রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন।
যে পণ্য বা পরিষেবা এখন কার্যত বিনা পয়সায় হাতের মুঠোয়, তা কি সত্যিই ‘ফ্রি’? নাকি তার দাম মেটাচ্ছে অন্য কেউ?
এখন যা কিছু নামমাত্র দরে, এমনকি অনেক সময়ে বিনা পয়সাতেও পাওয়া যাচ্ছে, তা কি তেমনই থাকবে চিরদিন? নাকি আগামী দিনে একেবারে অন্য ছবি ফুটে উঠবে বাজারে?
সুইৎজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের মঞ্চে এই প্রশ্নই উস্কে দিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে বুথ স্কুলের অর্থনীতির অধ্যাপকের মতে, কোনও কিছুই অনন্ত কাল একেবারে নামমাত্র দামে কিংবা বিনা পয়সায় (ফ্রি) জুগিয়ে যাওয়া অসম্ভব। অথচ এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে কার্যত ফ্রি-তে মেলা পণ্য ও পরিষেবার সংখ্যা যথেষ্ট!
অর্থনীতির তত্ত্ব বলে, কোনও সংস্থা এক সঙ্গে বিপুল পরিমাণে পণ্য উৎপাদন করলে, তার গড় খরচ কমে। অর্থনীতির ভাষায় যা ‘ইকনমিজ অব স্কেল’ হিসেবে পরিচিত। একই যুক্তি খাটে পরিষেবা সংস্থার ক্ষেত্রেও। গুগ্লের উদাহরণ টেনে রাজন বলেন, মূলত এই কৌশলে ভর করেই এখন ক্রেতা বা গ্রাহকদের অনেক সময়ে কার্যত নিখরচায় পণ্য বা পরিষেবা দিতে পারছে বিভিন্ন সংস্থা।
রাজনের প্রশ্ন, কোনও সংস্থা কি গাঁটের কড়ি খরচ করে ক্রেতাকে দিনের পর দিন বিনা পয়সায় পণ্য জোগাবে? জানা জরুরি, যে পণ্য বা পরিষেবাকে আপাত দৃষ্টিতে ‘ফ্রি’ মনে হচ্ছে, আসলে তার দাম মেটাচ্ছেন কে বা কারা? এই ফ্রি-এর টানে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা ভিড় করায় আড়ে-বহরে বাড়ছে বেশ কিছু সংস্থা। কিন্তু রাজনের প্রশ্ন, এই সমস্ত ‘সুপার স্টার’ সংস্থার সঙ্গে অন্য সংস্থাগুলি দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠবে তো?
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, আজকের আবহে রাজনের তোলা প্রশ্নগুলি অসম্ভব তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতেই দেখা যাচ্ছে, মাসুলের গলাকাটা প্রতিযোগিতায় নাভিশ্বাস উঠেছে টেলিকম সংস্থাগুলির। টিকিটের দামের প্রতিযোগিতা সামাল দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে বিমান পরিবহণ শিল্প। বিপুল বিক্রি সত্ত্বেও এখনও টানা লাভের মুখ দেখতে ব্যর্থ অধিকাংশ ই-কমার্স সংস্থাই।
অর্থনীতিবিদরাও বারবার বলছেন, এর ফলে প্রতিযোগিতার ছন্দ কেটে যাচ্ছে বাজারে। যেমন, কোনওখানে হয়তো প্রথমে জলের দরে কোনও পণ্য বেচে ক্রেতাদের টেনে আনা হচ্ছে। কিন্তু তেমনই তা করতে না পেরে ঝাঁপ ফেলতে বাধ্য হচ্ছে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী। সেই সুযোগে দাম বাড়ছে পণ্যের। অনেক সময়ে আবার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কর্মী ছাঁটাইয়ের রাস্তায় হাঁটতেও বাধ্য হচ্ছে সংস্থাগুলি।
রাজন আরও বলেন, চিনের বৃদ্ধি কমায় দক্ষিণ এশিয়ায় পরিকাঠামো উন্নয়নের সুযোগ পাবে ভারত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy