Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বড় শিল্প নেই, ছোট শিল্পের ভবিষ্যৎ কী, সরাসরি প্রশ্ন মন্ত্রীকে

আর রাখঢাক নয়। এ বার রাজ্যে বড় শিল্পের অভাবের জন্য খড়্গহস্ত ছোট ও মাঝারি শিল্পমহল। রাজ্যের দাবি, বড় শিল্প না-এলে ক্ষতি নেই। বরং গুরুত্বপূর্ণ ছোট-মাঝারি শিল্প। বুধবার ফেডারেশন অব স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ (ফসমি)-এর সভায়ও রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা ও স্বনিযুক্তি মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের মুখে সেই কথারই পুনরাবৃত্তি শুনে শিল্পমহলের একাংশের সরাসরি প্রশ্ন, বড় শিল্প ছাড়া কী করে বাঁচবে ছোট ও মাঝারি শিল্প?

সাধন পাণ্ডে। —নিজস্ব চিত্র।

সাধন পাণ্ডে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৪১
Share: Save:

আর রাখঢাক নয়। এ বার রাজ্যে বড় শিল্পের অভাবের জন্য খড়্গহস্ত ছোট ও মাঝারি শিল্পমহল।

রাজ্যের দাবি, বড় শিল্প না-এলে ক্ষতি নেই। বরং গুরুত্বপূর্ণ ছোট-মাঝারি শিল্প। বুধবার ফেডারেশন অব স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ (ফসমি)-এর সভায়ও রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা ও স্বনিযুক্তি মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের মুখে সেই কথারই পুনরাবৃত্তি শুনে শিল্পমহলের একাংশের সরাসরি প্রশ্ন, বড় শিল্প ছাড়া কী করে বাঁচবে ছোট ও মাঝারি শিল্প? দৃশ্যতই বিব্রত মন্ত্রীর দাওয়াই রেলের বরাতের উপর নির্ভর করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা। না-হয় তো পড়শি রাজ্যের বাজার ধরা!

গোড়া থেকেই সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে বড় লগ্নি প্রকল্পের বিরোধিতা করেছে রাজ্যের বর্তমান শাসকদল। শিল্প-কর্তাদের অনেকেরই দাবি, রাজ্য অধিগ্রহণের বিরোধী হওয়ায় সরাসরি জমি কিনতে গিয়ে মেলে না এক লপ্তে বড় জমি। ফলে এখনও বড় শিল্পের খরা রাজ্যে।

এ দিন ফসমি-র বার্ষিক সভায় প্রথমে সাধনবাবু বলেন, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম রাজ্যে বড় শিল্প আসবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।’’ তবে তাঁর দাবি, এর দায় বাম আমলের। সে সময় থেকেই ভাবমূর্তির সমস্যার জেরে রাজ্যে ব্রাত্য বড় লগ্নি। সাধনবাবু জানান, রাজ্য জোর দিচ্ছে ছোট-মাঝারি শিল্পের উপরেই।

মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর সহকর্মীরা অনেকেই আগেও এ কথা বললেও সরকারের কোপে পড়ার আশঙ্কায় এত দিন আড়ালেই সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিল্পমহলের অনেকে। সভার পরে এ দিন সেখানে হাজির দুই প্রতিনিধি সরাসরি মন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, ‘‘বড় শিল্প না-হলে ছোট-মাঝারি কী করে বাঁচবে?’’

সাধনবাবুর জবাব, ‘‘ভারতীয় রেল ছোট ও মাঝারি শিল্পের থেকে পণ্য কেনে। তবে বড় শিল্প থাকলে হয়তো বাড়তি সুবিধা হত।’’ প্রশ্নকর্তাদের অবাক করে দিয়েই এর পর তিনি বলেন, ‘‘ট্রেনে চেপেই পাশের রাজ্য ওড়িশা বা বিহারে যাওয়া যায়।’’ মন্ত্রী কি তা হলে পড়শি রাজ্যে ব্যবসা করতে বলছেন এ রাজ্যের ছোট ও মাঝারি শিল্পকে— সেই প্রশ্ন করা হলে কিছুটা সাবধানী সাধনবাবু বলেন, ‘‘ওঁরা যথেষ্ট দক্ষ। জানেন কী করে ব্যবসা করতে হয়।’’

শিল্পমহলের বক্তব্য, কাঁচামাল হিসেবে অধিকাংশ ছোট ও মাঝারি সংস্থা পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি করে বড় সংস্থাকে। তাই বড় কারখানা না-হলে তাদের ব্যবসা হবে কী করে? রেলের বরাত বা পড়শি রাজ্যের উপর নির্ভর করে ক’জন ব্যবসা চালাতে পারবেন?

মন্ত্রীর আরও যুক্তি, অনেকেই যেখানে বসবাস করেন, বা যেখানে কারখানা রয়েছে, সেখানেই লগ্নিতে আগ্রহী। পাশাপাশি কেন্দ্রের বঞ্চনার শিকার পূর্বাঞ্চল। তাই বড় লগ্নি রাজ্যে আসছে না। যে-যুক্তি শুনে অবাক শিল্পমহলের একাংশ বলছে, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যখন তেলেভাজা, হস্তশিল্পকে ‘শিল্প’ আখ্যা দিতে পারেন, তখন লগ্নি না-পাওয়ার এমন নতুন তত্ত্ব পেশ করাও স্বাভাবিক।’’ শিল্পমহল মনে করে জমির সমস্যাই এ রাজ্যে বড় লগ্নির পথে মূল বাধা। এ দিন সাধনবাবুও মন্তব্য করেন, বড় শিল্পের জন্য বড় জমি লাগে। কিন্তু তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী এনটিপিসি-র মতো বড় প্রকল্পে জমির ব্যবস্থা করেছেন। প্রশ্ন করা হয়, শাসকদলের হস্তক্ষেপ ও তাতে পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে রাজ্যের ভাবমূর্তি কি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে না? মন্ত্রীর দাবি, অপরাধ ৩০ বছর আগেও হত। তখন টিভি ছিল না বলে জানা যেত না। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘দু’চারজন লোক অতি সক্রিয় হতে চায়। তাদের কাজ ঠিক নয়। যা ঠিক নয় সেটা বলব। কিন্তু এ রকম দু’চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা কেউ পাত্তা দেবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE