Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গভীর রাতে বৈঠক, কাটল না তেল জট

পেট্রল-ডিজেলের দাম কমানোর রাস্তা খুঁজতে রীতিমতো দিশাহারা নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকার। কোনওদিন ১ পয়সা, কোনওদিন ৯ পয়সা করে দাম কমানোর ফলে পেট্রলের দাম এখনও ৮০ টাকার ঘরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৮ ০৩:৪৭
Share: Save:

লিটারে অন্তত ১০ টাকা দাম কমলে ভাল হয়। কমছে মাত্র ১০ পয়সা।

পেট্রল-ডিজেলের দাম কমানোর রাস্তা খুঁজতে রীতিমতো দিশাহারা নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকার। কোনওদিন ১ পয়সা, কোনওদিন ৯ পয়সা করে দাম কমানোর ফলে পেট্রলের দাম এখনও ৮০ টাকার ঘরে। ডিজেলের দাম সেই ৭০ টাকার আশেপাশেই রয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতের বৈঠকে ওএনজিসি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তাদের পক্ষে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কম দামে তেল বেচা সম্ভব নয়।

তেল সংস্থাগুলি সাফ জানিয়েছে, অশোধিত তেলের দাম এবং আমদানির খরচের যা বহর, তাতে পেট্রল-ডিজেলের দাম এর বেশি কমানো যাবে না। তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ওএনজিসি-র দ্বারস্থ হয়েছিলেন। অনুরোধ ছিল, রাষ্ট্রায়ত্ত তেল উত্তোলন সংস্থাটি যদি অশোধিত তেলের দাম কমায়। কারণ বিদেশ থেকে আমদানির পাশাপাশি ওএনজিসি-র কাছ থেকেও তেল বিপণন সংস্থাগুলি অশোধিত তেল কেনে। কিন্তু ওএনজিসি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এমনিতেই সরকারের চাপে গুজরাত স্টেট পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন কিনতে গিয়ে তাদের অবস্থা যথেষ্ট করুণ। এর পরে আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় কম দরে অশোধিত তেল বেচতে হলে কোম্পানি লাটে উঠবে।

এখানেই প্রশ্ন উঠছে, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নরেন্দ্র মোদীর কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে গিয়েই কি এখন পেট্রল-ডিজেলের দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না?

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘মোদীর কেলেঙ্কারির ফসল গুজরাত স্টেট পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে উদ্ধার করতে ওএনজিসি-কে কাজে লাগানো হয়েছিল। মোদী দাবি করেছিলেন, কাবেরী-গোদাবরী বেসিনে ২০ লক্ষ কোটি ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে। সে কথা বলে ১৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। এখন ওএনজিসি-কে দিয়ে সেই ঋণ শোধ করানো হচ্ছে।’’

ওএনজিসি কর্তারা কার্যত এ কথাই তেলমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। তেলের দাম কমানোর রাস্তা খুঁজতে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান তেল সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানেই ওএনজিসি-কে অশোধিত তেলের দাম কমানোর কথা ভাবতে বলা হয়। কিন্তু ওএনজিসি-র তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, ইতিমধ্যেই প্রায় ৭,৭০০ কোটি টাকা দিয়ে গুজরাত স্টেট পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের ৮০ শতাংশ মালিকানা কিনতে হয়েছে। ফলে আয়-ব্যয়ের খাতার অবস্থা শোচনীয়। কংগ্রেস মুখপাত্র অজয় কুমার বলেন, ‘‘এই কারণেই আমরা আগেই গুজরাত স্টেট পেট্রোলিয়ামের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে তদন্ত চেয়েছিলাম।’’ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সব কিছুর দাম ভীষণ বেড়ে গিয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল পেট্রল, ডিজেল, গ্যাসের দাম একসঙ্গে বেড়েছে। ফলে ধাক্কাটা রান্নাঘরে চলে গিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘দাম বাড়ানোটা কেন্দ্রের বিষয়। শুধু প্রচার চলছে।’’

সরকারি সূত্রের খবর, ওএনজিসি-কে এমন প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে যে তারা আপাতত অশোধিত তেলের দাম কমিয়ে পেট্রল-ডিজেলের দাম কমানোর রাস্তা তৈরি করে দিলে সরকার ওএনজিসি-র কাছে চলতি আর্থিক বছরে কোনও ডিভিডেন্ড দাবি করবে না। তাতেও ওএনজিসি কর্তারা এখনও রাজি হননি।

তেলমন্ত্রীর ভরসা এখন তাই রাজ্যগুলিও। অধিকাংশ রাজ্যেই বিজেপির সরকার। প্রথমে ধর্মেন্দ্র প্রধান অর্থ মন্ত্রকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন উৎপাদন শুল্ক কমানোর জন্য। কিন্তু অর্থ মন্ত্রক বলছে, কর কমিয়ে পেট্রল-ডিজেলের দাম কমাতে গেলে কেন্দ্রের আয় কমে যাবে। রাজকোষ ঘাটতি সামাল দেওয়া যাবে না। তেলমন্ত্রীর হয়ে সওয়াল করে নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ রাজীব কুমার যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘রাজ্যগুলির কর তেলের দামের ভিত্তিতে ঠিক হয়। দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যগুলির রাজস্ব আয়ও বেড়েছে। ফলে রাজ্যগুলি ৩ থেকে ৪ দশমিক অঙ্ক দাম কমাতে পারে।’’

বিরোধীদের প্রশ্ন, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের কম দামের সুবিধা নিয়ে কেন্দ্রও বিপুল অর্থ কোষাগারে পুরেছে। তা হলে কেন্দ্রের করের বোঝা কমাতে অসুবিধে কোথায়? রাজীবের যুক্তি, ‘‘ঘাটতি সামাল দেওয়ার মতো অর্থের সংস্থান কমতে পারলে তবেই কেন্দ্রের উৎপাদন শুল্ক কমানো উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE