Advertisement
০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

ভোট বড় বালাই, ভয় চাষির ক্ষোভে

বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত, চাল-গমের পাশাপাশি অন্যান্য শস্য, বিশেষত ডাল ও তৈলবীজের ক্ষেত্রেও চাষিরা যাতে বাড়তি সহায়ক মূল্যের ফায়দা পান তার জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী অন্নদাতা আয় সংরক্ষণ অভিযান’ (পিএম-আশা) নামে নতুন প্রকল্প চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৬:০০
Share: Save:

মধ্যরাতে মুম্বইয়ের দখল গিয়েছিল ক্ষুব্ধ চাষিদের হাতে। সম্প্রতি তাঁরা ‘দখলে’ নিয়েছিলেন দিল্লিও। ভোটের মুখে তাঁদের ক্ষোভে মলম দিতে এ বার উদ্যোগী হল নরেন্দ্র মোদী সরকার।

লোকসভা নির্বাচনে জেতার পথে যে চাষিদের ক্ষোভ পথের কাঁটা হয়ে উঠতে পারে, তা টের পাচ্ছে এনডিএ সরকার। সে কারণেই খারিফ ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়িয়েছিল তারা। সেই মূল্য যাতে বাস্তবে চাষির ঘরে পৌঁছয় তা নিশ্চিত করতে এ বার মাঠে নামল তারা। বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত, চাল-গমের পাশাপাশি অন্যান্য শস্য, বিশেষত ডাল ও তৈলবীজের ক্ষেত্রেও চাষিরা যাতে বাড়তি সহায়ক মূল্যের ফায়দা পান তার জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী অন্নদাতা আয় সংরক্ষণ অভিযান’ (পিএম-আশা) নামে নতুন প্রকল্প চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত, এই প্রকল্পে তিনটি বিকল্প ব্যবস্থা থাকবে। এক, সরাসরি চাষিদের থেকে সহায়ক মূল্যে চাল-গম ছাড়াও ডাল, তৈলবীজ, ফসল কেনা হবে। দুই, বাজারের দাম সহায়ক মূল্যেরও নীচে নামলে সেই ফারাক ভর্তুকি দিয়ে মেটাবে কেন্দ্র। চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ভর্তুকি পৌঁছবে। তিন, চাষিদের থেকে সহায়ক মূল্যে ফসল কেনার ব্যাপারে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে উৎসাহ দেবে রাজ্যগুলি। এখন বেসরকারি সংস্থাগুলি নিজেদের প্রয়োজন মতো দরাদরি করে ফসল কেনে।

এই তিনটি ব্যবস্থার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিতে বলা হবে রাজ্যগুলিকে। কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহ বলেন, ‘‘পিএম-আশা প্রকল্প কার্যকর করতে ফসল কেনার খরচ বাড়িয়ে ১৫,০৫৩ কোটি টাকা করা হয়েছে। যে সংস্থাগুলি চাষিদের থেকে ফসল কেনে, তাদের জন্য ১৬,৫৫০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি দেওয়া হবে।’’ দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যবস্থা অবশ্য আপাতত শুধু তৈলবীজের ক্ষেত্রেই চালু হবে। সরকারের যুক্তি, রান্নার তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতেই এই সিদ্ধান্ত।

সরকারি সূত্রের অবশ্য যুক্তি, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়— এই তিনটি বিজেপি শাসিত রাজ্যেই সামনে ভোট। সেখানে বিপুল পরিমাণে তৈলবীজ ও ডাল উৎপাদন হয়। গত দু’বছরে ফসলের দাম পড়ে যাওয়ায় তিনটি সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। সেদিকে তাকিয়েই এই সিদ্ধান্ত। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের দাবি, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে চাষিরা লাভবান হবেন।

ভর্তুকির কোনও ঊর্ধ্বসীমা থাকবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য সরকার মুখ খুলতে চায়নি। কৃষিমন্ত্রী বলেন, নথিভুক্ত চাষিরা নির্দিষ্ট শস্য বাজারে ফসল বেচলে এই সুবিধা পাবেন। কৃত্রিম ভাবে যাতে বাজারের দাম কমিয়ে না দেওয়া হয়, সে দিকে নজর রাখা হবে। কৃষি মন্ত্রকের যুক্তি, ২০২২ সালের মধ্যে চাষিদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত। গত বাজেটে সেই লক্ষ্যেই ঘোষণা করা হয়েছিল, চাষের খরচের দেড় গুণ ফসলের দাম দেওয়া হবে। মহারাষ্ট্রে কৃষকদের ‘লং মার্চ’-এর পরেও খারিফ ফসলের দাম ঘোষণা করে একই দাবি করেছিল কেন্দ্র। যদিও চাষের সব খরচ ধরে হিসেব কষা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

এ দিন আখের রস থেকে তৈরি ইথানলের দাম ২৫ শতাংশের বেশি বাড়ানোতেও সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। কেন্দ্রের দাবি, এর ফলে ছেঁটে ফেলা সম্ভব হবে উদ্বৃত্ত চিনি উৎপাদন। আয় বাড়বে চিনিকলগুলির। আখ চাষিদের বাকি থাকা প্রায় ১৩,০০০ কোটি টাকা মেটাতে পারবে তারা। শুধু উত্তরপ্রদেশের চাষিরাই পান যার ৪০%। অনেকেই বলছেন, এই সিদ্ধান্তের সঙ্গেও জড়িত রয়েছে রাজনৈতিক রসায়ন। গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধি পেয়েছিলেন মোদী। যদিও প্রশ্ন উঠেছে, এর ফলে আদৌ কি চাষিরা লাভবান হবেন? নাকি লাভ হবে চিনি কলগুলির।

মলম

• খারিফ ফসলের সহায়ক মূল্য আগেই বাড়িয়েছে কেন্দ্র।

• এ দিন সিদ্ধান্ত, সেই মূল্য চাষির ঘরে পৌঁছনো নিশ্চিত করা।

• চাষির থেকে সরাসরি ডাল ও তৈলবীজ কিনবে সরকার।

• বাজার দর সহায়ক মূল্যের থেকে কমে গেলে সেই ফারাকে ভর্তুকি।

• সহায়ক মূল্যে ফসল কিনতে উৎসাহ বেসরকারি সংস্থাকেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Farmer Narendra Modi Crop Minimum Price
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy