Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
শেষ পাকে মুখ ফেরাচ্ছে বিদেশি লগ্নি

বাজারের ভরসা দেশের ফান্ডই

বিশেষজ্ঞদের মতে, তা সত্ত্বেও বাজার রেকর্ড উচ্চতায় দেশীয় আর্থিক সংস্থার লগ্নির কারণে। সূচককে চাঙ্গা রেখেছে বিশেষত মিউচুয়াল ফান্ডগুলি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৮ ০২:৫৯
Share: Save:

দরজায় কড়া নাড়ছে লোকসভা ভোট। চলতি মেয়াদে মোদী সরকার দৌড়ের শেষ ল্যাপে। কিন্তু সেই সময়েই শেয়ার বাজার থেকে যেন কর্পূরের মতো আস্থা উবে যাচ্ছে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির। অথচ মোদী জমানার প্রথম তিন বছরে ভারতে প্রায় নাগাড়ে টাকা ঢেলেছে তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, তা সত্ত্বেও বাজার রেকর্ড উচ্চতায় দেশীয় আর্থিক সংস্থার লগ্নির কারণে। সূচককে চাঙ্গা রেখেছে বিশেষত মিউচুয়াল ফান্ডগুলি।

নোটবন্দিতে নগদে টান পড়েছে। জিএসটি চালুর পরে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে তাড়াহুড়োর। বৃদ্ধির হারকে সম্ভাবনার কাছাকাছি নিয়ে যেতে না পারার কারণেও গত চার বছরে মোদী সরকারের সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। কিন্তু এই সমস্ত কিছুর মধ্যেও এই জমানায় বাজার মোটের উপর চাঙ্গাই থেকেছে। মাঝেমধ্যে পতন যে হয়নি তা নয়, কিন্তু তার রেশ কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে বিশেষ দেরি হয়নি বাজারের। অনেকের মতে, বিদেশি আর্থিক সংস্থার লগ্নি ছিল তার অন্যতম কারণ।

কিন্তু স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ জানান, ২০১৮ সালের প্রথম ছ’মাসে ভারতে সংস্থাগুলির শেয়ার কেনার থেকে বিক্রি ৩৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। যেখানে ২০১৭ সালের প্রথমার্ধে কেনা ৫৫ হাজার কোটির বেশি ছিল।

মোহভঙ্গ

• মোদী সরকারের প্রথম তিন-সাড়ে তিন বছরে বিদেশি আর্থিক সংস্থার লগ্নির জোয়ার ছিল শেয়ার বাজারে। এখন সেখানে ভাটার টান।

• ২০১৮ সালের প্রথম ছ’মাসে ভারতের বাজারে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি শেয়ার কিনেছে ৭.১৬ লক্ষ কোটি টাকার। সেখানে বেচেছে ৭.৫৩ লক্ষ কোটির। অর্থাৎ, নিট বিক্রি প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা।

• ২০১৭ সালের প্রথম ছ’মাসেও নিট ৫৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার কিনেছিল তারা।

এমন কেন?

• মুখ তুলছে মার্কিন অর্থনীতি। সুদ বাড়িয়েছে সে দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ। লগ্নির বড় অংশ পাড়ি দিচ্ছে সেখানে।

•সংস্কারের বদলে অনেক বেশি করে জনমোহিনী নীতির দিকে ঝুঁকছে মোদী সরকার। তা হতাশ করেছে লগ্নিকারীদের।

• দানা বাঁধছে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পরে নড়বড়ে জোট সরকারের ভয়ও।

• বিস্তর প্রচার সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতির ভিত এখনও যথেষ্ট পোক্ত নয়। বৃদ্ধি ৮ শতাংশের থেকে দূরে। চোখরাঙানি ঘাটতি মাত্রাছাড়া হওয়ারও।

• ঘাটতির আশঙ্কা আরও বাড়াচ্ছে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের চড়া দাম। উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ডলারের বেলাগাম দর বৃদ্ধিও।

• বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার দর যতটা ফুলেফেঁপে উঠেছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের আয় বা মুনাফা বাড়েনি। ফলে সেখানে এখনই আর টাকা ঢালতে নারাজ অনেকে।

বিপদে বন্ধু

• বাজার তবু রেকর্ড উচ্চতায় দেশীয় আর্থিক সংস্থার বিনিয়োগের দৌলতে।

• এ বছরের প্রথম ছ’মাসে নিট ৬৭ হাজার কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে তারা। মোট ঢেলেছে ৫.২২ লক্ষ কোটি।

•এই সময়ে শুধু মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নিই আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ৪৩%।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ মানুষের মতো শেয়ার বাজারেও লগ্নিকারীদের মনে বিপুল প্রত্যাশা জাগিয়ে এসেছিলেন মোদী। বাজার ভেবেছিল, সংস্কারের ঝোড়ো ইনিংস খেলবেন তিনি। পিছপা হবেন না তেতো দাওয়াই প্রয়োগে। কিন্তু তার বদলে ভোট ভেবে তিনি জনমোহিনী নীতি আঁকড়ে ধরায় হতাশ বাজার।

আশা মেটেনি অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগারও। উপদেষ্টা সংস্থা মর্নিং স্টারের ডিরেক্টর ধবল কাপাডিয়া বলেন, ‘‘অর্থনীতির উন্নতির আশায় বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি তিন বছর টানা টাকা ঢেলেছে। তাতে শেয়ারের দাম বেড়েছে। কিন্তু অর্থনীতি ঘুরে না দাঁড়ানোয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির আয় বা মুনাফা সে ভাবে বাড়েনি। যা লগ্নিকারীদের অপছন্দ।’’

ফেডারেল রিজার্ভ সুদ বাড়ানোয় আমেরিকায় আমানত ও ঋণপত্রে লগ্নি আগের থেকে লাভজনক হয়েছে। তার উপর ঝুঁকিও কম। লগ্নির বড় অংশ পাড়ি দিচ্ছে সেখানে। উপদেষ্টা সংস্থা ভ্যালু রিসার্চের চিফ এগ্‌জ়িকিউটিভ ধীরেন্দ্র কুমারের আবার ধারণা, লগ্নি তুলে নিয়ে যাওয়াতে ইন্ধন জুগিয়েছে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের চড়া দর। কারণ, তাতে মূল্যবৃদ্ধি ও বাণিজ্য ঘাটতি মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কা।

এই অবস্থায় বাজারকে চাঙ্গা রেখেছে দেশের আর্থিক সংস্থা। বিশেষত মিউচুয়াল ফান্ড। একে দেশে টাকা না ঢেলে তাদের উপায় নেই। তার উপর ইপিএফ থেকেও লগ্নি বেড়েছে শেয়ার বাজারে।

আইডিএফসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সিইও বিশাল কপূরের আশা, ভোটের অনিশ্চয়তা মিটলে ফের এখানে পুরোদমে ফিরবে অধিকাংশ বিদেশি সংস্থার লগ্নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Share Market Sensex Mutual Fund
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE