সুদ বাড়ার ইঙ্গিত এখন স্পষ্ট। কারণ, খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির পরে এ বার পাইকারি বাজারের মূল্যবৃদ্ধিও মাথা তুলেছে। জুনে তার হার ছুঁয়েছে ৫.৭৭%। যা আগের চার বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি। আগের মাসে অর্থাৎ মে-তে ছিল ৪.৪৩%। দাম সব চেয়ে বেশি বেড়েছে আনাজ ও পেট্রোপণ্যের। আর এই গতিতে দাম বাড়তে থাকাতেই ফের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সুদ বাড়ার। বিষয়টি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক খতিয়ে দেখবে অগস্টের ঋণনীতি বৈঠকে। গত ঋণনীতিতে এক দফা বেড়েছে রেপো রেট। আগামী মাসে আবার তা বাড়লে সুদ আরও বাড়তে পারে ঋণ ও জমা, দু’টিতেই।
আর ঋণে সুদ বাড়ার ভয়েই এখন কাঁটা শিল্পমহল। কারণ সেটা হলে, প্রকল্প তৈরি বা বাড়ানোর জন্য নেওয়া ধার শোধ করতে টাকা লাগবে বেশি। বাড়বে তাদের প্রকল্পের খরচ। ফলে মার খেতে পারে লগ্নি। আর লগ্নি ধাক্কা খেলে অর্থনীতির স্বাস্থ্যে যে তার প্রভাব পড়বে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে বাজার। ফলে সূচক এখন চাঙ্গা থাকলেও যথেষ্ট অস্থির।
বড় কোনও পতন না হলেও, বাজার অস্থির ছিল গত সপ্তাহে। সুদ বৃদ্ধির আশঙ্কা ছাড়াও, শুল্ক যুদ্ধের জুজু তাকে কিছুতেই স্থিতিশীল হতে দিচ্ছে না। মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থাগুলির টানা মোটা বিনিয়োগ অবশ্য বড় পতন আটকে দিচ্ছে। জুনে এসআইপির তরফে বিভিন্ন ফান্ডে লগ্নি হয়েছে মোট ৭,৫৫৪ কোটি টাকা। যা রেকর্ড। আর তার বড় অংশ বাজারে ঢুকেছে।
চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে কিছু বড় মাপের সংস্থার ভাল আর্থিক ফলও মদত জুগিয়েছে সেনসেক্স ও নিফ্টিকে। গত শুক্রবার বাজার বন্ধের সময়ে ওই দুই সূচক যথাক্রমে ৩৬,৪৯৬ এবং ১১,০১০ অঙ্কে থামে। অর্থাৎ অস্থিরতা সত্ত্বেও সূচক কিন্তু বেশ উপরের দিকেই।
জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে ফল প্রকাশ করেছে একগুচ্ছ সংস্থা। হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের নিট লাভ ১৯% বেড়ে পৌঁছেছে ১,৫২৯ কোটি টাকায়। প্রত্যাশার তুলনায় কিছুটা হতাশ করেছে কোটাক মহীন্দ্রা ব্যাঙ্ক। ১২.৩% বেড়ে তাদের নিট লাভ ছুঁয়েছে ১,০২৫ কোটি। মোট অনুৎপাদক সম্পদ অবশ্য ২.২২% থেকে নেমেছে ২.১৭ শতাংশে।
তাক লাগানো ফল করেছে বজাজ গোষ্ঠী। বজাজ ফিনসার্ভের নিট লাভ বেড়েছে ৪১%। বজাজ ফিনান্স জানিয়েছে ৮১% মুনাফা বাড়ার খবর। ৩৫% নিট লাভ বাড়ার পাশাপাশি ঋণ ৩৬% বৃদ্ধি পাওয়ার কথা জানিয়েছে বেসরকারি আরবিএল ব্যাঙ্কও।
তবে অনেককেই টেক্কা দিয়েছে রাজ্যের বন্ধন ব্যাঙ্ক। তাদের নিট লাভ বেড়েছে ৪৭.৫১%। ছুঁয়েছে প্রায় ৪৮২ কোটি। দ্রুত বেড়ে ওঠা এই নতুন ব্যাঙ্কের আমানতের পরিমাণ প্রায় ৩১,০০০ কোটি টাকা। শাখা ৯৩৭টি। ফেডারেল ব্যাঙ্কের নিট লাভ বেড়েছে ২৫%। সাধারণ বিমা সংস্থা আইসিআইসিআই লম্বার্ডের নিট লাভ বেড়েছে ৩৫%। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা ১৮% বেড়ে পৌঁছেছে ৪,৬০১ কোটিতে। সুদ বাবদ আয় ১৮,৬৬৮ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ২২,৫৪৮ কোটি।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ফল প্রকাশ বাকি। এখন শেয়ার বাজারের নজর সে দিকেই। তার আগের তিন মাসে তাদের বেশির ভাগই চড়া লোকসান গুনেছিল।
এ দিকে, চলতি সপ্তাহে এইচডিএফসি গোষ্ঠী বাজারে ছাড়বে নতুন ইস্যু। ২,৮০০ কোটি টাকার ইস্যু নিয়ে হাজির হবে এইচডিএফসি আ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। ২৫ তারিখে খুলে ইস্যুটি বন্ধ হবে ২৭ জুলাই। মূল্যবন্ধনীকে (১,০৯৫ টাকা থেকে ১,১০০ টাকা) বেশ চড়া মনে হবে। তবে অনেকেই মনে করছেন, এই ইস্যুর দামকে সংস্থার ব্যবসার নিরিখে বিশ্লেষণ করা অযৌক্তিক।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy