Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
দ্বন্দ্বে ঘি, রণংদেহি কেন্দ্র

উর্জিতের ভবিষ্যৎ ঘিরে জল্পনা, মুখ খুললেন রাহুল

পরিস্থিতি যা, তাতে গভর্নর উর্জিত পটেল আর কত দিন আরবিআইয়ের শীর্ষ পদে থাকবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

উর্জিত পটেল প্রশ্নে মুখ খুললেন রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।

উর্জিত পটেল প্রশ্নে মুখ খুললেন রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ০২:১৪
Share: Save:

মিটমাটের সম্ভাবনা দূর অস্ত্‌। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বনাম নরেন্দ্র মোদী সরকারের লড়াই আরও তেতো হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে অর্থ মন্ত্রকের সূত্র জানাল, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্তে কেন্দ্র মোটেই খুশি নয়। বিশেষত অনাদায়ি ঋণের চাপে দুর্বল ব্যাঙ্কগুলির উপরে তারা যে ভাবে নানা রকম শর্ত আরোপ করেছে, তা নিয়ে। আপত্তি আছে অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ১১টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ঋণ বিলির উপরে বিধিনিষেধ জারি করা নিয়েও। যার জেরে বাজারে নগদের সমস্যা দেখা দিয়েছে।

পরিস্থিতি যা, তাতে গভর্নর উর্জিত পটেল আর কত দিন আরবিআইয়ের শীর্ষ পদে থাকবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। সেপ্টেম্বরে তাঁর তিন বছরের মেয়াদ ফুরোনোর কথা। কিন্তু তাঁর আগেই তিনি পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে এ দিন মুখ খুলেছেন রাহুল গাঁধী। মোদীকে তাঁর কটাক্ষের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্য সম্প্রতি কেন্দ্রকে আক্রমণ করে শীর্ষ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছেন। বলেন, সরকার টি-২০ খেলে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে খেলতে হয় টেস্ট ম্যাচ। তাঁর মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ককে পূর্ণ স্বাধীনতা দিলে তবেই অর্থনীতির স্বাস্থ্য ভাল থাকে। ভোটেও ফায়দা মেলে।

সোমবার বিরলকে কটাক্ষ করে অর্থ মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে ব্যাটিং পিচ জানতে হবে। টি-২০, ওয়ান ডে, টেস্ট ম্যাচ সবই খেলতে হবে। শুধু টেস্ট ম্যাচ খেলতে চাইলে পড়ে থাকতে হবে ষাটের দশকে।’’ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রের অভিযোগ, পরিচালন পর্ষদে অর্থ মন্ত্রকের প্রতিনিধি, এস গুরুমূর্তির মতো নবনিযুক্ত সঙ্ঘ পরিবার-ঘনিষ্ঠ আংশিক সময়ের ডিরেক্টেররা দুর্বল ব্যাঙ্কগুলির উপরে শর্ত শিথিল করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। অনাদায়ি ঋণের কথা না ভেবে ছোট-মাঝারি শিল্পকে দরাজ হাতে ঋণ বিলি করতে বলছেন।

কিন্তু মন্ত্রকের যুক্তি, এটি শীর্ষ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রক হিসেবে আরবিআইয়ের কাজে মোদী সরকার নাক গলাচ্ছে না। মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘তা বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দায়হীন হতে পারে না। সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে কথা না বলেও থাকতে পারে না। রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে আলোচনা করতে হবে। নতুন ভাবনা শুনতে হবে।’’ তাঁর যুক্তি, বিরল যা বলেছেন, তাকে উর্জিতের বার্তা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কিন্তু বিরলের মন্তব্য নীতি নির্ধারক মহলে কোনও ভাবেই সমাদৃত হয়নি।

অর্থ মন্ত্রকের অভিযোগ, ২০১৭-র এপ্রিলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অনাদায়ি ঋণের চাপে দুর্বল ব্যাঙ্কগুলির জন্য বিধিনিষেধ আরও কড়া করে। কিন্তু তা নিয়ে আলোচনা করেনি। খুব কম সময়ের মধ্যে ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ খেলাপি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে দেউলিয়া প্রক্রিয়া চালু করার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ নিয়েও অর্থ মন্ত্রক অখুশি।

সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোর্ডের বৈঠকে এ নিয়ে কথা হয়। সেখানে আর্থিক বিষয়ক সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ ও ব্যাঙ্ক সচিব রাজীব কুমার হাজির ছিলেন। সরকারের যুক্তি, অর্থ মন্ত্রক উদ্বেগ জানানো মানে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়। বিবাদ নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, শীর্ষ ব্যাঙ্ককে খাটো করাটা বিপর্যয়ের রাস্তা তৈরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE