Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

লেম্যান পতনের দশক ঘুরলেও শিক্ষা হল কই!

এক দশক আগে লেম্যান ব্রাদার্সের পতন সূচনা করেছিল বিশ্ব মন্দার। ব্যাঙ্কিং শিল্পের পা হড়কানোর জায়গাগুলি চিহ্নিত হয় সেই সময়েই।

সান্ত্বনা: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৮। দেউলিয়া ঘোষণার পরে লেম্যান ব্রাদার্সের সদর দফতরের সামনে। ছবি: এএফপি।

সান্ত্বনা: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৮। দেউলিয়া ঘোষণার পরে লেম্যান ব্রাদার্সের সদর দফতরের সামনে। ছবি: এএফপি।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৮
Share: Save:

এক দশক আগে লেম্যান ব্রাদার্সের পতন সূচনা করেছিল বিশ্ব মন্দার। ব্যাঙ্কিং শিল্পের পা হড়কানোর জায়গাগুলি চিহ্নিত হয় সেই সময়েই। কিন্তু ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা তা থেকে শিক্ষা নিয়েছে কি? বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাঙ্কগুলিকে শক্তিশালী করতে সরকার বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করলেও তা যথেষ্ট নয়।

ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত তিনটি শিক্ষা দিয়েছিল লেম্যান ব্রাদার্স।  শুধু অনুৎপাদক সম্পদ আদায় নয়, ঝুঁকি কমাতে হবে ঋণ দেওয়ার সময়েই।  মূলধন ঢেলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির হিসেবের খাতা মজবুত না করলে বিপদ অনিবার্য।  অনুৎপাদক সম্পদ আদায়ে চটজলদি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন বলছেন, ‘‘মন্দার সময়ে আর্থিক উন্নয়নে জোর দেওয়া হলেও অবহেলিত থেকে গিয়েছিল ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতার বিষয়টি। নিয়মকানুন শিথিল করে বাড়ানো হয়েছিল ঋণের লক্ষ্যমাত্রা। টনক যখন নড়ল, তখন ব্যাঙ্কগুলির ঘাড়ে বিপুল পরিমাণ অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা।’’ ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ বি কে দত্ত বলেন, ‘‘লেম্যান ব্রাদার্সের ঘটনা ভারতের ব্যাঙ্কিং শিল্পের ফাঁকফোকরগুলি আতসকাচের নীচে এনে দিয়েছিল। কিন্তু ব্যবস্থা নিতে সময় লেগেছে দীর্ঘ আট বছর।’’

উল্লেখ্য, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনও সম্প্রতি সংসদের এস্টিমেটস কমিটিকে জানিয়েছেন, ২০০৬ সাল পর্যন্ত ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র ঠিকঠাকই চলছিল। ব্যাঙ্ক কর্তারাও ভেবেছিলেন, ভবিষ্যতে এ ভাবেই চলবে। ফলে বিরাট অঙ্কের ঋণ বণ্টনের সময়ে তার ভালমন্দ খুঁটিয়ে দেখা হয়নি। তাতেই তৈরি হয় সমস্যা।

এরই মধ্যে ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ি ঋণের অঙ্ক ১০ লক্ষ কোটি টাকা ছুঁয়েছে। ২০১৬ সালের মে মাসে কার্যকর হয় দেউলিয়া বিধি। যার সাহায্যে ইতিমধ্যেই অনুৎপাদক সম্পদ আদায়ের কাজে গতি আনা শুরু হয়েছে। অনুৎপাদক সম্পদ চিহ্নিত করে তার জন্য আর্থিক সংস্থানেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে প্রাথমিক ভাবে ব্যাঙ্কের লোকসানের খাতা মোটা হলেও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দীর্ঘ মেয়াদে তা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্য ফেরাতে সহায়ক হবে। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে মূলধন ঢালছে কেন্দ্র। যদিও তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে।

পাশাপাশি, আরও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে এখন থেকেই সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে তা বড় আকার ধারণ করতে পারে বলেও মত তাঁদের। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলেন, ‘‘কম সুদে অল্প খরচের বাড়ির ঋণের ক্ষেত্রে এখন থেকেই সতর্কতা জরুরি।’’ ছোট শিল্প ও শিক্ষাঋণের দিকে নজর না দিলে, ভবিষ্যতে তা-ও বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে বলেও মত অনেকের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE