হঠাত্ই ছন্দপতন।
সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। ক্ষণিকের জন্য হলেও সেনসেক্স ছুঁয়েছিল ৩০ হাজার। আর তার পরেই যেন পরিবেশটা একটু এলোমেলো হয়ে গেল। সময়টা ভাল যাচ্ছে না বাজেটের পর থেকেই। বাজেটের যত বিশ্লেষণ করা হচ্ছে, বাজার তত বুঝছে আশু কোনও ফায়দা নেই। মেওয়া ফলতে সময় লাগবে। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাজেটের রেশ কাটতে না কাটতেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়, যা মোটেও আশা করা যায়নি। তাত্ক্ষণিক ভাবে ভাল রকম তেতে ওঠে বাজার।
কিন্তু এই উত্থানও স্থায়ী হয়নি। খবর আসে, মার্কিন মুলুকে কর্মসংস্থান ভাল রকম বেড়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বাজার। কারণ, মার্কিন অর্থনীতি এগোতে শুরু করলে আশঙ্কা, সেখানে সুদ বাড়ানো হতে পারে। আর সুদ বাড়লে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশ থেকে লগ্নি ফিরে যেতে পারে সেখানে। এই দুশ্চিন্তায় দ্রুত নামে ভারতের দুই মূল সূচক।
পরপর কয়েক দিন পতনের পর গত সপ্তাহের মাঝামাঝি আবার বাজার উঠতে শুরু করেছিল। কিন্তু তাতে এ বার বাদ সাধল মূল্যবৃদ্ধির হার। ফেব্রুয়ারিতে খুচরো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার ৫.৩৭ শতাংশে উঠে আসায় নতুন করে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে বাজার। এই হার গত তিন মাসের মধ্যে সবথেকে বেশি। এপ্রিলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আর সুদ না-ও কমাতে পারে— এই আতঙ্ক পেয়ে বসে বাজারকে। হুড়মুড়িয়ে নামে সেনসেক্স ও নিফ্টি। শুক্রবার সেনসেক্স খোয়ায় ৪২৭ পয়েন্ট। নেমে আসে ২৮,৫০৩ অঙ্কে।
সব মিলিয়ে গত সপ্তাহে সেনসেক্স মোট খুইয়েছে ৯৪৬ পয়েন্ট অর্থাত্ ৩.২১%। পতন হয়েছে সব ধরনের শেয়ারের দামে। তবে এই পতন নতুন করে সুযোগ করে দিয়েছে ভাল শেয়ার অপেক্ষাকৃত কম দামে কেনার। উপযুক্ত কারণ ছাড়া অতি কম সময়ে বাজার এতটা তেতে উঠলে পতন তো বারবারই আসবে। এই পতনের জন্যই অপেক্ষা করে থাকেন সুযোগসন্ধানী মানুষেরা। বাজার অনেকটা নামলে তবেই ভাল। বাজারের এই সাময়িক মন্দায় আতঙ্কিত হওয়ার কিন্তু কোনও কারণ নেই। কারণ, কয়েকটি প্রতিকূল খবরের পাশাপাশি আসছে বেশ কিছু অনুকূল খবরও। ফলে পতনের রেশ বেশি দিন থাকতে পারবে না সদর্থক পরিবেশ ফিরতে শুরু করলেই। এ বার এক নজরে দেখে নেব এই অনুকূল বার্তাগুলি—
• ভাল রকম কমেছে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি। নেমে এসেছে ৬৮০ কোটি ডলারে। গত ১৭ মাসের মধ্যে যা সব থেকে কম। জ্বালানি তেলের আমদানি বাবদ ব্যয় ৫৫% কমাই ঘাটতি এতটা নেমে আসার মূল কারণ।
• অবশেষে বিমা বিল রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে। খুব গুরুত্বপূর্ণ খবর এটি। এর ফলে বিমা শিল্পে বড় মাপের বিদেশি লগ্নি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইপিও (বাজারে প্রথম বার শেয়ার ছাড়া) আসতে দেখা যাবে বিভিন্ন বেসরকারি বিমা সংস্থা থেকে। বাড়বে কর্মসংস্থান। এই বিল পাশ হওয়া আবারও স্পষ্ট ইঙ্গিত দিল, নরেন্দ্র মোদী সরকার আর্থিক সংস্কারে বদ্ধপরিকর।
• আশা, নতুন আর্থিক বছরের গোড়ায় দেশের বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি সুদের হার কমানোর পথে হাঁটবে।
• বহু সংখ্যায় খুচরো লগ্নিকারীরা বাজারে ফিরছেন। মোবাইল, ট্যাব এবং ল্যাপটপ ব্যবহার করে মোটা সওদা করছেন নতুন প্রজন্মের লগ্নিকারীরা। বাজারের জন্য এটি অত্যন্ত ভাল লক্ষণ।
• মিউচুয়াল ফান্ডের ইকুইটি প্রকল্পগুলিতে গত এক বছরে লগ্নি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। মোট লগ্নির পরিমাণ ১.৫৭ লক্ষ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৩.০৭ লক্ষ কোটি টাকা। এই টাকা লগ্নি হয় শেয়ার বাজারে।
• জনধন প্রকল্পের অধীনে খোলা ১২.৫ কোটি নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে সঞ্চয়ে উত্সাহী করতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। দেশে সঞ্চয় বাড়লে তা অর্থনীতি উন্নয়নের কাজে লাগবে।
• গত জানুয়ারিতে শিল্পোত্পাদন বেড়ে ২.৬% হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান। এর আগে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে এই হার ছিল ১.১ শতাংশ।
সুতরাং সব মিলিয়ে বলা যায়, এই সাময়িক পতনে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মাঝারি থেকে দীর্ঘ মেয়াদে বাজার ঊর্ধ্বমুখীই থাকবে বলে আশা করা যায়। এখন যে সব বিষয়ের উপর নজর রাখতে হবে তা হল, চতুর্থ ত্রৈমাসিক তথা বার্ষিক কোম্পানি ফলাফল, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি এবং বর্ষার পূর্বাভাস।
যাঁরা একই সঙ্গে নিশ্চিত আয় এবং বিমার সুবিধা ভোগ করতে পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য একটি নতুন প্রকল্প এনেছে জীবন বিমা নিগম। একক প্রিমিয়ামের জীবন সঙ্গম প্রকল্পে বিমার অঙ্ক প্রিমিয়ামের ১০ গুণ। মেয়াদ শেষে পাওয়া যাবে প্রতিশ্রুত অর্থ। লয়্যালটি বাবদ পাওয়া যাবে অতিরিক্ত অর্থ।
এই পলিসি কেনার জন্য বয়সের সীমা ৬ থেকে ৫০ বছর। মেয়াদ ১২ বছর। প্রয়োজনে বিমাপত্র জমা রেখে ঋণ মিলবে। একটি হিসেব থেকে দেখা যায়, একজন ৩০ বছরের মানুষ যদি জীবন সঙ্গম প্রকল্পে একলপ্তে ২,৩৮,৭৭৫ টাকা লগ্নি করেন, তবে ১২ বছর বাদে তিনি পাবেন ৫ লক্ষ। এ ছাড়া, লয়ালটি বাবদ পাবেন বাড়তি অর্থ। বিমা চলাকালীন তাঁর মৃত্যু হলে পরিবার পাবে ২৩,৮৭,৭৫০ টাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy