গোড়া থেকেই রাজ্য আধার কেন্দ্র খোলার দায়িত্ব না নেওয়ায় তার সংখ্যা কম ছিল পশ্চিমবঙ্গে। তার উপর ৩১ মার্চের মধ্যে নিজেদের আধার কেন্দ্র গুটিয়ে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। ফলে ভুগতে হচ্ছে আমজনতাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এখন তাই ৩১ মার্চের পরেও ‘চালু থাকা’ কেন্দ্রগুলির মেয়াদ বাড়াতে আধার কর্তৃপক্ষের (ইউআইডিএআই) কাছে আর্জি জানিয়েছে রাজ্যই। তাতে সায় দেওয়ার পাশাপাশি বন্ধ হওয়া কিছু কেন্দ্রকে ফের চালুর নির্দেশ দিয়েছে ওই কর্তৃপক্ষ। যদিও তাতে সমস্যা কতটা মিটবে, সংশয় বহাল তা নিয়ে।
সরকারি সূত্রে খবর, রাজ্যে অধিকাংশ ‘যোগ্য’ নাগরিকের আধার নম্বর হয়ে গেলেও অনেকের তথ্যে ভুল রয়েছে। কারও আবার নতুন তথ্য সংযোজন জরুরি। কিন্তু কেন্দ্র কমায় তাতে হিমসিম দশা আমজনতার। অভিযোগ উঠছে, অনেক কেন্দ্রে এ জন্য ফের বাড়তি টাকাও চাইছে। কেন্দ্র কম থাকার ক্ষোভ সে কারণেই।
নিয়ম অনুযায়ী, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ও প্রতিটি রাজ্য, দু’পক্ষই রেজিস্ট্রার হয় বা শিবিরের মূল দায়িত্বে থাকে। উভয়েই এই শিবির চালানোর জন্য আলাদা আলাদা ভাবে হয় নিজেদের কর্মী বা বেসরকারি সংস্থাকে নিয়োগ করে। কিন্তু এর জন্য বাড়তি আর্থিক বোঝা ও প্রশাসনিক চাপের যুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গ রেজিস্ট্রার হতে চায়নি। নিজেরা কেন্দ্র খোলার ঝক্কি না নিয়ে তারা শুধু কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে সহযোগিতা করেছিল।
ব্যতিক্রম
• দেশে অন্য প্রায় সর্বত্র কেন্দ্রীয় সংস্থার পাশাপাশি আধার কেন্দ্র খুলেছিল সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারও। ‘রেজিস্ট্রার’ হিসেবে আলাদা ভাবে তা পরিচালনাও করে তারা। ফলে তা সংখ্যায় বেশি। সুবিধা সাধারণ মানুষের।
• শুরু থেকেই সে পথে হাঁটেনি পশ্চিমবঙ্গ। তাই আধার কেন্দ্র এখানে গোড়া থেকেই কম।
বিষফোড়া
• অধিকাংশ জনের আধারের কাজ মিটে যাওয়ায় এবং তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি কমাতে কেন্দ্রের সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত দিল্লির। ৩১ মার্চের মধ্যে গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে অনেকগুলিকে।
• কথা ছিল, তেমনই আধার কেন্দ্র চালু হবে ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরে। কিন্তু যে সংখ্যায় কেন্দ্র বন্ধ হয়েছে, তার তুলনায় এমন নতুন কেন্দ্রের সংখ্যা নগণ্য। তাই মুশকিলে সাধারণ মানুষ।
• তার উপর পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যের নিজেদের পরিচালিত কেন্দ্র নেই। ফলে আতান্তরে আধারে নাম তুলতে কিংবা তার তথ্য সংশোধনে যাওয়া আমজনতা।
এখন আর্জি
• ৩১ মার্চের পরেও কেন্দ্রীয় সংস্থার যে সমস্ত কেন্দ্র এখনও রাজ্যে চালু, তার মেয়াদ বাড়ুক। তা মেনে ৩০ জুন পর্যন্ত কাজ চালাতে সায় দিয়েছে
আধার কর্তৃপক্ষও।
• ৩১ মার্চ পেরিয়ে রাজ্যে প্রায় সাড়ে চারশো আধার কেন্দ্র সক্রিয় ছিল। নতুন করে অনুমোদন পেয়েছে আরও প্রায় আড়াইশো কেন্দ্র।
এখনও জরুরি?
• ইউআইডিএআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত আধার প্রক্রিয়ার আওতায় এসেছেন ১০২% মানুষ।
•কিন্তু এই হিসেব ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী। তার উপরে মৃত ব্যক্তিদের আধারও এর মধ্যে রয়েছে। ফলে আসলে আধারে নাম তোলা বাকি বেশ কিছু জনের। • সেই সঙ্গে রয়েছে ভুলত্রুটি ঠিক করার কাজও।
• কেন্দ্রের খোঁজ এই সব কারণেই।
লাগছে কোথায়?
সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন হওয়ায় আপাতত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট, মোবাইল নম্বর, বিমা প্রকল্প ইত্যাদির সঙ্গে আধার নম্বর জোড়া বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু রান্নার গ্যাস, সরকারি বৃত্তি-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে ভর্তুকি সমেত বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা পেতে আধার নম্বর লাগছেই।
গত বছর ঠিক হয়, ৩১ মার্চের মধ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থার কেন্দ্রগুলি বন্ধ হয়ে তার বদলে ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে তা চালু হবে। কিন্তু ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরগুলি এখনও খুব বেশি কেন্দ্র চালু করতে পারেনি। বিশেষত যত কেন্দ্র বন্ধ হয়েছে, তার সাপেক্ষে সেই সংখ্যা বেশ কম। ফলে কেন্দ্রের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। ইউআইডিএআইয়ের দাবি, রাজ্য রেজিস্ট্রার হলে সমস্যা এতটা হত না। আর এই পরিস্থিতিতেই কিছু কেন্দ্র অন্তত আরও কিছু দিন চালু রাখতে রাজ্যের আর্জি।
ইউআইডিএআই জানিয়েছে, ৩১ মার্চ পর্যন্ত যে কেন্দ্রগুলির অনুমোদন ছিল, তারা ৩০ জুন পর্যন্ত কাজ করতে পারবে। কিন্তু দেখা যায়, অনেকেরই অনুমোদন ৩১ মার্চের পরে আর নেই। শেষে রাজ্যের অনুরোধে আরও ২৫০টি বন্ধ কেন্দ্রকে ফের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে রাজ্যে ৭০০ কেন্দ্র চালু হবে বলে সূত্রের খবর।
তবে তাতেও সমস্যা মিটবে কি? প্রশ্ন সেখানেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy