Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
বৃদ্ধি নিয়ে বিঁধলেন রাজন

বুক ঠোকার আগে জরুরি ছিল অপেক্ষা

চিনকে টপকে দ্রুততম বৃদ্ধির দেশের তকমা হাসিলের সাফল্য উদ্‌যাপন করা উচিত ছিল দীর্ঘ মেয়াদে সেই তাজ ধরে রাখার পরে। টানা এক দশক ৮ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধির হার ধরে রাখতে পারলে, তবেই বিশ্বের দরবারে ভারত সেই সাফল্যের গল্প শোনানোর হকদার হবে বলে মনে করেন রঘুরাম রাজন।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৪০
Share: Save:

গর্বে বুক চাপড়ানোর আগে উচিত ছিল আরও একটু অপেক্ষা করা। চিনকে টপকে দ্রুততম বৃদ্ধির দেশের তকমা হাসিলের সাফল্য উদ্‌যাপন করা উচিত ছিল দীর্ঘ মেয়াদে সেই তাজ ধরে রাখার পরে। টানা এক দশক ৮ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধির হার ধরে রাখতে পারলে, তবেই বিশ্বের দরবারে ভারত সেই সাফল্যের গল্প শোনানোর হকদার হবে বলে মনে করেন রঘুরাম রাজন।

বৃদ্ধির হারের নিরিখে চিনকে টপকে বিশ্বের দ্রুততম বৃদ্ধির দেশ হওয়ার পরে সেই সাফল্য ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রচার করেছিল মোদী সরকার। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রাজনের মতে, সেই গর্বের বুক চাপড়ানি তখন উচিত হয়নি। বরং তা করা যায় অন্তত এক দশক বৃদ্ধির চড়া হার ধরে রাখতে পারলে।

২০১৬ সালের এপ্রিলে শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধার থাকাকালীন বৃদ্ধির হারের বাড়বাড়ন্তকে অন্ধের রাজ্যে একচোখো রাজা হয়ে থাকার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন রাজন। তা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল বিস্তর। বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর মতো কেউ কেউ বলেছিলেন, আসলে মনে-প্রাণে ভারতীয় নন রাজন! শুক্রবার সেই প্রসঙ্গ তুললে শিকাগো বুথ স্কুল অব বিজনেসের ফিনান্সের শিক্ষক রাজনের দাবি, ‘‘এই নয় যে, বৃদ্ধির হার নেমে আসার পূর্বাভাস তখন দিয়েছিলাম। কিন্তু বলতে চেয়েছিলাম, এ নিয়ে মাতামাতি করার আগে বোধহয় আর একটু ধৈর্য ধরা উচিত।’’

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তার পর থেকেই প্রত্যেক তিন মাসে বৃদ্ধির হার ক্রমশ নেমেছে। নোট নাকচের পরে এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে তা গোত্তা খেয়ে নেমেছে ৫.৭ শতাংশে। তার আগের তিন মাসে তা ছিল ৬.১%। অথচ এই দুই ত্রৈমাসিকেই পড়শি মুলুক চিনের বৃদ্ধি ৬.৫%। অর্থাৎ, ফের ভারতকে টপকে গিয়েছে তারা।

সেই প্রসঙ্গেই এ দিন রাজন বলেছেন, ইতিহাস থেকে শুরু করে সংস্কৃতি— ভারতের ভাঁড়ারে এমন অনেক কিছু রয়েছে, যার কথা সারা দুনিয়া হাঁ করে শুনবে। কিন্তু বৃদ্ধির হার নিয়ে সাফল্যের গল্প পৃথিবীকে শোনাতে গেলে তার আগে টানা এক দশক ৮-১০ শতাংশ বৃদ্ধির হার ধরে রাখতে হবে এই দেশকে।

কথায়-কথায় চিনের সঙ্গে তুলনা টানার যে অভ্যেস, তাকেও এক হাত নিয়েছেন ২০০৮ সালের মন্দার পূর্বাভাস দেওয়া অর্থনীতিবিদ। তাঁর মতে, ভারত যে সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশ, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু সত্যিকারের বড় মাপের অর্থনীতি হয়ে উঠতে হলে, আগে অন্তত ১০ বছর ৮ শতাংশ বা তার বেশি হারে বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে ভারতকে।

তিনি বলেন, ‘‘আমরা মনে করি ভারত বিশাল দেশ। কিন্তু চিনের মাপ তার পাঁচ গুণ।’’ আর এই দুই দেশের মধ্যে এই মুহূর্তে যে কোনও তুলনা চলে না, তা-ও স্পষ্ট করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘চিনের বৃদ্ধি ঢিমে হলে এবং সেই সঙ্গে ভারতীয় অর্থনীতি ১০ বছর দুদ্দাড় গতিতে বাড়লে, তবেই দু’য়ের মধ্যে তুলনা টানার পরিস্থিতি আদৌ তৈরি হবে বলে তাঁর অভিমত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE