নেমেই চলেছে শেয়ার বাজার।
ঘরে-বাইরে নাগাড়ে চলছে সমস্যার মিছিল। আর তার জেরে নেমেই চলেছে শেয়ার বাজার। মাঝে-মধ্যে কোনও দিন হয়তো বাজার শুরুতে কিছুটা এগোচ্ছে। কিন্তু তলিয়ে যাচ্ছে ফের। এ ভাবে গত সপ্তাহের পাঁচ দিনে সেনসেক্স খুইয়েছে প্রায় ১,০০০ পয়েন্ট। নেমেছে ৩৪ হাজারের নীচে, ৩৩,৩৪৯ অঙ্কে। যা সাত মাসের সর্বনিম্ন। আশঙ্কা, এমন পতন জারি থাকলে চলতি সপ্তাহে তা নামতে পারে ৩৩ হাজারেরও নীচে।
অর্থাৎ বাজার একেবারে তলানিতে পৌঁছেছে, সেটা এখনও বলা যাচ্ছে না। ২০১৮ সালে সূচক যতটা উঠেছিল, তার পুরোটাই এক মাসে উধাও। ন্যাভ কমেছে প্রায় প্রত্যেক ইকুইটি ফান্ডের (শেয়ার নির্ভর ফান্ড)। টানা পতনে নিফ্টিও ১০ হাজারের কাছে (১০,০৩০)। সেনসেক্স ৩৩ হাজার ভেঙে আরও নীচে গড়ালে, সেটিও চলে যাবে ১০ হাজারের তলায়। সব থেকে চিন্তার কথা, এই ভাঙন রোধ করা যায় এমন কোনও শক্তি চরম আশাবাদীরাও দেখতে পাচ্ছেন না।
পতনের কারণ অনেক (সঙ্গের সারণিতে বলা হল)। সেখানে মার্কিন-চিন শুল্ক যুদ্ধের জের থেকে শুরু করে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের জোগান কমা ও দাম বাড়ার আশঙ্কা, দেশের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ, ভোটের মুখে রাজনৈতিক অস্থিরতা, আগামী লোকসভায় কেন্দ্রে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠ সরকারের ক্ষমতায় আসা নিয়ে উদ্বেগ— সব কিছুই রয়েছে।
পতন বহাল এখনও
• গত শুক্রবার আরও ৩৪০.৭৮ পয়েন্ট পড়েছে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক সেনসেক্স। ৯৪.৯০ অঙ্ক নেমেছে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নিফ্টি।
• সপ্তাহ শেষে দুই সূচক দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৩৩,৩৪৯.৩১ ও ১০,০৩০ পয়েন্টে।
• পুরো সপ্তাহে নিট হিসেবে সেনসেক্সের মোট পতন ৯৬৬.৩২ পয়েন্ট। নিফ্টির ২৭৩.৫৫ অঙ্ক।
• ওই পাঁচ দিনে দেশের সব থেকে মূল্যবান ১০টি সংস্থার মধ্যে ৮টির প্রায় ১.৩৫ লক্ষ কোটি টাকার শেয়ার মূলধন মুছে গিয়েছে।
• অক্টোবরে (শুক্রবার পর্যন্ত) ভারতের মূলধনী বাজার থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার লগ্নি তুলে নিয়েছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। যেখানে সেপ্টেম্বরে ওই অঙ্ক ছিল ২১ হাজার কোটি।
• বেশ কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থাগুলি।। ন্যাভ অনেকখানি কমে গিয়েছে বিভিন্ন ইকুইটি ফান্ডে বা শেয়ার নির্ভর ফান্ডের।
কারণ যখন বিশ্ব বাজার
• উত্তাপ কমার লক্ষণ নেই আমেরিকা-চিনের শুল্ক যুদ্ধের।
• মূলত শুল্ক যুদ্ধের ধাক্কাতেই চিনের ত্রৈমাসিক বৃদ্ধি তলানি ছুঁয়েছে। যা দেখে এই বিশ্বায়নের যুগে প্রমাদ গুনছে ভারত-সহ সব দেশের লগ্নিকারীরাই।
• আগামী ৪ নভেম্বর থেকে ইরানের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার কথা। ফলে তেল আমদানি নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ।
• অন্যতম তেল রফতানিকারী দেশ সৌদি আরবের উৎপাদন বৃদ্ধির আশ্বাসে মাঝে অশোধিত তেলের দাম একটু কমলেও, এত অল্প বাড়তি জোগানে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা থাকছেই।
• মার্কিন মুলুকে সুদ বাড়ায় বিদেশি লগ্নিকারীরা নাগাড়ে শেয়ার বেচে বেরিয়ে যাচ্ছে।
উদ্বেগ দেশের অন্দরেও
• ডলারে টাকার দামের এখনও খাদে থাকা। শুক্রবারও মার্কিন মুদ্রাটির দর বেড়েছে ২০ পয়সা।
• বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপরে নিষেধাজ্ঞার কারণে সংস্থার পুঁজিতে টান। কঠিন হচ্ছে বিভিন্ন প্রকল্প েষ করা।
• নগদ টান মূলধনী বাজারেও।
• আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি।
• রফতানি কমে যাওয়া।
• দেশের বহু জায়গায় বর্ষায় ঘাটতি।
• সামনেই পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে লোকসভা নির্বাচনও। তা না মেটা পর্যন্ত বাজারে অস্থিরতা। সঙ্গে অনিশ্চয়তাও।
• দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে কিছু বড় সংস্থার হতাশজনক ফলাফল।
• সিবিআই নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ
এত সব সমস্যা রাতারাতি মেটার নয়। ফলে বাজারের দুর্বলতা যে বহাল থাকবে, তা ধরে নেওয়া যায়। এই পরিস্থিতিতে আশার কথা একটিই। এবং তা হল মিউচুয়াল ফান্ডের পথ বেয়ে লগ্নি জারি থাকা। এটা না হলে, সূচক হয়তো আরও তলিয়ে যেত। সেপ্টেম্বরে এসআইপির পথে ফান্ডের বিনিয়োগ এসেছে ৭,৭২৭ কোটি টাকার। যা আগের বছর একই মাসের তুলনায় ৪০% বেশি। এই তথ্য বলছে, লগ্নিকারীদের একাংশের আস্থা এখনও অটুট বাজারের উপর। অর্থাৎ তাঁদের আশা, লম্বা মেয়াদে সূচক ফের পুরনো উচ্চতায় ফিরবে।
এই অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের ফল প্রকাশ শুরু হয়েছে পুরোদমে। প্রথম দিকে বেশ কিছু ভাল ফল দেখা গিয়েছে। কিন্তু গত সপ্তাহে হতাশ করেছে বহু সংস্থাই। এর মধ্যে আছে মারুতি সুজুকি, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, এয়ারটেল, ইয়েস ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই প্রু লাইফ, এশিয়ান পেন্টস ইত্যাদি। ফলাফলের মরসুম চলবে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত। সূচক কিছুটা আন্দোলিত হবে এর জেরে। বাজার আরও নামলে কম দামে ভাল শেয়ার কেনার সুযোগ খুলবে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy