—প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্র বার বার দাবি করছে, ভারতের অর্থনীতির ভিত মজবুত। টাকার দাম পড়া ও পেট্রল-ডিজেলের দর বাড়ার দায় আসলে বিশ্ব বাজারেরই। কিন্তু শিল্পমহলের একাংশ বলছে, দায় থাকুক বা না থাকুক, অবিলম্বে তেলের দাম কমানোর ব্যবস্থা না করলে, আখেরে ধাক্কা খাবে দেশের অর্থনীতিই। কারণ, এর জেরে পণ্য পরিবহণের খরচ ইতিমধ্যে ১০-১৫% বেড়েছে। এ ভাবে চলতে থাকলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার আশঙ্কা। ফলে ভুগবেন আমজনতা। সুদ আরও বাড়বে। সংস্থাগুলির ঋণ জোগাড়ের খরচ বাড়বে। মার খাবে লগ্নি। তাই তাদের দাবি, অন্তত কিছু দিনের জন্য হলেও, অবিলম্বে উৎপাদন শুল্ক কমাক কেন্দ্র। কিছুটা কর ছাঁটুক রাজ্যগুলি। পারলে বদলাক তার কাঠামো। পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটকের মতো কিছু রাজ্য অবশ্য ইতিমধ্যে কর কমানোর পথে হেঁটেছে।
উৎপাদন শুল্ক ছাঁটার দাবি যদিও কেন্দ্র তেমন কানে তুলছে না। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, বিশেষত অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সম্প্রতি রাজকোষ ঘাটতিকে চলতি অর্থবর্ষে ৩.৩ শতাংশে বেঁধে রাখার কথা বলায় তার সম্ভাবনা আরও কমেছে। ঘাটতি এখানে বেঁধে রাখতে হয়তো ওই শুল্ক খাতে আয় হারানোর ঝুঁকি নিতে চাইবে না তারা।
বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি ও টাকায় ডলার শক্তিশালী হওয়ায় তেল আমদানির খরচ বাড়ছে। ফলে বাড়ছে পেট্রল-ডিজেলের দাম। মহারাষ্ট্রের কিছু শহরে পেট্রল লিটারে ৯১ টাকা পেরিয়েছে। কলকাতায় মঙ্গলবার তা লিটারে ১০ পয়সা বেড়ে হয় ৮৪.০১ টাকা। ডিজেল ৯ পয়সা বেড়ে ৭৫.৭২ টাকা। এ দিন আরও ৬৭ পয়সা বেড়ে ডলারও হয় ৭২.৫১ টাকা। তবে সোমবারও এর জন্য ফের বিশ্ব বাজারকে দায়ী করেছেন জেটলি। এ দিন মশলা বন্ডে (বিদেশের বাজারে টাকায় ছাড়া বন্ড) মার্চ পর্যন্ত সুদ বাবদ আয়ে কর ছাড়ের কথাও জানান তিনি।
এই পরিস্থিতিতে শিল্প শোনাচ্ছে তাদের যন্ত্রণার কথা। ছোট শিল্পের সংগঠন ফসমির ভাইস প্রেসিডেন্ট গৌতম রায় জানান, পরিবহণ খরচ প্রায় ১৫% বেড়েছে। ছোট সংস্থার লাভের অঙ্ক কম হওয়ায় অনেকেই তাই নোট বাতিল ও জিএসটির পরে এ বার এতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। তাঁর দাবি, বেশি দিন এমন চললে পণ্যের দাম বাড়াতে হবে।
তবে পরিবহণ খরচ বাড়লেও বড় শিল্প চাইলেই এই পথে হাঁটতে পারবে না বলে আক্ষেপ মার্চেন্টস চেম্বারের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হেমন্ত বাঙ্গারের। তাঁর দাবি, চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি হওয়ায় পণ্যের দাম বাড়েনি। তেলের পিছনে বাড়তি খরচের জন্য দাম বাড়ালে ব্যবসা আরও কমবে। ফলে জাঁতাকলে বড় শিল্প।
সিআইআইয়ের জাতীয় পর্ষদের অন্যতম সদস্য দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের আশঙ্কা, তেলের ধাক্কায় মূল্যবৃদ্ধি মাথা তুলতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘বর্ষার শেষে ক্ষুদ্র সেচের জন্য ডিজেলচালিত পাম্পের ব্যবহার বাড়বে। তখন তেলের চড়া দরে ভুগবে কৃষি।’’
তাই হেমন্তের মতে, জিএসটি ও আয়কর ফাঁকি কমায় কেন্দ্র যখন আয় বাড়ছে বলে দাবি করছে, তখন মানুষকে রেহাই দিতে অন্তত সাময়িক ভাবে তেলে কর কমাক। তাতে ওই খাতে তাদের আয় কিছুটা কমলেও। পাশাপাশি রাজ্যগুলিকে তাঁর আর্জি, পরিবর্তনশীল হারে নয়, উৎপাদন শুল্কের আদলে ভ্যাটেরও নির্দিষ্ট অঙ্ক বেঁধে দিক তারা। উল্লেখ্য, এ রাজ্যে পেট্রলে ২৫% ও ডিজেলে ১৭% হারে কর নেওয়া হয়। অর্থাৎ, তেলের মূল দাম বাড়লে করের পরিমাণও বাড়ে।
দীপঙ্করবাবু বার্তা, ‘‘কেন্দ্রের দাবি আর্থিক উন্নতি হচ্ছে। তা হলে মূল্যবৃদ্ধি রুখতে হয় তেলের দর কমাক, না হলে আর্থিক সঙ্কট মেনে সংস্কার করুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy