথা ভাবছেন মৌসুমি। যা খুবই প্রশংসার। আমার পরামর্শ, মাসে ৫,০০০ টাকা করে ডাইভার্সিফায়েড ইকুইটি ফান্ডে রাখুন। ১২% রিটার্ন ধরে ২০ বছরে এখানে থেকে পাওয়া যাবে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। যা সন্তানের কাজে লাগবে।
• স্বল্প মেয়াদি লক্ষ্য
বেড়ানো: প্রতি বছর বেড়াতে যাওয়ার জন্য রেকারিং ডিপজিট ভাল হলেও, এখন কম সুদের জমানায় তা কতটা কাজে লাগবে সন্দেহ রয়েছে। তাই বছরে ৩৫-৪০ হাজার জমানোর লক্ষ্য নিয়ে প্রতি মাসে ৩,০০০ টাকা করে লিকুইড বা ক্যাশ ফান্ডে রাখুন।
গাড়ি কেনা: এ জন্য তাঁকে ডাউনপেমেন্টের টাকা জোগাড় করতে হবে। তার উপর রয়েছে মাসিক কিস্তি। তাই প্রয়োজন না-থাকলে এখন সেই পথে না-এগোনোই ভাল। আর্থিক পরিকল্পনাগুলি গুছিয়ে নিন, তার পরে গাড়ি কেনার কথা ভাবুন।
এখনই মৌসুমির সঞ্চয়ের সময়। তবে সব কিছু একবারে শুরু করতে না-পারলেও, ধাপে ধাপে এগোন।
পরামর্শদাতা বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ (মতামত ব্যক্তিগত)
অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy