আগের সপ্তাহটা ছিল ছোট। মাত্র তিনটি কাজের দিন। কিন্তু সূচকের উত্থানের দিক থেকে তা আদৌ ছোট ছিল না। বাজেটের পরে বাজারের পতন হয়েছিল কমবেশি ২৫০০ পয়েন্ট। সেনসেক্স নেমে এসেছিল ২৭,৪৫৮ অঙ্কে। নতুন অর্থবর্ষ শুরুর প্রাক্কালেই আবার পুনরুত্থান হয় বাজারের। গত সোমবার এক ধাক্কায় বাজার ওঠে ৫১৭ অঙ্ক। আরও উঠে বুধবার সেনসেক্স সপ্তাহ শেষ করে ২৮,২৬০ অঙ্কে। বুধবার সূচক ওঠে ৩০৩ পয়েন্ট।
পুরনো বছরের শেষে এবং নতুন বছরের শুরুতে বাজারের এই উত্থানে সবাই খুশি হলেও, তা কতটা স্থায়ী হবে সেটা কিন্তু এখনই বলা যাচ্ছে না। উত্থান যতটা না অর্থনৈতিক কারণে, তার থেকে বেশি ‘শর্ট কভারিং’-কে ভর করে।
শর্ট কভারিং অর্থাৎ হাতে থাকা শেয়ারের তুলনায় বেশি শেয়ার বিক্রি করা এবং পরে তা বাজার থেকে কিনে জোগান দেওয়া। মনে করা হচ্ছে, বাজার অনেকটাই উঠেছে এই অতিরিক্ত শেয়ার কেনার হিড়িকে। বছরের শেষ দিনে বাজারের ৫০০ পয়েন্ট ওঠা স্বস্তি জুগিয়েছে বহু কোম্পানিকে, যাদের খাতায় মোটা মূল্যের লগ্নি ধরা আছে। হাতে থাকা শেয়ারের দর বাড়ায় বছর শেষে তাদের ব্যালান্স শিট তুলনায় ভাল দেখাবে। বাজারের কাছে পরবর্তী ট্রিগার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমায় কি না। সুদ কমানো হলে এই চাঙ্গা ভাব কিছু দিন বজায় থাকতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে সপ্তাহটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণ মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর হল, ১ এপ্রিল থেকে ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে চালু হয়েছে নতুন সুদের হার। সুদ হ্রাসের জমানায় আশঙ্কা ছিল এই সব প্রকল্পে সুদ কমে আসার। তা তো হয়ইনি, বরং সামান্য হলেও সুদ বেড়েছে সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস প্রকল্প এবং সুকন্যা সমৃদ্ধি প্রকল্পে। আগের বছরের মতো এ বারও ৮.৭% সুদ পাওয়া যাবে জনপ্রিয় পিপিএফ অ্যাকাউন্টে। মনে রাখতে হবে করমুক্ত ৮.৭% সুদ ৩০% হারে করদাতাদের কাছে প্রায় ১২.৫% করযোগ্য সুদের সমান, যা বতর্মান বাজারে অত্যন্ত ভাল বলেই মানতে হবে। সঙ্গে আছে অশোক-স্তম্ভের সুরক্ষা। আছে ৮০ সি ধারায় জমার উপর করছাড়ের সুবিধাও। বছরে জমা করা যায় সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল কয়েকটি জনপ্রিয় প্রকল্পের সুদের নতুন হার।
বড় গাড়ি নির্মাতাদের বেশির ভাগই গত আর্থিক বছরে গাড়ি বিক্রি বাড়াতে পেরেছে বেশ আকর্ষণীয় হারে। অর্থনীতির দিক থেকে এটি একটি সুলক্ষণ। মারুতি, হুন্ডাই, হোন্ডা, টয়োটা এবং নিসানের বিক্রি বেড়েছে ১০ থেকে ৪১%। অন্য দিকে বিক্রি কমেছে ফোর্ড, এম অ্যান্ড এম, ফোক্সভাগেন ইত্যাদির। গাড়ির উৎপাদন বাড়লে উপকৃত হয় অনেক শিল্প। চাহিদা বাড়ে ইস্পাত, টায়ার, টিউব, বাল্ব, এসি, মিউজিক সিস্টেম, রং, যন্ত্রাংশ, ফোম, প্ল্যাস্টিক পণ্য ইত্যাদির। বাড়ে কর্মসংস্থান। আগের দু’বছর বিক্রি কমার পরে ২০১৪-’১৫ সালে এতটা বৃদ্ধি অবশ্যই উৎসাহজনক। তবে অর্থনীতি সত্যি সত্যি না-এগোলে এই বৃদ্ধি ধরে রাখা সহজ হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
তাকানো যাক মোটরবাইক বিক্রির পরিসংখ্যানে। ২০১৪-’১৫ সালে বিশ্বের বৃহত্তম মোটরবাইক নির্মাতা হিরো মোটোকর্পের বিক্রি ৬.২% বেড়ে পৌঁছেছে ৬৬.৩০ লক্ষ বাইকে। মার্চ মাসে হিরো বিক্রি করেছে ৫,৩১,৭৫০টি বাইক এবং স্কুটার। বৃদ্ধির হার ১.৫%। গাড়ি এবং বাইক বিক্রি বাড়লে শেয়ার বাজারে শুধু সংশ্লিষ্ট শেয়ারেরই দাম বাড়ে তা নয়, বিক্রি বাড়ার সদর্থক প্রভাব পড়ে গোটা বাজারেই।
আর মাত্র দিন সাতেকের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে চতুর্থ ত্রৈমাসিক তথা বার্ষিক ফলাফল প্রকাশের পালা। টিসিএস, এইচসিএল টেক এবং ইনফোসিস ফল প্রকাশ করবে যথাক্রমে ১৬, ২১ এবং ২৪ এপ্রিল।
নতুন বছরের প্রথম দিনে ভারত তার বৈদেশিক বাণিজ্য নীতি প্রকাশ করেছে। লক্ষ্য রফতানি দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৯০,০০০ কোটি ডলার করা। যা ছুঁতে হবে ৫ বছরের মধ্যে
তবে বিভিন্ন মহলের মত হল, শুধু লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করলেই চলবে না। সরকারকে এখন কাজ করে দেখাতে হবে। শেয়ার বাজার দীর্ঘ মেয়াদে চাঙ্গা থাকবে যদি বৃদ্ধির চড়া হার বজায় থাকে। এর জন্য আর যা দরকার, তা হল পর্যাপ্ত বৃষ্টি এবং বিশ্ব বাজারের সমর্থন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy