Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কোন বয়সে কী রকম ভাবে টাকা জমানো উচিত

বয়স বাড়ে। দায়িত্ব বদলায়। পাল্টায় লক্ষ্য। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবনের প্রতিটি বাঁকে বদলে যেতে থাকে সঞ্চয়ের কৌশলও। তা স্বাভাবিক। কিন্তু জমানোর খিদে যেন একই রকম থাকে। সঞ্চয়ের প্রদীপ জীবনভর জ্বালিয়ে রাখার পরামর্শ দিলেন শৈবাল বিশ্বাসবয়স বাড়ে। দায়িত্ব বদলায়। পাল্টায় লক্ষ্য। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবনের প্রতিটি বাঁকে বদলে যেতে থাকে সঞ্চয়ের কৌশলও। তা স্বাভাবিক। কিন্তু জমানোর খিদে যেন একই রকম থাকে।

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:৩৫
Share: Save:

পুরনো ছবি ঘাঁটেন মাঝেমধ্যে? ঘাঁটলে দেখবেন, অতীতের মুহূর্তগুলোকে কেমন ছুঁয়ে যাচ্ছেন অনায়াসে। ইচ্ছেগুলোকেও। অথচ সময়ের বদলটা স্পষ্ট ধরা পড়ছে চেহারায়, ভঙ্গিতে। যে বদল আসে বাড়তে থাকা বয়সের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। পরিণত হওয়া বোধ, বেড়ে যাওয়া দায়িত্ব, পরিবর্তিত চাহিদা ও নতুন লক্ষ্যের হাত ধরে। আর চাহিদা, লক্ষ্য, দায়িত্ব বদলালে সঞ্চয়ের কৌশল বদলাতেই হবে। কারণ, ১৮ বছর বয়সে গিটার কেনার জন্য যে ভাবে টাকা জমিয়েছেন, ৩৭ বছরে পা দিয়ে গাড়ি-বাড়ি কেনার লক্ষ্য পূরণে সেই একই পন্থা খাটবে কি?

মোদ্দা কথা হল লগ্নির লক্ষ্য বদলানো উচিত বয়স মেপে। সঞ্চয়ের ধরনও। শুধু দেখতে হবে সঞ্চয়ের খিদেতে যেন দাঁড়ি না পড়ে। না হলে জীবনের অপরিহার্য মোড়গুলিতে পা রেখে দেখবেন যতটা তহবিল হয়তো গড়ে তোলা যেত, ততটা হল না। চলুন আজ কথা বলি তা নিয়েই। জেনে নিই কোন বয়সে লগ্নির ঠিকানা কী কী হতে পারে।

হাঁটি হাঁটি পা পা

যাঁদের হাত ধরে হাঁটতে শেখা, সেই মা-বাবাই লগ্নির দুনিয়ায় প্রথম পা ফেলার সবচেয়ে ভাল শিক্ষক। সেই শিক্ষা শুরুর বয়স হতে পারে ১০ বছর বা তার আগেও। সঞ্চয়ের অভ্যাস তখন চারা গাছের মতো। তাকে রোদ, জল, হাওয়ায় রেখে ডালপালা মেলতে দিতে হয়। এ জন্য—

• খুলে দিন সেভিংস অ্যাকাউন্ট।

• উৎসাহ দিতে হবে জন্মদিন, নববর্ষে পাওয়া টাকা জমানোয়।

• টাকা বাঁচিয়ে ছোটখাটো তহবিল গড়ে তোলার মজাটাও শিখিয়ে দেওয়া যায়। সেই টাকায় যখন মা, বাবা, দাদু, দিদাদের জন্মদিনে ছোট ছোট উপহার দোকানে গিয়ে নিজে পছন্দ করে কিনবে, তখন উৎসাহ বাড়বে আরও বহু গুণ।

• বাচ্চাদের ডেবিট কার্ড ব্যবহারের দরকার পড়ে না। তবে হিসেব কষে খরচের পথ দেখাতে সেটা শিখিয়ে রাখাই যায়। এখন অনেক ব্যাঙ্কে ছোটদের অ্যাকাউন্টে কার্ড ব্যবহারের সুবিধাও মেলে।

• অনেকেই ছোটদের হাতে টাকা-পয়সা দেওয়া পছন্দ করেন না। যদিও অপচয় ও সঞ্চয়ের মধ্যে ফারাক চেনার ভিতটা এই বয়সেই তৈরি হয়ে গেলে পরে কাজে লাগে। সেটা ছোট একটা পিগি ব্যাঙ্কে খুচরো ফেলা দিয়েও শুরু হতে পারে।

লগ্নি যখন তরুণ

(১৮-২৫)

১৮ বছর ‘আইনত বড়’ হওয়ার ছাড়পত্র। স্কুলের বাঁধাধরা জীবনের গণ্ডি পেরিয়ে তখন কলেজ, বন্ধুবান্ধবের হাতছানি। আচমকা ক্লাসে ডুব মেরে সিনেমা-থিয়েটার-আড্ডার অনাবিল আকর্ষণ। বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খাওয়া হোক বা বেড়াতে যাওয়া, ইচ্ছে পূরণেই যেন জীবনের স্বার্থকতা। খরচের কথা কে ভাবে তখন! কিন্তু সেই জোয়ারে পুরোপুরি ভেসে গেলে, প্রাথমিক ধাক্কাটা আসে পরে। চাকরির জগতে পা রেখে। সঞ্চয়ের অভ্যাস তো তৈরি হয়ই না। বরং রোজগারের টাকা খুশি মতো খরচের ঝোঁক তৈরি হয়। দায়িত্ব নেওয়া থেকে শুরু করে টাকা জমানো, সব কিছুকেই যেন গোলকধাঁধা আর একঘেয়ে লাগে। তাই আমার মতে—

• লগ্নির প্রথম পাঠ শুরু হওয়া উচিত এই সময়। পড়াশোনার বাইরে চলুক আর্থিক শৃঙ্খলার শিক্ষাও। যা পরবর্তী জীবনের ভিত গড়ে দেয়। আমি বলি এই বয়সটা হল লগ্নির ছোটবেলা। কোথায় কী ভাবে সঞ্চয় করা যায়, তার অ-আ-ক-খ শেখার বয়স।

• যেহেতু পড়াশোনাই প্রধান লক্ষ্য হয় এবং সাধারণ ভাবে নিয়মিত আয়ের উৎসও তেমন থাকে না, ফলে হঠাৎ পাওয়া টাকা জমাতে হবে।

• অভ্যাস করতে হবে হাতখরচ, জন্মদিন বা পুজোয় অনুষ্ঠানে হাতে আসা নগদ উপহার সেভিংসে রাখার।

• সেগুলি কী ভাবে কোথায় লগ্নি করলে তহবিল কিছুটা বাড়বে, সেটাও জেনে রাখা উচিত।

প্রকল্প কী কী

এই বয়সে লগ্নিকে খুব বেশি ছড়াতে বলব না। বরং ভাল লিকুইড ফান্ড বাছতে পারেন। যেখানে মাঝে মাঝে থোক টাকা রাখা যাবে। আর ঝুঁকি না নিতে চাইলে রয়েছে স্থায়ী আমানত।

চাকরি শুরু

(২৫-৩০)

আজকাল অনেকেই ২৫ বছরে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যান। অনেকের ক্ষেত্রে বেতন নজরকাড়াও হতে পারে। তবে সেটা হোক বা না হোক, বাজে খরচে রাশ টানা সবচেয়ে বেশি জরুরি এই সময়েই। কারণ তেমন দায়-দায়িত্ব নিতে না হলে, ইচ্ছে মতো খরচের জোয়ারে গা ভাসাতে দু’বার ভাবেন না কেউ। ফলে লগ্নি পরিকল্পনায় ভাটা দিলে চলবে না। যে অভ্যেস তৈরির কথা আগে বলেছি, সেটাকেই এ বার স্নান-খাওয়ার মতো রোজকার জীবনের নিয়মে বেঁধে ফেলতে হবে।

প্রকল্প কী কী

• নিয়মিত আয় থাকে বলে এমন প্রকল্পের কথা ভাবতে হবে যেখানে প্রতি মাসে টাকা রাখতে হয়। যেমন, মিউচুয়াল ফান্ড বা রেকারিং ডিপোজিট। এ ছাড়াও সাধারণত দায়িত্ব কম ও ঝুঁকি বইবার ক্ষমতা বেশি থাকায় টাকা রাখা যেতে পারে সরাসরি শেয়ারেও। তবে এই বয়সে চটজলদি মোটা রিটার্ন পাওয়ার নেশা কাজ করে অনেকের মধ্যে। কিন্তু আজ লগ্নি, কাল মুনাফা— এই ভাবনা ডোবাতে পারে। বরং লম্বা মেয়াদে লগ্নির জন্য তৈরি হোন এখন থেকেই।

• আগামী দিনে বিয়ে, বাড়ি-গাড়ি কেনার পরিকল্পনা থাকলে টাকা রাখতে হবে লিকুইড ফান্ড বা স্থায়ী আমানতে। যেখান থেকে টাকা ভাঙানোর সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া বছরে এক বার বেড়াতে যেতে সাহায্য নেওয়া যায় রেকারিং ডিপোজিটের।

• অবসরের পরিকল্পনাও শুরু করে ফেলতে হবে এই বয়সেই। সে জন্য মিউচুয়াল ফান্ডে যেমন টাকা রাখতে হবে, তেমনই অফিসের পিএফের বাইরে খুলতে হবে পিপিএফ কিংবা এনপিএসের অ্যাকাউন্ট।

• বাবা-মায়ের স্বাস্থ্য বিমার আওতায় সন্তান থাকতে পারেন ২৫ বছর পর্যন্ত। তাই চাকরি পাওয়ার পরে প্রথমেই নিজের স্বাস্থ্য বিমা করতে হবে। নিতে হবে ক্রিটিক্যাল ইলনেস এবং অ্যাক্সিডেন্ট কভার। দেখতে হবে অঙ্কটা যেন বড় হয়। যত কম বয়সে শুরু, ততই প্রিমিয়াম কম পড়বে।

বিয়ে ও সংসার

(৩০-৩৫)

এই বয়সে শুরু হয় সংসারের পুরোদস্তুর দায়িত্ব নেওয়া। বিয়ে না করলেও মা, বাবা-সহ পরিবারের। করলে তাতে যোগ হন স্বামী বা স্ত্রী ও সন্তান। সে ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই চাকরি করলে ভাল। নইলে একার পক্ষে সংসারের সব খরচ সামলানো ও তার পরে লগ্নির দিশা খুঁজতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা হয়। সেই অনিশ্চয়তা আটকাতেই আগে সঞ্চয়ের অভ্যেস গড়া জরুরি। বিশেষত লক্ষ্য বেঁধে লগ্নি সব থেকে বেশি দরকার। যেমন, অবসর জীবনের তহবিল গড়া, সন্তানের পরিকল্পনা ও তার জন্মের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের টাকা জোগাড়, তার উচ্চশিক্ষা, বিয়ের খরচ সামলানো ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে আগে চাই পরিবারকে জীবন বিমা ও স্বাস্থ্য বিমার সুরক্ষা দেওয়া।

প্রকল্প কী কী

• সংসারের দায়িত্ব হাতে আসার পরে প্রথম কাজ স্ত্রী বা স্বামীকে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনা ও তার অঙ্ক বাড়ানো। সন্তান আসার পরে তাকেও। আজকাল দ্রুত চাকরি বদল নিয়মিত ঘটনা। তাই অফিসের বিমার ভরসায় থাকবেন না। আলাদা বিমা করুন। দেখে নিন যেন ক্যাশলেসের সুবিধা থাকে। সেটা না থাকলে হাসপাতাল ও চিকিৎসার খরচ গুনতে হয় নিজের পকেট থেকে। পরে তারা সেই টাকা ফেরত দেয়। এতে এক দিকে যেমন খরচ প্রচুর। তেমনই টাকা জোগাড়ের জন্য দৌড়দৌড়ি করতে হয়।

• দ্বিতীয় কাজ পরিবারের রোজগেরের জীবন বিমা। যদি স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই চাকরি করেন, তা হলে দু’জনের জন্যই টার্ম পলিসির ব্যবস্থা করতে হবে। আর যদি কোনও এক জন চাকরি করেন, অবশ্যই তাঁর বড় অঙ্কের বিমা থাকতে হবে।

• অন্যান্য লক্ষ্যের জন্য আগের মতো লগ্নি চালান। সেই অঙ্ক কী ভাবে পাল্টাতে হবে, তা বুঝতে নীচের তালিকা দেখুন। তবে ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা অনুসারে তা পাল্টাতে পারে।

সন্তানের জন্ম ও পড়াশোনা

(৩৫-৪৫)

সন্তানের জন্মের পরে দায়িত্ব আরও বাড়ছে। ফলে সেই অনুসারে লগ্নি পাল্টানোর পথে পা বাড়াতে হবে। বয়স বাড়তে থাকায় ঝুঁকির ভাগও নেমে আসবে। উল্টে লগ্নি বাড়বে তুলনায় সুরক্ষিত প্রকল্পগুলিতে।

তা ছাড়া সন্তানের স্বাস্থ্য বিমা, তার উচ্চশিক্ষা ও বিয়ের সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করাই হবে এই সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লগ্নি।

প্রকল্প কী কী

• নিজেদের বিমার মধ্যেই সন্তানকে আনুন ও বিমার অঙ্ক বাড়ান।

• সন্তানের জন্মের পরেই ইকুইটি ফান্ডে একটি এসআইপি করুন তার উচ্চশিক্ষার জন্য। অন্য একটি ফান্ড থাকুক বিয়ের জন্য। এর টাকা যেন অন্য কোথাও খরচ না হয়। তেমনই নিজের অবসরের লগ্নি ভাঙিয়ে এই খাতে ব্যবহার করবেন না।

• স্কুলে ভর্তির জন্য অন্তত তিন বছর সময় পাবেন। সে জন্য ডেট ফান্ডে টাকা রাখতে পারেন। নির্দিষ্ট সময়ের আগে তা ভাঙিয়ে নিতে হবে।

• প্রতি বছর স্কুলের খরচের জোগাড়ে বেশি ঝুঁকি নেওয়া চলবে না। তাই এ জন্য থাকুক রেকারিং ডিপোজিট।

অবসর ও সন্তানের উচ্চশিক্ষা

(৪৫-৫৫)

আগে থেকে ঠিক মতো লগ্নি করা থাকলে সন্তানের উচ্চশিক্ষার টাকা জোগাড় করার জন্য অতটা না ভাবলেও চলবে। বরং এ বার মন দিতে হবে নিজের অবসরের দিকে।

প্রকল্প কী কী

• এত দিন পর্যন্ত যে সমস্ত প্রকল্পে লগ্নি করেছেন, তা খতিয়ে দেখুন। যে প্রকল্প ভাল রিটার্ন দিচ্ছে না, তা বদলানোর কথা ভাবুন।

• ধাপে ধাপে শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড থেকে লগ্নি সরিয়ে আনুন বন্ড বা ঋণপত্র নির্ভর প্রকল্পে। ফান্ডও বাছাই করা হোক ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে।

সন্তানের বিয়ে, নিজের অবসর

(৫৫-৬০)

এই বয়সের লক্ষ্য হবে নিজের অবসরের লগ্নিকে গোছানো। এত দিনে সন্তানও নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সংসারে টাকা দেওয়া শুরু করবে। ফলে আপনার লক্ষ্য হবে অবসর নেওয়ার পরের জীবনের জন্য তৈরি হওয়া। সন্তানের বিয়ের জন্য যে টাকা জমিয়েছেন, তা তুলে সুরক্ষিত প্রকল্পে রাখতে হবে। কোনও নতুন লগ্নি করার পরামর্শ এই সময়ে দেব না।

অবসর জীবন

(৬০-)

এত দিন যা জমিয়েছেন, তার পুরোটা এক জায়গায় এনে নতুন করে লগ্নির ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে অবসরের পরেও নিয়মিত আয় বজায় থাকে।

প্রকল্প কী কী

• পিএফ, পিপিএফ, এনপিএস থেকে যা হাতে আসবে, সেই টাকা প্রথমে একটি সেভিংসে রাখুন।

• মিউচুয়াল ফান্ড, শেয়ারের টাকাও ওই অ্যাকাউন্টে আনুন। জীবন বিমার এনডাওমেন্ট পলিসি থেকে থাকলে, সেই টাকাও এখানে রাখতে হবে।

• এ বার আপনার মোট সঞ্চয়ের অন্তত ২০% টাকা রাখুন লিকুইড ফান্ডে। এটা ঠিক যে এই সময়ে ফান্ডে অনেকেই টাকা রাখতে চান না ঝুঁকির কথা ভেবে। তবে আমি বলব এই ফান্ড তুলনায় কম ঝুঁকির এবং এতে হাতে টাকা আসে চটজলদি। অথচ রিটার্ন মেলে স্থায়ী আমানতের তুলনায় কিছুটা হলেও বেশি। ফলে হঠাৎ প্রয়োজন হলে লিকুইড ফান্ড থেকে টাকা তুলে নিতে পারবেন।

• বাদবাকি টাকার মধ্যে ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্পে সর্বোচ্চ যতটা সম্ভব লগ্নি করা যাবে, ততটাই সেখানে রাখুন।

• সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিমেও থাকুক সর্বোচ্চ অঙ্ক।

• বাদবাকিটা লগ্নি হোক অ্যানুইটি প্রকল্পে। সেখান থেকে নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা হবে।

• যদি পেনশন থাকে, সেই টাকা সংসার খরচে কাজে লাগাতে পারবেন। তার সঙ্গেই বেড়াতে যাওয়া, হঠাৎ প্রয়োজনের খরচ, উপহারের ব্যবস্থাও করতে হবে সেখান থেকে।

• যদি অবসরের পরেও ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছে বা ক্ষমতা থাকে, একমাত্র তবেই শেয়ার বা ইকুইটি ফান্ডে এসআইপির কথা ভাবুন। এতে মূল্যবৃদ্ধিকে সামাল দেওয়া যাবে।

হঠাৎ আসা টাকা

বোনাস বা উৎসাহ ভাতা থেকে হাতে আসা টাকাই হোক অথবা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত অর্থ। হাতে বাড়তি কিছু এলে আনন্দ আমাদের সকলেরই হয়। এটা ঠিক আগে থেকে পরিকল্পনাও করা যায় না। কিন্তু প্রথমেই যে থোক টাকা জমানোর অভ্যেসের কথা বলেছি তা যদি বজায় রাখা যায়, তা হলে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তা-ও এখানে প্রকল্পগুলি নিয়ে চলুন এক বার কথা বলে নিই।

প্রকল্প কী কী

• কম ঝুঁকি চাইলে রয়েছে স্থায়ী আমানত।

• বেশি ঝুঁকি নিতে চাইলে প্রথমে সেই অর্থ লিকুইড ফান্ডে রাখুন। তার পরে সিস্টেমেটিক ট্রান্সফার প্ল্যান (এসটিপি) পদ্ধতিতে সেই টাকা প্রতি মাসে ইকুইটি ফান্ডে লগ্নি করুন।

সম্পদের হাতবদল

নিজের পরে কষ্টের সঞ্চয়ের জন্য সন্তানের মধ্যে যাতে বিবাদ তৈরি না হয়, তার ব্যবস্থা করে রাখাও লগ্নি পরিকল্পনার অন্যতম অঙ্গ। চাইলে এ জন্য ৫০ বছর হলেই উইল তৈরি করতে পারেন। অথবা অপেক্ষা করতে পারেন অবসর পর্যন্ত। এ জন্য—

• উকিলের সঙ্গে কথা বলুন। কী ভাবে উইল তৈরি করতে হয়, তার খুঁটিনাটি জানুন। সেই অনুসারে সম্পত্তি ভাগের ব্যবস্থা করুন।

• উইল করবেন না দানপত্র, তা স্থির করুন। মনে রাখবেন, উইল কার্যকর হয় যিনি করছেন, তাঁর মৃত্যুর পরে। কিন্তু দানপত্র রেজিস্ট্রি হওয়ার পরেই কার্যকর বলে ধরা হয়। এখনকার দিনে অনেক সময়েই টিভিতে, কাগজে চোখে পড়ে সন্তান বা উত্তরাধিকারীরা দেখছেন না। ফলে আইনের আশ্রয় নিতেও বাধ্য হন অনেক প্রবীণ। ফলে সন্তান বা উত্তরাধিকারীর উপর যদি আপনার ভরসা থাকে, তা হলেই দানপত্র করুন।

• নিজের লগ্নি সম্পর্কে স্ত্রী, সন্তান বা উত্তরাধিকারীদের স্পষ্ট জানান যাতে প্রত্যেকেরই এ বিষয়ে ধারণা থাকে। পরবর্তীকালে সম্পত্তি নিয়ে আদালতে যেতে না হয়, সেই বিষয়টি খেয়াল রাখাই এর লক্ষ্য। এমনকি, স্ত্রী বা স্বামীও যেন আগে থেকে জানেন তাঁর অধিকার কতটুকু।

• সম্পত্তি হাতে পেলে সন্তান বা উত্তরাধিকারীর উপরে করের কী ধরনের দায় বর্তাবে, তা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বসে কথা বলে জেনে নিন।

শেষ পাত

এক ওষুধে সব রোগ সারবে, এমনটা আশা করা অন্যায়। কিন্তু ধারণার জায়গাটা পোক্ত থাকলে, তাকে প্রয়োজন ও বাধ্যবাধকতা অনুসারে সাজিয়ে-গুছিয়ে নেওয়া যায়।

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Savings Age Balance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE