Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অল্প বদলেই নাভিশ্বাস

পেট্রোল, ডিজেলের দর রোজ ঘোষণার নিয়ম চালু হয়েছিল জুনের মাঝামাঝি। তার পর থেকে প্রতিদিন সাধারণত তা ওঠে-নামে মাত্র কয়েক পয়সা করে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০৩:২৫
Share: Save:

ছোট ওঠা-পড়াও যে গায়ে লাগে, এখন রোজ যেন তা প্রমাণ করে ছাড়ছে তেলের দাম! অনেকটা একই ছবি রান্নার গ্যাস, কেরোসিন কিংবা ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের সুদেও। অল্প-অল্প করে দাম বাড়া বা সুদ কমার চিমটি প্রথমে টের পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকই। কিন্তু খরচ সামলাতে শেষমেশ হিমসিম খেতে হচ্ছে আমজনতাকে। বিশেষত গরিব মানুষকে।

পেট্রোল, ডিজেলের দর রোজ ঘোষণার নিয়ম চালু হয়েছিল জুনের মাঝামাঝি। তার পর থেকে প্রতিদিন সাধারণত তা ওঠে-নামে মাত্র কয়েক পয়সা করে। কিন্তু সেই গুটিগুটি পায়ে চলেই ৭০ টাকা ছাপিয়ে গিয়েছে প্রতি লিটারে পেট্রোলের দাম। ৬০ ছুঁইছুঁই করছে ডিজেলও। আগে এক লপ্তে ৪-৫ টাকা দাম বাড়লেও, তা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর হত। ক্ষোভ প্রকাশ করতেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু এখন রোজকার অল্প-অল্প করে দাম চড়া তেমন টেরই পাওয়া যাচ্ছে না। পকেটে কামড় বসছে নিঃশব্দে। কপালে চিন্তার ভাঁজ গভীর হচ্ছে ট্যাক্সিচালক থেকে শুরু করে দু’চাকা চালানো সাধারণ মানুষের।

আরও পড়ুন:

ভর্তুকি দ্রুত মুছে ফেলতে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দামও প্রতি মাসে ৪ টাকা করে বাড়ানোর কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। তা ঘোষণা করতে গিয়ে মন্ত্রী জানিয়েছেন, অনেক আগে থেকেই তা বাড়ছে মাসে দু’টাকা করে। সেই ‘হালকা ধাক্কা’ তখন বুঝতেই পারেননি অনেকে। অথচ দেখা যাচ্ছে, নিয়মিত অল্প বাড়ানোর দাওয়াইয়েই ভর্তুকির সিলিন্ডারে গুনতে হওয়া অঙ্ক ৪২১ টাকা থেকে বেড়ে পৌঁছে গিয়েছে প্রায় ৪৮৩-তে। মধ্য বা উচ্চবিত্তের জন্য গ্যাসে ভর্তুকি গোনা অর্থনীতির যুক্তিতে কাজের কথা নয়। কিন্তু গরিব মানুষ, বিশেষত যাঁরা হালে উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাস সংযোগ নিয়েছেন, তাঁদের অভিযোগ, সিলিন্ডার আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে ক্রমশ। গরিব মানুষের রেস্তয় কামড় বসাচ্ছে রেশনের দোকানে কেরোসিনের
দাম বাড়াও।

সুদ নির্ভর মানুষের আবার মাথায় হাত ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ লাগাতার কমতে থাকার কারণে। অবসরের পরে সুদটুকুই সম্বল, এমন এক প্রবীণের কথায়, ‘‘সংসার চালানোই দায় হয়ে উঠছে। জোগাড় করা কঠিন হচ্ছে ওষুধের খরচ।’’

বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তেলের দাম বদলানো কিংবা অযথা গোনা ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের পিছনে অর্থনীতির যুক্তি পোক্ত। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, তার জন্য অর্থনীতির হাল যে-রকম ভাল থাকা জরুরি, যে-হারে কাজের সুযোগ তৈরি হওয়া প্রয়োজন, কিংবা যে-ধরনের সামাজিক সুরক্ষা আবশ্যিক, তা কোথায়?

তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘ভারতে ভর্তুকির সুরক্ষাকবচ তুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও আসেনি। তেল, রান্নার গ্যাস, কেরোসিন, স্বল্প সঞ্চয়— সব ক্ষেত্রেই জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কেন্দ্র।’’ সিপিএমের পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীও বলেন, কার্যত ‘স্লো-পয়েজনিং করে’ সর্বস্বান্ত করা হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE